কিতাবুত তাওহীদ ১ হতে ৬৭ তম অধ্যায় মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব ১ টি

১। আবু বাসীর আনসারী রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর সঙ্গী ছিলেন। এ সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একজন দূত পাঠালেন। এর উদ্দেশ্য ছিল কোন উটের গলায় যেন ধনুকের কোন রজ্জু লটকানো না থাকে অথবা এ জাতীয় রজ্জু যেন কেটে ফেলা হয়। (বুখারি)

২। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি,

أن الرقى والتمائم والتولة شرك (رواه أحمد وأبو داؤد)

‘‘ঝাড়-ফুঁক ও তাবিক- কবজ হচ্ছে শিরক’’ (আহমাদ, আবু দাউদ)

৩। আবদুল্লাহ বিন উকাইম থেকে মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,

من تعلق شيئا وكل اليه (رواه أحمد والترمذي)

‘‘যে ব্যক্তি কোন জিনিস [অর্থাৎ তাবিজ- কবজ] লটকায় সে উক্ত জিনিসের

দিকেই সমর্পিত হয়’’। [অর্থাৎ এর কুফল তার উপরই বর্তায়] (আহমাদ, তিরমিজি)

تمائم বা তাবিজ হচ্ছে এমন জিনিস যা চোখ লাগা বা দৃষ্টি লাগা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সন্তানদের গায়ে ঝুলানো হয়। ঝুলন্ত জিনিসটি যদি কুরআনের অংশ হয় তাহলে সালাফে সালেহীনের কেউ কেউ এর অনুমতি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অনুমতি দেননি বরং এটাকে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় বলে গণ্য করতেন। ইবনে মাসউদ রা. এ অভিমতের পক্ষে রয়েছেন। আর رقى বা ঝাড়-ফুঁককে عزائم নামে অভিহিত করা হয়। যে সব ঝাড়-ফুঁক শিরক মুক্ত তা দলিলের মাধ্যমে খাস করা হয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম চোখের দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষের ব্যাপারে ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।

تولة এমন জিনিস যা কবিরাজদের বানানো। তারা দাবী করে যে, এ জিনিস [কবজ] দ্বারা স্ত্রীর অন্তরে স্বামীর ভালবাসা আর স্বামীর অন্তরে স্ত্রীর ভালবাসার উদ্রেক হয়। সাহাবী রুআইফি থেকে ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, তিনি [রুআইফি] বলেছেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

يا رويفع لعل الحياة تطول بك فاخبر الناس أن من عقد لحيته أو تقلد وترا أو استنجى برجيع فإن محمدا برئ عنه

‘‘হে রুআইফি, তোমার হায়াত সম্ভবত দীর্ঘ হবে। তুমি লোকজনকে জানিয়ে দিও, ‘‘যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা দিবে, অথবা গলায় তাবিজ- কবজ ঝুলাবে অথবা পশুর মল কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জিম্মাদারী থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।’’

সাঈদ বিন জুবাইর থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

من قطع تميمة من إنسان كان كعدل رقبة (رواه وكيع)

‘‘যে ব্যক্তি কোন মানুষের তাবিজ- কবজ ছিড়ে ফেলবে বা কেটে ফেলবে সে ব্যক্তি একটি গোলাম আযাদ করার মত কাজ করলো।’’ (ওয়াকী)

ইবরাহীম থেকে বর্নিত হাদীসে তিনি বলেন, তাঁরা সব ধরনের তাবীজ- কবজ অপছন্দ করতেন, চাই তার উৎস কুরআন হোক বা অন্য কিছু হোক।

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১। ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের ব্যাখ্যা।

২। (تولة) ‘‘তাওলাহ’’ এর ব্যাখ্যা।

৩। কোন ব্যাতিক্রম ছাড়াই উপরোক্ত তিনটি বিষয় শিরক এর অন্তর্ভূক্ত।

৪। সত্যবাণী তথা কুরআনের সাহায্যে [চোখের] দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষ নিরাময়ের জন্য ঝাড়-ফুঁক করা শিরকের অন্তর্ভূক্ত নয়।

৫। তাবিজ- কবজ কুরআন থেকে হলে তা শিরক হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

৬। খারাপ দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পশুর রশি বা অন্য কিছু বুঝলানো শিরকের অন্তর্ভূক্ত।

৭। যে ব্যক্তি ধনুকের রজ্জু গলায় ঝুলায় তার উপর কঠিন অভিসম্পাত।

৮। কোন মানুষের তাবিজ- কবজ ছিড়ে ফেলা কিংবা কেটে ফেলার ফজিলত।

৯। ইবরাহীমের কথা পূর্বোক্ত মতভেদের বিরোধী নয়। কারণ এর দ্বারা আব্দুল্লাহর সঙ্গী- সাহাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে।