৭. যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায়

৭. যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায় তবে তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে এবং যে ব্যক্তি এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে উভয়ই কুফরী করল।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ

‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।[16]

আল্লাহ রাববুল আলামীন যাদুকে কুফরী ও শয়তানী শিক্ষা হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ ‘কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত’ (বাক্বারাহ ১০২)। অত্র আয়াতের শেষের দিকে মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ ‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’ (বাক্বারাহ ১০২)।

যাদুর শ্রেণীভুক্ত কিছু বিষয় :

(ক) আউফ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াফা’ হচ্ছে পাখি উড়িয়ে ভাগ্য গণনা করা। ‘তারক’ হচ্ছে মাটিতে রেখা টেনে ভাগ্য গণনা করা। হাসান বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে শয়তানের মন্ত্র।[17] ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে যাদু’।[18]

(খ) ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ... ‘যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা থেকে কিছু অংশ শিখল সে মূলতঃ যাদুবিদ্যারই কিছু অংশ শিখল। এ (জ্যোতির্বিদ্যা) যত বাড়বে যাদুবিদ্যাও তত বাড়বে’।[19]

(ঘ) ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيْمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ ‘আমি কি তোমাদেরকে যাদু কি এ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী বা কুৎসা রটনা করা অর্থাৎ মানুষের মধ্যে কথা লাগানো বা বদনাম ছড়ানো’।[20]

দু’টি কারণে যাদু শিরকের অন্তর্ভুক্ত :

১। যাদু বিদ্যায় শয়তানকে ব্যবহার করা হয় এবং তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।

২। যাদু বিদ্যায় ইলমে গায়েবের দাবী করা হয় এবং যাদুকরের জ্ঞান ও যাদুবিদ্যা অর্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশীদারিত্বের দাবী করা হয়। এটা নিঃসন্দেহে শিরক এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।[21]

যাদুকরের শাস্তি : যাদুকররা কাফির ও হত্যাযোগ্য অপরাধী।[22]

বাজালা (রহঃ) বলেন, আমি আহনাফ ইবনে কায়সের চাচা মাযই ইবনে মু‘আবিয়ার কাতেব (সচিব) ছিলাম। ওমর (রাঃ)-এর মৃত্যুর একবছর পূর্বে তাঁর লেখা একখানা পত্র আমাদের হস্তগত হ’ল। তাতে লেখা ছিল, اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ ‘প্রত্যেক যাদুকরকে হত্যা কর’।[23]

ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, ওমর (রাঃ) মুসলিম গভর্ণরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর’। বাজালা বিন আবাদাহ বলেন, ‘এ নির্দেশের পর আমরা তিনজন যাদুকরকে হত্যা করেছি’।[24] তবে ইমাম আহমাদ ও ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মতে, যদি তারা তওবা করে তবে তাদের তওবা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ মুশরিকও তওবা করলে কবুল হয়, যেমন তওবা করেছিল ফিরআঊনের যাদুকররা।[25]

[16]. বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।
[17]. আহমাদের সনদে ফাতহুল মাজীদ ২৪৯ পৃঃ।
[18]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৩ পৃঃ।
[19]. আবূদাঊদ হা/৩৯০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান।
[20]. মুসলিম এর সনদে ফাহুল মাজীদ ২৫২ পৃঃ।
[21]. তাওহীদ মর্মকথা ১১৭ পৃঃ।
[22]. তাওহীদের মর্মকথা ১১৬ পৃঃ।
[23]. আবুদাউদ হা/৩০৪৩, সনদ ছহীহ।
[24]. বুখারী, আহমাদ ১/১৯০ পৃঃ।
[25]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৭ পৃঃ।