হাদীসের ব্যবহার থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, ইচ্ছাকৃতভাবে, অনিচ্ছাকৃতভাবে, অজ্ঞতার কারণে বা যে কোনো কারণে বাস্তবের বিপরীত যে কোনো কথা বলাই মিথ্যা বলে গণ্য। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেখুন :
১. জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন,
إِنَّ عَبْدًا لِحَاطِبٍ جَاءَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَشْكُو حَاطِبًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَيَدْخُلَنَّ حَاطِبٌ النَّارَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم:্রكَذَبْتَ، لاَ يَدْخُلُهَا، فَإِنَّهُ شَهِدَ بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَةَগ্ধ.
হাতিবের (রা) একজন দাস তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে বলে: হে আল্লাহর রাসূল, নিশ্চয় হাতিব জাহান্নামে প্রবেশ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: তুমি মিথ্যা বলেছ। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; কারণ সে বদর ও হুদাইবিয়ায় উপস্থিত ছিল।[1]
এখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাতিবের এ দাসের কথাকে ‘মিথ্যা’ বলে গণ্য করেছেন। সে অতীতের কোনো বিষয়ে ইচ্ছাকৃত কোনো মিথ্যা বলেনি। মূলত সে ভবিষ্যতের বিষয়ে তার একটি ধারণা বলেছে। সে যা বিশ্বাস করেছে তাই বলেছে। তবে যেহেতু তার ভবিষ্যদ্বাণীটি বাস্তবের বিপরীত সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন। এথেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অতীত বা ভবিষ্যতের যে কোনো সংবাদ যদি সত্য বা বাস্তবের বিপরীত হয় তাহলে তা মিথ্যা বলে গণ্য হবে, সংবাদদাতার ইচ্ছা, অনিচ্ছা, অজ্ঞতা বা অন্য কোনো বিষয় এখানে ধর্তব্য নয়। তবে মিথ্যার পাপ বা অপরাধ ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত।
২. তাবিয়ী সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, আমার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনু উমারকে (রা) বলতে শুনেছি:
بَيْدَاؤُكُمْ هَذِهِ الَّتِى تَكْذِبُونَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فِيهَا مَا أَهَلَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ مِنْ عِنْدِ الْمَسْجِدِ يَعْنِى ذَا الْحُلَيْفَةِ
এ হলো তোমাদের বাইদা প্রান্তর, যে প্রান্তরের বিষয়ে তোমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বল (তিনি এ স্থান থেকে হজ্জের ইহরাম শুরু করেছিলেন বলে তোমরা বল।) অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ যুল হুলাইফার মসজিদের কাছ থেকে হজ্জের ইহরাম করেছিলেন।[2]
স্বভাবতই ইবনু উমার (রা) এসকল ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলার অভিযোগ করছেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জের সময় লক্ষাধিক সাহাবীকে সাথে নিয়ে হজ্জ আদায় করেন। তিনি মদীনা থেকে বের হয়ে ‘যুল হুলাইফা’ প্রান্তরে রাত্রি যাপন করেন এবং পরদিন সকালে সেখান থেকে হজ্জের ইহরাম করেন। যুল হুলাইফা প্রান্তরের সংলগ্ন ‘বাইদা’ প্রান্তর। যে সকল সাহাবী কিছু দূরে ছিলেন তাঁরা তাঁকে যুল হুলাইফা থেকে ইহরাম বলতে শুনেন নি, বরং বাইদা প্রান্তরে তাঁকে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেন। তাঁরা মনে করেন যে, তিনি বাইদা থেকেই ইহরাম শুরু করেন। একারণে অনেকের মধ্যে প্রচারিত ছিল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বাইদা প্রান্তর থেকে ইহরাম শুরু করেন। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার যেহেতু কাছেই ছিলেন, সেহেতু তিনি প্রকৃত ঘটনা জানতেন।
এভাবে আমরা দেখছি যে, বাইদা থেকে ইহরাম করার তথ্যটি ছিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভুল। যারা তথ্যটি প্রদান করেছেন তারা তাদের জ্ঞাতসারে সত্যই বলেছেন। কিন্তু তথ্যটি যেহেতু বাস্তবের বিপরীত এজন্য ইবনু উমার (রা) তাকে ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
[2] মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮৪৩।