১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ. (البقرة: 165)
‘‘মানুষের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে সদৃশ স্থির করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে।’’। (বাকারা : ১৬৫)
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,
قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (التوبة: 24)
‘‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ঐ ব্যবসা যার লোকসান হওয়াকে তোমরা অপছন্দ করো, তোমাদের পছন্দনীয় বাড়ী-ঘর, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁরই পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’’ (তাওবা : ২৪)
৩। সাহাবী আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين. (أخرجاه)
‘‘তোমাদের মথ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই।’’ (বুখারি ও মুসলিম)
৪। আনাস (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
ثلاث من كن فيه وجدبهن حلاوة الإيمان أن يكون الله ورسوله أحب إليه مما سواهما وأن يحب المرء لا يحبه إلا لله، وأن يكره أن يعود فى الكفر بعد إذا أنقذه الله منه كما يكره أن يقذف فى النار.
‘‘যার মধ্যে তিনটি জিনিস বিদ্যমান আছে সে ব্যক্তি এগুলো দ্বারা
ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পেরেছে। এক : তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সর্বাধিক প্রিয় হওয়া। দুই : একমাত্র আল্লাহ তাআলার [সন্তুষ্টি লাভের] জন্য কোন ব্যক্তিকে ভালবাসা। তিন : আল্লাহ তাআলা তাকে কুফরী থেকে উদ্ধার করার পর পূনরায় কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করা তার কাছে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতই অপছন্দনীয় হওয়া।
অন্য একটি বর্ণনায় আছে لا يجد أحد حلاوة الإيمان حتى
অর্থাৎ কেউ ঈমানের স্বাদ পাবে না যতক্ষণ না .... (হাদিসের শেষ পর্যন্ত।]
৬। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসে, আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব স্থাপন করে, আল্লাহর জন্যই শত্রুতা পোষণ করে; সে ব্যক্তি এ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভ করবে। আর এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া ব্যতীত নামায রোজার পরিমাণ যত বেশীই হোক না কেন, কোন বান্দাই ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে না।
সাধারণতঃ মানুষের মধ্যে পরস্পারিক ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে পার্থিব স্বার্থ। এ জাতীয় ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের দ্বারা কোন উপকার সাধিত হয় না। (ইবনে জারীর)
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন وتقطعت بهم الأسباب
অর্থাৎ তাদের সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে। এ সম্পর্ক হচ্ছে বন্ধুত্ব ও ভালবাসার সম্পর্ক।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১। সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর।
২। সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর।
৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসাকে জীবন, পরিবার ও ধন-সম্পদের উপর অগ্রাধিকার দেয়া ওয়াজিব।
৪। কোন কোন বিষয় এমন আছে যা ঈমানের পরিপন্থী হলেও এর দ্বারা ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়া বুঝায় না। [এমতাবস্থায় তাকে অপূর্ণাঙ্গ মোমিন বলা যেতে পারে]।
৫। ঈমানের একটা স্বাদ আছে। মানুষ কখনো এ স্বাদ অনুভব করতেও পারে, আবার কখনো অনুভব নাও করতে পারে।
৬। অন্তরের এমন চারটি আমল আছে যা ছাড়া আল্লাহর বন্ধুত্ব ও নৈকট্য লাভ করা যায় না, ঈমানের স্বাদ ও অনুভব করা যায় না।
৭। একজন প্রখ্যাত সাহাবী দুনিয়ার এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব সাধারণত গড়ে উঠে পার্থিব বিষয়ের ভিত্তিতে।
৮। وتقطعت بهم الأسباب এর তাফসীর।
৯। মুশরিকদের মধ্যেও এমন লোক রয়েছে যারা আল্লাহকে খুব ভালবাসে [কিন্তু শিরকের কারণে এ ভালবাসা অর্থহীন।]
১০। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে এবং ঐ শরীককে আল্লাহকে ভালবাসার মতই ভালবাসে সে শিরকে আকবার অর্থাৎ বড় ধরনের শিরক করলো।