১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ (الاسراء: 57)
‘‘এসব লোকেরা যাদেরকে ডাকে তারা নিজেরাই তাদের রবের নৈকট্য লাভের আশায় অসীলার অনুসন্ধান করে (আর ভাবে) কোনটি সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী।’’ (ইসরাঃ ৫৭)
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِمَّا تَعْبُدُونَ ﴿26﴾ إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي (الزخرف: 26-27)
‘‘সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন ইবরাহীম তার পিতা ও কওমের লোকদেরকে বলেছিলেন, তোমরা যার ইবাদত করো তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আর আমার সম্পর্ক হচ্ছে কেবল মাত্র তাঁরই সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন।’’ (যুখরুফঃ ২৬)
৩। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ঘোষণা করেছেন,
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ (التوبة: 31)
‘‘তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলেম ও দরবেশ লোকদেরকে নিজেদের রব বানিয়ে নিয়েছে’’ (তাওবাঃ ৩১)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ (البقرة:165)
‘‘মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা আল্লাহ ছাড়া অপর কোন শক্তিকে আল্লাহর অংশীদার বা সমতুল্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাকে এমনভাবে ভালবাসে যেমনিভাবে একমাত্র আল্লাহকেই ভালবাসা উচিৎ।’’ (বাকারা : ১৬৫)
৫। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম এরশাদ করেছেন,
من قال لا إله إلا الله وكفر بما يعبد من دون الله حرم ماله ودمه وحسابه على الله عز وجل.
‘‘যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ [আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই] বলবে, আর আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয় তাকেই অস্বীকার করবে তার জান ও মাল হারাম [অর্থাৎ মুসলমানদের কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ] গোপন তৎপরতা ও অন্তরের কুটিলতা বা মুনাফিকির জন্য] তার শাস্তি আল্লাহর উপরই ন্যস্ত।’’
পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে তাওহীদ এবং
শাহাদাতের তাফসীর। কয়েকটি সুস্পষ্ট বিষয়ের মাধ্যমে এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমনঃ
(ক) সূরা ইসরার আয়াত, এ আয়াতে সে সব মুশরিকদের সমুচিত জওয়াব দেযা হয়েছে যারা বুজুর্গ ও নেক বান্দাদেরকে (আল্লাহকে ডাকার মত] ডাকে। আর এটা যে ‘শিরকে আকবার’ এ কথার বর্ণনাও এখানে রয়েছে।
(খ) সূরা তাওবার আয়াত। এতে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি খৃষ্টানরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও দরবেশ ব্যক্তিরদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আরো বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়নি। এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অন্যায় ও পাপ কাজে আলেম ও আবেদদের আনুগত্য করা যাবে না। তাদের কাছে দোয়াও করা যাবে না।
(গ) কাফেরদেরকে লক্ষ্য করে ইবরাহীম খলীল (আঃ) এর কথা
إنى براء مما تعبدون إلا الذي فطرني
দ্বারা তাঁর রবকে যাবতীয় মা’বুদ থেকে আলাদা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা এখানে এটাই বর্ণনা করেছেন যে [বাতিল মা’বুদ থেকে] পবিত্র থাকা আর প্রকৃত মাবুদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাই হচ্ছে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ব্যাখ্যা। তাই আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
جعلها كلمة باقية فى عقبه لعلهم يرجعون
‘‘আর ইবরাহীম এ কথাটি পরবর্তীতে তার সন্তানের মধ্যে রেখে গেলো, যেন তারা তার দিকে ফিরে আসে।’’
(ঘ) সূরা বাকারার কাফেরদের বিষয় সম্পর্কিত আয়াত। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, وماهم بخارجين من النار
‘‘তারা কখনো জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না।’’
এখানে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, মুশরিকরা তাদের শরীকদেরকে [যাদেরকে তারা আল্লাহর সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে] আল্লাহকে ভালবাসার মতই ভালবাসে।
এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা আল্লাহকে ভালবাসে, কিন্তু এ ভালবাসা তাদেরকে ইসলামে দাখিল করতে পারেনি। তাহলে আল্লাহর শরীককে যে ব্যক্তি আল্লাহর চেয়েও বেশী ভালবাসে সে কিভাবে ইসলামকে গ্রহণ করবে। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র শরীককেই ভালবাসে। আল্লাহর প্রতি তার কোন ভালবাসা নেই তার অবস্থাই বা কি হবে?
(ঙ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী .
من قال لا إله إلا الله وكفر بما يعبد من دون الله حرم ماله ودمه وحسابه على الله.
‘‘যে ব্যক্তি লা- ইলাহ ইল্লাল্লাহু বলবে আর আল্লাহ ব্যতীত যারই
ইবাদত করা হয় তাকেই অস্বীকার করবে, তার ধন-সম্পদ ও রক্ত পবিত্র।’’ [অর্থাৎ জান, মাল, মুসলমানের কাছে নিরাপদ] এ বাণী হচ্ছে লা-ইলাহা ইললাল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা। কারণ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর শুধুমাত্র মৌখিক উচ্চারণ, শব্দসহ এর অর্থ জানা, এর স্বীকৃতি প্রদান, এমনকি শুধুমাত্র লা- শারীক আল্লাহকে ডাকলেই জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদত তথা মিথ্যা মা’বুদগুলোকে অস্বীকার করার বিষয়টি সংযুক্ত না হবে। এতে যদি কোন প্রকার সন্দেহ, সংশয় কিংবা দ্বিধা সংকোচ পরিলক্ষিত হয় তাহলে জান-মাল ও নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অতএব, এটাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়, সুস্পষ্ট বর্ণনা ও অকাট্য দলীল।