১। ইবনে ওমর রা. বলেছেন,
والذى نفس ابن عمر بيده لوكان لأحدهم مثل أحد ذهبا ثم أنفقه فى سبيل الله ما فبله الله منه.
‘‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে ইবনে ওমরের জীবন, তাদের (তাকদীর অস্বীকারীদের) কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে’’। অতঃপর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী দ্বারা নিজ বক্তব্যের পক্ষে দলীল পেশ করেন,
الإيمان أن نومن بالله وملائكته وكتبه و رسله واليوم الأخر و تؤمن بالقدر خيره وشره. (رواه مسلم)
‘‘ঈমান হচ্ছে এই যে, তুমি আল্লাহ তাআলা, তাঁর সমুদয় ফিরিস্তা, তাঁর যাবতীয় [আসমানী] কিতাব, তাঁর সমস্ত রাসূল এবং আখেরাতের প্রতি
ঈমান আনয়ন করবে সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে।’’ (মুসলিম)
২। উবাদা বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি তার ছেলেকে বললেন, ‘‘হে বৎস, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে, ‘তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটারই ছিল। আর তোমার জীবনে যা ঘটেনি তা কোনদিন তোমার জীবনে ঘটার ছিলোনা।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি,
إن أول ما خلق الله القلم فقال له أكتب، فقال : رب ماذا اكتب؟ قال : أكتب مقادير كل شئ حتى تقوم الساعة.
‘‘সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা যা সৃষ্টি কলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। সৃষ্টির পরই তিনি কলমকে বললেন, ‘‘লিখ’’। কলম বললো, ‘হে আমার রব, ‘আমি কি লিখবো?’ তিনি বললেন, ‘কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের তাকদীর লিপিবদ্ধ করো।’’ হে বৎস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি,
من مات على غير هذا فليس منى
‘‘যে ব্যক্তি [তাকদীরের উপর] বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যু বরণ করলো, সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়।’’
অন্য একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে,
إن أول ما خلق الله تعالى القلم فقال له أكتب فجرى فى تلك الساعة ما هو كائن إلى يوم القيامة.
‘‘আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। এরপরই তিনি কলমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘লিখ’। কেয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সে মুহুর্তে থেকে কলম তা লিখতে শুরু করে দিল। (আহমদ)
৩। ইবনে ওয়াহাবের একটি বর্ণনা মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
فمن لم يؤمن بالقدر خيره وشره أحرقه الله بالنار
‘‘যে ব্যক্তি তাকদীর এবং তাকদীরের ভাল- মন্দ বিশ্বাস করে না, তাকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন করবেন।’’
ইবনুদ্দাইলামী থেকে বর্ণিত আছে, কাতাদাহ রা. বলেন, ‘আমি ইবনে কা’ব এর কাছে আসলাম। তারপর বললাম, ‘তাকদীরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু কথা আছে। আপনি আমাকে তাকদীর সম্পর্কে কিছু উপদেশমূলক কথা বলুন। এর ফলে হয়তো আল্লাহ তাআলা আমার অন্তর থেকে উক্ত জমাট বাধা কাদা দূর করে দিবেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যদি উহুদ [পাহাড়] পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান করো, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। আর এ কথা জেনে রাখো, তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটতে কখনো ব্যতিক্রম হতো না। আর তোমার জীবনে যা সম্পর্কিত এ বিশ্বাস পোষণ না করে মৃত্যু বরণ করো, তা হলে অবশ্যই জাহান্নামী হবে’। তিনি বলেন, অতঃপর আমি আবদুলাহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং যায়েদ বিন ছাবিত রা. এর নিকট গেলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এরকম হাদীসই বর্ণনা করেছেন।’’ ( হাকিম)
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায় .
১। তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ফরজ এর বর্ণনা।
২। তাকদীরের প্রতি কিভাবে ঈমান আনতে হবে, এর বর্ণনা।
৩। তাকদীরের প্রতি যার ঈমান নেই তার আমল বাতিল।
৪। যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনেনা সে ঈমানের স্বাদ অনুধাবন করতে অক্ষম।
৫। সর্বাগ্রে যা সৃষ্টি হয়েছে তার উল্লেখ।
৬। কেয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সৃষ্টির পর থেকেই কলম তা লিখতে শুরু করেছে।
৭। যে ব্যক্তি তাকদীর বিশ্বাস করে না তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িত্বমুক্ত।
৮। সালাফে সালেহীনের রীতি ছিল, কোন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনকে প্রশ্ন করা।
৯। ঊলামায়ে কেরাম এমন ভাবে প্রশ্ন কারীকে জবাব দিতেন যা দ্বারা সুন্দেহ দূর হয়ে যেতো। জবাবের নিয়ম এই যে, তাঁরা নিজেদের কথাকে শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর [কথা ও কাজের] দিকে সম্পৃক্ত করতেন।