ضبط ক্রিয়াবিশেষ্য, আভিধানিক অর্থ নিয়ন্ত্রণ। এ থেকে যিনি শায়খ থেকে হাদিস শ্রবণ করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন, তাকে ضابط বলা হয়। ‘দ্বাবিত’ কর্তাবাচক বিশেষ্য, অর্থ সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকারী।
দ্বাবত এর পারিভাষিক অর্থ: শায়খ থেকে শ্রবণ করা হাদিস হ্রাস, বৃদ্ধি ও বিকৃতি ব্যতীত অপরের নিকট পৌঁছে দেওয়াই দ্বাবত।
দ্বাবত দুই অবস্থায় থাকা জরুরি: শ্রবণ করার সময় ও বর্ণনা করার সময়। শ্রবণ করার সময় দ্বাবত যেমন, শায়খের হাদিস মনোযোগসহ শ্রবণ করা ও তার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ যথাযথ সংরক্ষণ করা। এ প্রকার দ্বাবতকে ضبط عند التحمل বলা হয়, অর্থাৎ হাদিস গ্রহণ করার সময় দ্বাবত। বর্ণনা করার সময় দ্বাবত যেমন, শায়খ থেকে শ্রবণকৃত হাদিস রাবির নিকট কোনো প্রকার হ্রাস, বৃদ্ধি ও বিকৃতি ব্যতীত বর্ণনা করা, ভুল হলেও কম। এ প্রকার দ্বাবতকে ضبط عند الأداء বলা হয়, তথা বর্ণনা করার সময় দ্বাবত। এ দুই অবস্থায় দ্বাবত সম্পন্ন রাবিকে দ্বাবিত বলা হয়।
অতএব শায়খের দরসে উদাসীন থাকা রাবি, কিংবা বর্ণনা করার সময় অধিক ভুলকারী রাবি দ্বাবিত নয়, তাই তাদের হাদিস সহি নয়। দ্বাবিত রাবির কখনো ভুল হবে না জরুরি নয়, কারণ এরূপ শর্তারোপ করা হলে এক দশমাংশ সহি হাদিস গ্রহণ করাও মুশকিল হবে।
দ্বাবত দু’প্রকার: স্মৃতি শক্তির দ্বাবত ও খাতায় লিখে দ্বাবত। সাহাবি ও প্রথম যুগের তাবে‘ঈগণ স্মৃতি শক্তির উপর নির্ভর করতেন, পরবর্তীতে লেখার ব্যাপক প্রচলন হয়। তখন থেকে স্মৃতি শক্তি অপেক্ষা লেখার উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়, তবে লিখিত পাণ্ডুলিপি নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করা জরুরি। লিখে রাখার ফলে ভুল ও বিকৃতি থেকে নিষ্কৃতি মিলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ٱلَّذِي عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ ٤ ﴾ [العلق: ١، ٤]
“পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন”।[1]
আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে প্রথম বলেছেন পড়, অতঃপর বলেছেন: “যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন”। অর্থাৎ তোমরা স্মৃতি শক্তি থেকে পড়, যদি স্মৃতি শক্তিতে না থাকে, তাহলে তোমার লিখনি থেকে পড়।[2]
এ আলোচনা থেকে আমরা ‘দ্বাবত’ ও ‘দ্বাবিত’ দু’টি শব্দ জানলাম। দ্বাবত অর্থ সংরক্ষণ করা; আর যিনি সংরক্ষণ করেন তাকে বলা হয় দ্বাবিত, অর্থাৎ সংরক্ষণকারী। দ্বাবত ও দ্বাবিত শব্দ দু’টি আমরা অধিকহারে প্রয়োগ করব, তাই পাঠককুল খুব স্মরণ রাখুন।
[2] শারহুল মানযুমাহ, লি ইবন উসাইমিন রহ.