উত্তর: যেসব দল দাবী করছে যে, তারা হকের উপরে আছে, তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করা খুবই সহজ। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, হক কাকে বলে? জবাব, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত বক্তব্যই হচ্ছে হক। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে মুমিন, কুরআন ও সুন্নাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন করলে তার যাবতীয় দ্বন্দ্ব নিরসন হওয়া সম্ভব। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, কোনো কিছুই তার উপকারে আসবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ﴾ [النساء: ٥٩]
‘অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (আন-নিসা ৫৯)।
সুতরাং এসব জামা‘আতের লোকজনদের আমরা বলব, তোমরা একতাবদ্ধ হয়ে যাও; প্রত্যেকেই তার প্রবৃত্তির পূজা ছেড়ে দাও এবং কুরআন-সুন্নাহ্র বক্তব্যকে আঁকড়ে ধরার পাকাপোক্ত নিয়্যত কর।
...তবে রাষ্ট্রপ্রধান বা দেশের সরকার ছাড়া অন্য কারো হাতে বায়‘আত করা বৈধ নয়। কেননা আমরা যদি প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বায়‘আতের কথা বলি, তাহলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আমীর সৃষ্টি হবে। মূলত: এটিই হচ্ছে বিভক্তি।
কোনো দেশে ইসলামী বিধান চালু থাকলে, সেখানে অন্য কারো হাতে বায়‘আত জায়েয নেই। তবে কোনো দেশের সরকার যদি আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করে, তাহলে তার কয়েকটি অবস্থা হতে পারেঃ সরকারের কিছু কিছু কর্মকাণ্ড কখনো কুফরী হতে পারে, কখনো যুলম হতে পারে, আবার কখনো ফাসেক্বীও হতে পারে। কুরআন-হাদীছের আলোকে যখন স্পষ্ট প্রমাণিত হবে যে, কোনো দেশের সরকার স্পষ্ট কুফরীতে অনঢ় রয়েছে, তাহলে আমাদেরকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। তবে তার মোকাবেলায় নামা যাবে না এবং শক্তি প্রয়োগ করে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করলে তা হবে শরী‘আত ও হিকমত পরিপন্থী। আর সে কারণে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কেননা সে সময় তাঁর এমন কোনো শক্তি ছিল না, যার মাধ্যমে তিনি মক্কার মুশরিকদেরকে মক্কা থেকে বের দিতে পারবেন বা তাদেরকে হত্যা করতে পারবেন। সুতরাং সরকারের অস্ত্র-শস্ত্রের তুলনায় যাদের কোনো অস্ত্র নেই বললেই চলে এবং যাদের সংখ্যা নিতান্তই কম, তাদের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাওয়া হিকমত পরিপন্থী বৈ কিছুই নয়।
...সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার জন্য হাদীছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা বলা হয়েছে; আর তা হচ্ছে, ব্যক্তিকে নিজেই সরকারের কুফরীর বিষয়টি স্বচক্ষে দেখতে হবে, অন্যের কাছ থেকে শুনলে চলবে না। কারণ অনেক সময় মিথ্যা প্রচার করা হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তার ভেতরে কুফরী অবশ্যই থাকতে হবে; ফাসেক্বী নয়। সে যদি বড় ধরনের ফাসেক্বীও করে বসে, তথাপিও তার বিরুদ্ধে মাঠে নামা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি সে যেনা করে বা মদ পান করে অথবা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামা যাবে না। তবে সে যদি কারো রক্ত হালাল মনে করে তাকে হত্যা করে, তাহলে সেক্ষেত্রে হুকুম আলাদা হবে। হাদীছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা বলা হয়েছে; তা হচ্ছে, সরকারের কুফরী স্পষ্ট হতে হবে, যেখানে কোনো প্রকার ব্যাখ্যার অবকাশ থাকবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সরকারের কুফরীর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ্র স্পষ্ট দলীল থাকতে হবে, এখানে কিয়াসী দলীল চলবে না।
এই হচ্ছে চারটি শর্ত। সরকারের বিপক্ষে মাঠে নামার পঞ্চম শর্ত হচ্ছে, শক্তি ও সামর্থ্য থাকা। শেষোক্ত এই শর্তটি যে কোনো ওয়াজিবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦]
‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না’ (আল-বাক্বারাহ ২৮৬)। তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]
‘অতএব, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর’ (আত-তাগাবুন ১৬)।
এক্ষণে, যেসব ভাই তাদের দৃষ্টিতে তাদের ইসলামী সরকার নেই মনে করে বিভিন্ন দল গঠন করে প্রত্যেকটি দলের একজন করে আমীর নির্ধারণ করতে চায়, আমি তাদেরকে বলব, এটি তোমাদের মারাত্মক ভুল, প্রত্যেকটি দলের আলাদা আলাদা আমীর বানিয়ে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে দেওয়া তোমাদের জন্য আদৌ বৈধ নয়। বরং যে সরকারকে হটানোর সবগুলি শর্ত পাওয়া যায়, তাকে হটানোর জন্য তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা করতে হবে।([1])