হাদীসের নামে জালিয়াতি ২. মিথ্যা ও ওহীর নামে মিথ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
২. ৫. ৩. বেশি হাদীস ও অ-মুখস্থ হাদীস বলার নিষেধাজ্ঞা

বেশি হাদীস বলতে গেলে ভুলের সম্ভাবনা থাকে। এজন্য এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন রাসূলুল্লাহ ()। বিশুদ্ধ মুখস্থ ও নির্ভুলতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে কোনো হাদীস বর্ণনা করতে তিনি নিষেধ করেছেন। আবু কাতাদাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ মিম্বারের উপরে দাঁড়িয়ে বলেন,

إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَدِيْثِ عَنِّيْ! فَمَنْ قَالَ عني فَلْيَقُلْ حَقًّا وَصِدْقًا (فلا يقل إلا حقا) وَمَنْ تَقَوَّلَ (قال) عَلَيَّ مَا لَمْ أقُلْ فَلْيَتَبَوَّأ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘‘খবরদার! তোমরা আমার নামে বেশি হাদীস বলা থেকে বিরত থাকবে। যে আমার নামে কিছু বলবে, সে যেন সঠিক কথা বলে। যে আমার নামে এমন কথা বলবে যা আমি বলি নি তাকে জাহান্নামে বসবাস করতে হবে।’’[1]

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ () বলেছেন:

اتَّقُوا الْحَدِيثَ عَنِّي إِلا مَا عَلِمْتُمْ.

‘‘তোমরা আমার থেকে হাদীস বর্ণনা পরিহার করবে, শুধুমাত্র যা তোমরা জান তা ছাড়া।’’[2]

আবু মূসা মালিক ইবনু উবাদাহ আল-গাফিকী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ () আমাদেরকে সর্বশেষ ওসীয়ত ও নির্দেশ প্রদান করে বলেন:

عَلَيْكُمْ بِكِتَابِ اللهِ، وَسَتَرْجِعُوْنَ إِلَى قَوْمٍ يُحِبُّونَ الْحَدِيْثَ عَنِّيْ- أَوْ كَلِمَةً تُشْبِهُهَا- فَمَنْ حَفِظَ شَيْئاً فَلْيُحَدِّثْ بِهِ، وَمَنْ قَالَ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘‘তোমরা আল্লাহর কিতাব সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে ও অনুসরণ করবে। আর অচিরেই তোমরা এমন সম্প্রদায়ের কাছে গমন করবে যারা আমার নামে হাদীস বলতে ভালবাসবে। যদি কারো কোনো কিছু মুখস্থ থাকে তাহলে সে তা বলতে পারে। আর যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কিছু বলবে যা আমি বলি নি তাকে জাহান্নামে তার আবাসস্থল গ্রহণ করতে হবে।’’[3]

এভাবে বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মাতকে তাঁর হাদীস হুবহু ও নির্ভুলভাবে মুখস্থ রাখতে ও এরূপ মুখস্থ হাদীস প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে পরিপূর্ণ মুখস্থ না থাকলে বা সামান্য দ্বিধা থাকলে সে হাদীস বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, তিনি যা বলেন নি সে কথা তাঁর নামে বলা নিষিদ্ধ ও কঠিনতম পাপ। ভুলক্রমেও যাতে তাঁর হাদীসের মধ্যে হেরফের না হয় এজন্য তিনি পরিপূর্ণ মুখস্থ ছাড়া হাদীস বলতে নিষেধ করেছেন। আমরা দেখতে পাব যে, সাহাবীগণ এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতেন।

[1] ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/১৪; আলবানী, সহীহ সুনানি ইবনি মাজাহ ১/২৯; দারিমী, , আস-সুনান ১/৮২, হাকিম, আল মুসতাদরাক ১/১৯৪।
[2] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/১৮৩।
[3] আহমাদ ইবনু হাম্বাল (২৪১ হি), আল-মুসনাদ ৪/৩৩৪; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/১৯৬; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৪৪।