ইসলামের ইতিহাসে মক্কা বিজয়ের ঘটনা এমন একটি আযীমুশ শান ঘটনা, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর দ্বীন এবং তাঁর রসূলকে শক্তিশালী করেছেন। রসূল (ﷺ) এর সৈনিক এবং হারামে মাক্কীর সম্মান বৃদ্ধি করেছেন। এই বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর ঘর ও শহরকে এবং সমস্ত বিশ্ববাসীর হিদায়াতের কেন্দ্রস্থলকে কাফের-মুশরিকদের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। এই বিজয়ে আসমানের অধিবাসীগণ খুশী হয়েছিল এবং এই বিজয়ের ফলেই দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করল।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, অষ্টম হিজরীর রমযান মাসের দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর নাবী (ﷺ) ১০ হাজার মুজাহিদের একটি বাহিনী নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। বের হওয়ার সময় আবু রুহম কুলছুম বিন হুসাইনকে মদ্বীনার খলীফা নির্বাচন করলেন। মক্কা আক্রমণ ও জয় করার কারণ হচ্ছে, কুরাইশরা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করেছিল এবং খোযাআ গোত্রের উপর রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করে তাদেরকে অকাতরে হত্যা করেছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত মোতাবেক খোযাআ গোত্র রসূল (ﷺ) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এটি ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধির সুস্পষ্ট লংঘন।
ইসলামী বাহিনী যখন ‘মার্রম্নয যাহরান’ নামক স্থানে পৌঁছল তখন রাতের বেলা নাবী (ﷺ) সাহাবীদেরকে আগুন জবালানোর আদেশ দিলেন। সাহাবী প্রজ্জবলিত আগুনের আলোতে আশে-পাশের সমস্ত অঞ্চল আলোকিত হয়ে গেল। তখনো মক্কাবাসীদের কাছে মুসলিম বাহিনীর আক্রমণের কোন খবর ছিলনা। তবে তাদের অন্তরে আশঙ্কা ছিল যে, যে কোন সময় মুসলিম বাহিনী মক্কায় আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তারা চলে আসবে- এটি তাদের ধারণায় ছিলনা। অতঃপর নাবী (ﷺ) মুজাহিদ বাহিনীকে সাথে নিয়ে বিনা বাধায় মক্কায় প্রবেশ করলেন। প্রথমে তিনি কাবা ঘরের দিকে গেলেন। তাঁর চার পাশে আনসার ও মুহাজিরগণ ঘিরে ছিল। কাবায় গিয়ে তিনি আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করলেন। রসূল (ﷺ)-এর হাতে একটি ধনুক ছিল। সে সময় কাবার অভ্যন্তরে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। ধনুকের মাধ্যমে এক এক করে তিনি মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে ফেললেন। এ সময় তিনি কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন-
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
‘‘বলঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল’’। [1] অতঃপর নাবী (ﷺ) কাবার ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং সলাত পড়লেন। সলাত পড়ে বাইরে আসলেন। কুরাইশরা তখন সারিবদ্ধভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে অবস্থান করছিল। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন- হে কুরাইশ সম্প্রদায়? তোমাদের সাথে আজ আমি কেমন আচরণ করব বলে মনে কর? সকলেই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতে লাগল- আমরা আপনার কাছ থেকে খুব ভাল আচরণ কামনা করছি। ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাইদেরকে যা বলেছিলেন আজ আমিও তোমাদের সাথে তাই বলছি। আজ তোমাদের উপর কোন অভিযোগ নেই। তোমরা মুক্ত-স্বাধীন।