হাদীসের নামে মিথ্যা বলা ও অন্যান্য বিষয়ে মিথ্যা বলার মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য হলো, হাদীসের নামে মিথ্যাবাদীর তাওবা মুহাদ্দিসগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কোনো ব্যক্তির বিষয়ে প্রমাণিত হয় যে, তিনি কোনো কথাকে মিথ্যাভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কথা বলে উল্লেখ করেছেন বা প্রচার করেছেন এবং এরপর তিনি তাওবা করেছেন, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতেও পারেন, তবে মুহাদ্দিসগণের কাছে তিনি তাওবার কারণে গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাবেন না। মুহাদ্দিসগণ আর কখনোই সে ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস সত্য ও নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করবেন না।
পঞ্চম শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকীহ আহমাদ ইবনু সাবিত খতীব বাগদাদী (৪৬৩ হি) বলেন: যে ব্যক্তি মানুষের সাথে মিথ্যা বলে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। তবে সে যদি তাওবা করে এবং তাঁর সততা প্রমাণিত হয় তাহলে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হতে পারে বলে ইমাম মালিক উল্লেখ করেছেন। আর যদি কেউ হাদীস জাল করে, হাদীসের মধ্যে কোনো মিথ্যা বলে বা যা শোনে নি তা শুনেছে বলে দাবী করে তাহলে তার বর্ণিত হাদীস কখনোই সত্য বা সঠিক বলে গণ্য করা যাবে না। আলিমগণ উল্লেখ করেছেন যে, সে যদি পরে তাওবা করে তাহলেও তার বর্ণিত কোনো হাদীস সত্য বলে গণ্য করা যাবে না। ইমাম আহমাদ (২৪১ হি)-কে প্রশ্ন করা হয়: একব্যক্তি একটিমাত্র হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলেছিল, এরপর সে তাওবা করেছে এবং মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করেছে, তার বিষয়ে কী করণীয়? তিনি বলেন: তার তাওবা তার ও আল্লাহর মাঝে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কবুল করতে পারেন। তবে তার বর্ণিত কোনো হাদীস আর কখনোই সঠিক বলে গ্রহণ করা যাবে না বা কখনোই তার বর্ণনার উপর নির্ভর করা যাবে না। ইমাম সুফিয়ান সাওরী (১৬১ হি), আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক (১৮১ হি) ও অন্যান্য ইমামও অনুরূপ কথা বলেছেন।
ইমাম বুখারীর অন্যতম উস্তাদ আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর আল-হুমাইদী (২১৯ হি) বলেন, যদি কেউ হাদীস বর্ণনা করতে যেয়ে বলে: আমি অমুকের কাছে হাদীসটি শুনেছি, এরপর প্রমাণিত হয় যে, সে উক্ত ব্যক্তি থেকে হাদীসটি শোনেনি, বা অন্য কোনোভাবে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার মিথ্যা ধরা পড়ে তবে তার বর্ণিত কোনো হাদীসই আর সঠিক বা নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করা যাবে না। খতীব বাগদাদী বলেন, ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ধরা পড়লে সেক্ষেত্রে এ বিধান।[1]
শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (১০৫২ হি) বলেন: যদি কোনো ব্যক্তির বিষয়ে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে জীবনে একবারও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলার কথা প্রমাণিত হয় তবে তার বর্ণিত কোনো হাদীস সঠিক বা নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য হবে না, যদিও সে তাওবা করে।[2]
[2] আব্দুল হক দেহলবী, মুকাদ্দিমাহ ফী উসূলিল হাদীস, পৃ: ৬৩-৬৪।