১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ (الزمر: 68)
‘‘তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।’’ (ঝুমার : ৬৭)
২। ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একজন ইহুদী পন্ডিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, ‘হে মুহাম্মদ, আমরা [তাওরাত কিতাবে] দেখতে পাই যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত আকাশ মন্ডলীকে এক আঙ্গুলে, সমস্ত যমীনকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, পানি এক আঙ্গুলে ভূতলের সমস্ত জিনিসকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন, আমিই সম্রাট।’
এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদী পন্ডিতের কথার সমর্থনে এমন ভাবে হেসে দিলেন যে তাঁর দন্ত মোবারক দেখা যাচ্ছিল। অতপর তিনি
وما قدروا الله حق قدره والارض جميعا قبضته يوم القيامة
এ আয়াতটুকু পড়লেন।
সহীহ মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত আছে, পাহাড়- পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক হাতে থাকবে তারপর এগুলোকে ঝাকুনি দিয়ে তিনি বলবেন, ‘আমি রাজাধিরাজ, আমিই আল্লাহ।’
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সমস্ত আকাশ মন্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন। পানি এবং ভূতলে যা কিছু আছে তা এক আঙ্গুলে রাখবেন। আরেক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত সৃষ্টি। (বুখারী ও মুসলিম)
ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত মারফু হাদীসে আছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সমস্ত আকাশমন্ডলীকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সাত তবক যমীনকে ভাঁজ করবেন এবং এগুলোকে বাম হাতে নিবেন। তারপর বলবেন, ‘‘আমি হচ্ছি রাজাধিরাজ। অত্যাচারীরা কোথায়? অংহকারীরা কোথায়? (মুসলিম)
৩। ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সাত তবক আসমান ও যমীন আল্লাহ তাআলার হাতের তালুতে ঠিক যেন তোমাদের কারো হাতে এটা সরিষার দানার মত।
৪। ইবনে যায়েদ বলেন, ‘‘আমার পিতা আমাকে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
ما السموات السبع فى الكرسى إلا كدراهم سبعة القيت فى ترس
‘‘কুরসীর মধ্যে সপ্তাকাশের অবস্থান ঠিক যেন, একটি ঢালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি দিরহামের [মুদ্রার] মত।’’ তিনি বলেন, ‘আবুযর রা. বলেছেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামকে এ কথা বলতে শুনেছি,
ما الكرسى فى العرش إلا كحلقه من حديد القيت بين ظهرى فلاة من الأرض. ‘‘আরশের মধ্যে কুরসীর অবস্থান হচ্ছে ঠিক ভূপৃষ্ঠের কোন উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকা একটি আংটির মত।
৫। ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার আকাশ এবং এর পরবর্তী আকামের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। আর এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। এমনিভাবে সপ্তমাকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। একই ভাবে কুরসী এবং পানির মাঝখানে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। আরশ হচ্ছে পানির উপরে। আর আল্লাহ তাআলা সমাসীন রয়েছেন আরশের উপর। তোমাদের আমলের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই। (ইবনে মাহদী হাম্মাদ বিন সালামা হতে তিনি আসেম হতে, তিনি যিরর হ'তে, এবং যিরর আবদুলাহ হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
(অনুরূপ হাদীস মাসউদী আসেম হতে তিনি আবি ওয়ায়েল হতে, এবং তিনি আবদুলাহ হতে বর্ণনা করেছেন।)
৬। আববাস বিন আবদুল মোত্তালিব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
هل تدرون كم بين السماء والارض.؟ قلنا : الله ورسوله أعلم، قال بينهما مسيرة خمسمائة سنة، من كل سماء إلى سماء مسيرة خمسمائة سنة، وكثف كل سماء مسيرة خمسمائة سنة وبين السماء السابعة والعرش بحر بين اسفله وأعلاه كما بين السماء والارضও والله تعالى فوق ذالك، وليس يخفى عليه شيئ من أعمال بتى آدم. (أخرجه أبوداود وغيره)
‘‘তোমরা কি জানো, আসমান ও যমীনের মধ্যে দূরত্ব কত?’’ আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, ‘‘আসমান ও যমীনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। প্রতিটি আকাশের ঘনত্বও (পুরু ও মোটা) পাঁচশ’ বছরের পথ। সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার উপরিভাগ ও তলদেশের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আল্লাহ তাআলা এর উপরে সমাসীন রয়েছেন। আদম সন্তানের কোন কর্মকান্ডই তাঁর অজানা নয়।’’ (আবু দাউদ)
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। والارض جميعا قبضته এর তাফসীর
২। এ অধ্যায়ে আলোচিত জ্ঞান ও এতদসংশিষ্ট জ্ঞানের চর্চা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের ইহুদীদের মধ্যেও বিদ্যমান ছিলো। তারা এ জ্ঞানকে অস্বীকার ও করতোনা।
৩। ইহুদী পন্ডিত ব্যক্তি যখন কেয়ামতের দিনে আল্লাহর ক্ষমতা সংক্রান্ত কথা বললো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথাকে সত্যায়িত করলেন এবং এর সমর্থনে কোরআনের আয়াতও নাযিল হলো।
৪। ইহুদী পন্ডিত কর্তৃক আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কিত মহাজ্ঞানের কথা উল্লেখ করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাসির উদ্রেক হওয়ার রহস্য।
৫। আল্লাহ তাআলার দু’হস্ত মোবারকের সুস্পষ্ট উল্লেখ্য। আকাশ মন্ডলী তাঁর ডান হাতে, আর সমগ্র যমীন তাঁর অপর হাতে নিবদ্ধ থাকবে।
৬। অপর হাতকে বাম হাত বলে নাম করণ করার সুস্পষ্ট ঘোষণা।
৭। কেয়ামতের দিন অত্যাচারী এবং অহংকারীদের প্রতি আল্লাহর শাস্তির উল্লেখ।
৮। আকাশের তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।
৯। ‘‘তোমাদের কারো হাতে একটা সরিষা দানার মত’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথার তাৎপর্য।
১০। কুরসীর তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।
১১। কুরসী এবং পানি থেকে আরশ সম্পূর্ণ আলাদা।
১২। প্রতিটি আকাশের মধ্যে দূরত্ব ও ব্যবধানের উল্লেখ।
১৩। সপ্তমাকাশ ও কুরসীর মধ্যে ব্যবধান।
১৪। কুরসী এবং পানির মধ্যে দূরত্ব।
১৫। আরশের অবস্থান পানির উপর।
১৬। আল্লাহ তাআলা আরশের উপরে সমাসীন।
১৭। আকাশ ও যমীনের দূরত্বের উল্লেখ।
১৮। প্রতিটি আকাশের ঘনত্ব (পুরো) পাঁচশ বছরের পথ।
১৯। আকাশ মন্ডলীর উপরে যে সমুদ্র রয়েছে তার উর্ধ্ব দেশ ও তলদেশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ।
والحمد لله رب العلمين وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
৫। উপরোল্লিখিত তিনটি বিষয় ঈমানের দুর্বলতার আলামত।
৬। এখলাসের সাথে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করা ফরজের অন্তর্ভুক্ত।
৭। অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় পরিত্যাগকারীর জন্য শাস্তির উল্লেখ।
৮। আল্লাহকে যে ভয় করে তার জন্য সওয়াবের উল্লেখ।