রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে ‘সালাতুত তারাবীহ’ বা ‘বিশ্রামের সালাত’ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে তিনি নিজে ও সাহাবীগণ রামাদান ও অন্যান্য সকল মাসেই মধ্যরাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ৪/৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একাকি কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ আদায় করতেন। উমার (রা) এর সময় থেকে মুসলিমগণ জামাআতে তারাবীহ আদায় করতেন। সাধারণত ইশার পর থেকে শেষরাত্র বা সাহরীর পূর্ব সময় পর্যন্ত ৫/৬ ঘণ্টা যাবৎ তাঁরা একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারাবীহের সালাত আদায় করতেন।
যেহেতু এভাবে একটানা কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা খুবই কষ্টকর, সেহেতু পরবর্তী সময়ে প্রতি ৪ রাক‘আত সালাত আদায়ের পরে প্রায় ৪ রাক‘আত সালাতের সম পরিমাণ সময় বিশ্রাম নেয়ার রীতি প্রচলিত হয়। এজন্যই পরবর্তীকালে এ সালাত ‘সালাতুত তারাবীহ’ বলে প্রসিদ্ধ হয়।
এ ‘বিশ্রাম’ সালাতের বা ইবাদতের কোনো অংশ নয়। বিশ্রাম না করলে সাওয়াব কম হবে বা বিশ্রামের কমবেশির কারণে সাওয়াব কমবেশি হবে এরূপ কোনো বিষয় নয়। বিশ্রাম মূলত ভালভাবে সালাত আদায়ের উপকরণ মাত্র। বিশ্রামের সময়ে মুসল্লী যে কোনো কাজ করতে পারেন, বসে বা শুয়ে থাকতে পারেন, অন্য নামায আদায় করতে পারেন, কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন বা দোয়া বা যিকর-এ রত থাকতে পারেন। এ বিষয়ে কোনো নির্ধারিত কিছুই নেই।
গত কয়েক শতাব্দী যাবত কোনো কোনো দেশে প্রতি চার রাক‘আত পরে একটি নির্ধারিত দোয়া পাঠ করা হয় এবং একটি নির্ধরিত মুনাজাত করা হয়। অনেক সময় দোয়াটি প্রতি ৪ রাক‘আত অন্তে পাঠ করা হয় এবং মুনাজাতটি ২০ রাক‘আত অন্তে পাঠ করা হয়। দোয়াটি নিম্নরূপ:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ (وَالْهَيْبَةِ) وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لا يَنَامُ وَ) لا يَمُوتُ (أبَداً أَبَداً)، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ (رَبُّنَا وَ) رَبُّ الْمَلائِكَةِ وَالرُّوحِ، (لا إلَهَ إلا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ ، نَسْأَلُك الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِك مِنْ النَّارِ)
মুনাজাতটি নিম্নরূপ:
اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلْكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَا عَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَا جَبَّارُ يَا خَالِقُ يَا بَارُّ اَللّهُمَّ أَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
এ দোয়া ও মুনাজাতের কথাগুলো ভাল, তবে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) শেখানো বা আচরিত নয়। তারাবীহের বিশ্রামের সময়ে এগুলো পড়লে কোনে বিশেষ সাওয়াব হবে বলে কোনো সহীহ, যয়ীফ বা জাল হাদীসেও বলা হয় নি। এমনকি অন্য কোনো সময়ে তিনি এ বাক্যগুলো এভাবে বলেছেন বা বলতে শিখিয়েছেন বলে বর্ণিত হয় নি। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বা অন্য কোনো ইমাম তারাবীহে এ দুআ-মুনাজাত পড়তে বলেন নি। ১০০০ হিজরী পর্যন্ত রচিত হানাফী ফিকহের কোনো গ্রন্থে এ দুআ ও মুনাজাতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ফিরিশতাদের তাসবীহ হিসেবে এ দুআর কয়েকটি বাক্য বণিত। একটি জাল হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর কিছু ফিরিশতা একটি নূরের সমুদ্রে এ দোয়াটি পাঠ করেন... যে ব্যক্তি কোনো দিবসে, মাসে বা বছরে এ দোয়াটি পাঠ করবে সে এত এত পুরস্কার লাভ করবে। তবে কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহের সাথে এ দুআকে জড়ানো একেবারেই ভিত্তিহীন।[1]
আমাদের উচিত এ সকল বানোয়াট দোয়া না পড়ে এ সময়ে দরুদ পাঠ করা। অথবা কুরআন তিলাওয়াত বা মাসনূন যিক্র-এ মশগুল থাকা।
কোনো কোনো প্রচলিত পুস্তকে তারাবীহের দু রাকআত অন্তে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতে বলা হয়েছে[2]:
هَذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّىْ يَا كَرِيْمَ الْمَعْرُوْفِ يَا قَدِيْمَ الإِحْسَانِ أَحْسِنْ إِلَيْنَا بِإِحْسَانِكَ الْقَدِيْمِ ثَبِّتْ قُلُوْبَنَا عَلَى دِيْنِكَ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
এ দোয়াটিও ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
[2] মাও. গোলাম রহমান, মকছুদোল মো’মেনীন, পৃ. ২২৮।