সার্বজনীন দীন: ইসলাম আল্লাহর একমাত্র দীন। ইসলাম ব্যতীত কোনো দীন তার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩ ﴾ [ال عمران: ١٩]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম”।[2] তিনি অন্যত্র বলেন:
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائدة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”।[3] অন্যত্র বলেন:
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]
“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[4]
আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র বিশ্বের নিকট তার দীন প্রচারের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ١٥٨ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল’।[5] অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন:
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةٗ لِّلنَّاسِ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٢٨﴾ [سبا: ٢٨]
“আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”।[6] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:
﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّۧنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٤٠﴾ [الاحزاب : ٤٠]
“মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী, আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ”।[7] অতএব ইসলাম সার্বজনীন দীন, যা সমগ্র মানবজাতির নিকট পৌঁছানোর দায়িত্ব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ন্যাস্ত।
একটি প্রশ্ন: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির নিকট সর্বশেষ রাসূল, তারপর কোনো নবী ও রাসূল আসবে না, তাহলে তিনি সবার নিকট কিয়ামত পর্যন্ত কিভাবে দীন পৌঁছাবেন, কারণ তিনি একা, তার হায়াত মাত্র তেষট্টি বছর?
তিনটি উত্তর: প্রথমটি অসম্ভব, যেমন তিনি সবার নিকট সশরীরে গিয়ে দীন পৌঁছাবেন। দ্বিতীয়টি অবাস্তব, যেমন সকল মানুষ তার নিকট এসে দীন শিখবে। তৃতীয়টি যৌক্তিক ও বাস্তব, যেমন তিনি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবেন, যার সাথে তার সাক্ষাত হবে, কিংবা যারা তার নিকট আসবে, তাদেরকে তিনি দীন শিখাবেন। অতঃপর তারা পরবর্তীদের দীন শিখাবে, যারা তার সাক্ষাত পায়নি, কিংবা তার নিকট উপস্থিত হতে পারেনি। এভাবে সমগ্র বিশ্বে সবার নিকট কিয়ামত পর্যন্ত দীন পৌঁছবে। কেউ বলতে পারবে না, আমার নিকট দীন পৌঁছেনি, কিংবা দীন শিখার সুযোগ আমি পাইনি। উসুলে হাদিসের পরিভাষায় এ পদ্ধতির নাম "علم الرواية" অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতির নিকট রিসালাত পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতিকে ‘ইলমুর রিওয়াইয়াহ’ বলা হয়।‘ইলমুর রিওয়াইয়া’র পদ্ধতিতে সবার নিকট দীন পৌঁছবে, কিন্তু দীনের স্বকীয়তা ও অক্ষুণ্নতা বহাল রাখার জন্য এ পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। কারণ এ পদ্ধতিতে দীনের বাহন মানুষ, মানুষ ভুলের স্থান। তাদের থেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ভুল হতে পারে। তাই পৌঁছানো দীন সঠিক কি-না যাচাইয়ের উপায় থাকা জরুরি। তাহলে দীনের অক্ষুণ্নতা বজায় থাকবে ও সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদত আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব হবে। উসুলে হাদিসের পরিভাষায় এ পদ্ধতির নাম "علم الدراية" অর্থাৎ সহি, দ্বা‘ঈফ ও জাল হাদিস চিহ্নিত করার নীতিকে ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’ বলা হয়। আমরা ‘উসুলে হাদিসের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ’-এ ‘ইলমুর রিওয়াইয়াহ’ এবং মূলগ্রন্থে ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’ সম্পর্কে আলোচনা করব।[8]
[2] সূরা আলে ইমরান: (১৯)
[3] সূরা মায়েদা: (৩)
[4] সূরা আলে ইমরান: (৮৫)
[5] সূরা আরাফ: (১৫৮)
[6] সূরা সাবা: (২৮)
[7] সূরা আহ্যাব: (৪০)
[8] অর্থাৎ হ্রাস, বৃদ্ধি ও বিকৃতি মুক্ত বর্ণনা করাকে ‘ইলমুর রিওয়াইয়াহ’ বলা হয়। আর হ্রাস, বৃদ্ধি ও বিকৃত মুক্ত বর্ণিত হল কি না, তা নির্ণয়ে সনদ ও মতন যাচাই করার নিয়ম-নীতিকে ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’ বলা হয়। এ প্রকারকেই উসুলে হাদিস বলা হয়। [দেখুন, ইবন উসাইমীন, শারহুল মানযূমাতিল বাইকূনিয়্যাহ, পৃ. ১১-১২ (সম্পাদক)]