সাহাবিগণ ও মুনাফিকরা একসঙ্গে বাস করত, সে সুযোগে হয়তো কোনো মুনাফিক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করেছে, আর মানুষেরা তাদের বাহ্যিক সাথীত্ব দেখে সেগুলো গ্রহণ করেছে, এ জাতীয় সন্দেহ হতে পারে। কারণ, মুনাফিকরা মিথ্যা বলেছে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:
﴿إِذَا جَآءَكَ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ قَالُواْ نَشۡهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُۥ وَٱللَّهُ يَشۡهَدُ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ لَكَٰذِبُونَ ١﴾ [المنافقون: ١]
“যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তুমি তার রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী”।[1] অতএব তাদের মিথ্যা প্রচার করার বাস্তবতা কতটুকু?
কয়েকটি কারণে তারা এরূপ করতে পারেনি:
১. মুনাফিকরা দীনের প্রচার থেকে বিমুখ ছিল। কতক মুনাফিক কুরআন শ্রবণ করত, কিন্তু কুরআনের কোনো অংশ তাদের অন্তরে প্রবেশ করত না, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمِنۡهُم مَّن يَسۡتَمِعُ إِلَيۡكَ حَتَّىٰٓ إِذَا خَرَجُواْ مِنۡ عِندِكَ قَالُواْ لِلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ مَاذَا قَالَ ءَانِفًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ طَبَعَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ وَٱتَّبَعُوٓاْ أَهۡوَآءَهُمۡ ١٦﴾ [محمد : ١٦]
“আর তাদের মধ্যে এমন কতক রয়েছে, যারা তোমার প্রতি মনোযোগ দিয়ে শুনে। অবশেষে যখন তারা তোমার কাছ থেকে বের হয়ে যায় তখন তারা যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এই মাত্র সে কী বলল?’ এরাই তারা, যাদের অন্তরসমূহে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে”।[2] তারা যেহেতু ভাল করে শ্রবণ করেনি, তাই তাদের পক্ষে দীন বিকৃত করা সম্ভব হয়নি।
২. মুসলিমরা কোনো বিষয়ে মুনাফিকদের শরণাপন্ন হত না, কারণ কুরআনে বর্ণিত তাদের স্বভাব ও নিদর্শনের কারণে তারা চিহ্নিত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলে:
﴿ وَلَتَعۡرِفَنَّهُمۡ فِي لَحۡنِ ٱلۡقَوۡلِۚ ٣٠ ﴾ [محمد : ٣٠]
“তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদের চিনতে পারবে”।[3] অতএব তারা চিহ্নিত ছিল, যার নিফাক স্পষ্ট ছিল না সেও সন্দেহের পাত্র ছিল। ইমাম বুখারি বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করতে পেরে কা‘ব ইব্ন মালিক আফসোস করে বলেন:
«فَكُنْتُ إِذَا خَرَجْتُ فِي النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَطُفْتُ فِيهِمْ أَحْزَنَنِي أَنِّي لَا أَرَى إِلَّا رَجُلًا مَغْمُوصًا عَلَيْهِ النِّفَاقُ، أَوْ رَجُلًا مِمَّنْ عَذَرَ اللَّهُ مِنْ الضُّعَفَاءِ».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রস্থানের পর আমি যখন মানুষের নিকট যেতাম ও তাদের মাঝে ঘুরতাম, আমাকে খুব দুঃখিত করত, কারণ আমি শুধু তাদেরকে দেখতাম যারা নেফাকের দোষে দুষ্ট ছিল, অথবা এমন কাউকে দেখতাম যাদেরকে আল্লাহ অক্ষমতার কারণে ছাড় দিয়েছেন”।[4]
এ থেকে প্রমাণিত হল যে, মুনাফিকরা চিহ্নিত ছিল, তাই কোনো মুসলিম দীনি বিষয়ে তাদের শরণাপন্ন হবে সম্ভব ছিল না।৩. আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি, সাহাবিগণ নির্দিষ্ট নীতির অধীন হাদিস শ্রবণ করতেন, বলতেন ও যাচাই করতেন এবং বিনা সংকোচে অপরের সমালোচনা করতেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো বিষয় সম্পৃক্ত করা হবে, যা তিনি বলেননি, আর তারা চুপ থাকবে, এরূপ সম্ভব ছিল না। আল্লাহ তার নবীকে মুনাফিকদের থেকে পূর্ণরূপে রক্ষা করেছেন।
>[2] সূরা মুহাম্মদ: (১৬)
[3] সূরা মুহাম্মদ: (৩০)
[4] বুখারি : (৮/১১৩), হাদিস নং:(৪৪১৮)