দ্বিতীয় হিজরী সালে নাবী (ﷺ) এর কাছে এই মর্মে খবর পৌঁছল যে, কুরাইশদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা সিরিয়া হতে মক্কার পথে অগ্রসর হচ্ছে। কাফেলার নেতৃত্বে ছিল আবু সুফিয়ান। নাবী (ﷺ) কাফেলাটির পিছু ধাওয়া করার আহবান জানালেন। তবে এর জন্য বেশী প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন নি। দ্রুত বের হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে এর জন্য বেশী সময় পান নি। তাই তিনি তিনশত তের জন সাহাবী নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। তাদের কাছে ছিল দুইটি ঘোড়া এবং সত্তরটি উট। লোকেরা পালাক্রমে আরোহন করতেন।

ঐ দিকে আবু সুফিয়ান নাবী (ﷺ) এর বের হওয়ার কথা জানতে পেরে মক্কায় লোক পাঠিয়ে কাফেলার হেফাজতের জন্য দ্রুত সাহায্যের আবেদন করল। সংবাদ পেয়ে তারা দ্রুত বের হয়ে পড়ল। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের বের হওয়ার অবস্থা বর্ণনা করে বলেন-

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللهِ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ

‘‘আর তাদের মত হয়ে যেয়োনা, যারা বের হয়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে গর্বিতভাবে এবং লোকদেরকে দেখাবার উদ্দেশ্যে। আর আল্লাহর পথে তারা বাধা দান করত। বস্ত্ততঃ আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে সে সমস্ত বিষয় যা তারা করে’’। (সূরা আনফাল-৮:৪৭) সুতরাং পূর্ব প্রস্ত্ততি ছাড়াই আল্লাহ্ তা‘আলা উভয় দলকে মুখোমুখী করে দিলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন- ‘‘এমতাবস্থায় যদি তোমরা পারস্পরিক অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে, তবে তোমরা মতবিরোধে লিপ্ত হতে’’। (সূরা আনফাল-৮: ৪২)

যাই হোক নাবী (ﷺ) যখন কুরাইশদের বের হওয়ার কথা জানতে পারলেন, তখন সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন।

সেই পরামর্শ সভায় মুহাজিরগণ প্রথমে কথা বললেন এবং অত্যন্ত সুন্দর পরামর্শ দিলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার পরামর্শ চাইলেন। এবারও মুহাজিরগণই কথা বললেন। তৃতীয়বার পরামর্শ চাইলেন। এতে আনসারগণ বুঝতে পারলেন যে, নাবী (ﷺ) তাদেরকে উদ্দেশ্য করছেন এবার তাদের পরামর্শ শুনতে চাচ্ছেন। তাই সা’দ বিন মুআয উঠে দাঁড়ালেন এবং আনসারদের পক্ষ হতে তিনি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কথাগুলো বললেন। তিনি তাতে রসূল (ﷺ) কে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন যে, আনসারগণ যুদ্ধ করার জন্য পূর্ণ প্রস্ত্তত রয়েছেন। সা’দ বিন মুআয বললেন- হে আল্লাহর রসূল! আপনি সম্ভবত আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। আপনি যদি আমাদেরকে ঘোড়া ছুটিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তাহলে আমরা তাই করব। আপনি আমাদেরকে যেখানে যেতে বলেন, আমরা সেখানেই যাবো। এমন কি বারাকুল গামাদ (লোহিত সাগরের অপর প্রামেত্মর একটি অঞ্চলের নাম) পর্যন্ত যেতে বলেন, তাহলে আমরা সেখানে যেতেও দ্বিধাবোধ করবনা। মিকদাদ বিন আসওয়াদও অনুরূপ কথা বললেন- মিকদাদ (রাঃ) বললেন- মুসা (আঃ) এর অনুসারীরা যেরূপ বলেছিল আমরা সেরূপ বলবনা। তারা মুসাকে বলেছিল- আপনি এবং আপনার প্রভু তাদের (শত্রুদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন। আমরা এখানেই বসে থাকব। আর আমরা বলছিঃ আমরা আপনার ডানে, বামে সামনে এবং পিছনে তথা চতুর্দিক থেকেই যুদ্ধ করব। সাহাবীদের কথা শুনে বিশেষ করে এই দুই নেতার কথা শুনে নাবী (ﷺ) খুব খুশী হলেন। তিনি বললেন- তাহলে তোমরা আগে বাড়, সামনে চল এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ্ আমাকে কাফেরদের দুই দলের একটির উপর বিজয় দান করার ওয়াদা করেছেন। আর আমি কাফের নেতাদের নিহত হওয়ার স্থানগুলো দেখতে পাচ্ছি।

এরপর নাবী (ﷺ) সামনে চলতে লাগলেন এবং বদর প্রান্তরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি যখন মুশরিকদের মুখোমুখী হলেন এবং উভয় দল পরস্পরকে দেখতে পেল, তখন রসূল (ﷺ) আল্লাহর দরবারে উভয় হাত তুলে দু’আ করতে লাগলেন এবং তাঁর প্রভুর সাহায্য প্রার্থনা করলেন। মুসলমানেরাও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকলেন এবং আল্লাহর মদদ চাইলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা এ সময় কুরআনের এই আয়াত নাযিল করলেন-

إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ

‘‘তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করছিলে স্বীয় প্রভুর নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব ধারাবাহিকভাবে আগত এক হাজার ফিরিস্তার মাধ্যমে’’। (সূরা আনফাল-৯)

এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়। তা হচ্ছে, এখানে এক হাজার ফিরিস্তার মাধ্যমে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। আর সূরা আল ইমরানে তিন হাজার ও পাঁচ হাজার ফিরিস্তা দ্বারা সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। এর জবাব কী?

এর উত্তর দুইভাবে দেয়া যেতে পারে। (১) উহুদ যুদ্ধের দিন তিন হাজার ও পাঁচ হাজার ফিরিস্তা দ্বারা সাহায্য করার কথা বলা হয়েছিল। তবে সেখানে একটি শর্ত জড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। শর্ত পূর্ণ না হওয়ার কারণে সেই সাহায্য আগমণ করেনি। (২) বদরের যুদ্ধের দিনই তিন হাজার বা পাঁচ হাজার ফিরিস্তার মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল। আয়াতের পূর্বাপর বর্ণনা এ কথারই প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ - إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَنْ يَكْفِيَكُمْ أَنْ يُمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ آَلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُنْزَلِينَ - بَلَى إِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُمْ مِنْ فَوْرِهِمْ هَذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ آَلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ - وَمَا جَعَلَهُ اللهُ إِلَّا بُشْرَى لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُمْ بِهِ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِنْدِ اللهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

‘‘বস্ত্তত আল্লাহ্ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার। তুমি যখন মুমিনগণকে বলতে লাগলে তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের প্রতিপালক আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফিরিস্তা পাঠাবেন? অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং তাকওয়ার পথ অবলম্বন কর, আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের প্রতিপালক চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফিরিস্তা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন। বস্ত্তত এটা তো আল্লাহ্ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্তনা আসতে পারে। আর সাহায্য শুধু পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকেই’’। (সূরা আল-ইমরান-৩:১২৩-১২৬) মুসলমানেরা যখন আল্লাহর কাছে মদদ চাইল, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এক হাজার ফিরিস্তার মদদ পাঠালেন। তারপর তিন হাজার ফিরিস্তা পাঠালেন। পুনরায় পাঁচ হাজার পাঠালেন। এভাবে ধাপে ধাপে সাহায্য পাঠানোর মাধ্যমে মুমিনদের মনোবল বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এটি ছিল তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ দায়ক।

প্রথম মতের সমর্থকগণ বলেন- ঘটনাটি অর্থাৎ তিন হাজার ও পাঁচ হাজার ফিরিস্তার মাধ্যমে সাহায্য করার ঘটনা উহুদ যুদ্ধের আলোচনায় বর্ণিত হয়েছে। মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বদরের আলোচনা চলে এসেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা মুসলমানদের প্রতি বদরের যুদ্ধের দিনের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর উহুদ যুদ্ধের আলোচনা করা হয়েছে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর রসূলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী,

إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَنْ يَكْفِيَكُمْ أَنْ يُمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ آَلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُنْزَلِينَ (124) بَلَى إِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُمْ مِنْ فَوْرِهِمْ هَذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ آَلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ

‘‘তুমি যখন মুমিনগণকে বলতে লাগলে তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের প্রতিপালক আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফিরিস্তা পাঠাবেন। অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং তাকওয়ার পথ অবলম্ভন কর, আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের প্রতিপালক চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফিরিস্তা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন’’।[1] এটি হচ্ছে আল্লাহর রসূলের কথা। আর বদরের যুদ্ধের দিন এক হাজার ফিরিস্তা দিয়ে সাহায্য করার কথা স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন। আর সেটি ছিল শর্তহীন। আর উহুদ যুদ্ধে গায়েবী সাহায্য পাঠানোর বিষয়টি ছিল শর্তযুক্ত তথা সবর করলে এবং তাকওয়ার পথ অবলম্বন করার শর্তে তিন ও পাঁচ হাজার ফিরিস্তার মাধ্যমে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছিল।

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা সূরা আল-ইমরানে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বদরের আলোচনা চলে এসেছে। আর বদরের যুদ্ধের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, সূরা আনফালে। সুতরাং উভয় সূরার প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহর এই বাণীই প্রমাণ করে যে, উভয় সূরার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা আল-ইমরানে বলেন-

وَيَأْتُوكُمْ مِنْ فَوْرِهِمْ هَذَا

‘‘আর তারা যদি তখনই তোমাদের ওপর চড়াও হয়’’। (সূরা আল-ইমরান-৩:১২৫) মুজাহিদ (রহঃ) বলেন- এটি উহুদ যুদ্ধের ঘটনা। এটি প্রমাণ করে যে, উহুদ যুদ্ধের দিনও গায়েবী সাহায্য এসেছিল। সুতরাং এ কথা বলা ঠিক হবেনা যে, বদরের যুদ্ধের দিনই তিন বা পাঁচ হাজার ফিরিস্তা দ্বারা সাহায্য করা হয়েছিল। মোট কথা দ্রুত ও তৎক্ষণাৎ সাহায্য পাঠানো হয়েছিল উহুদ যুদ্ধের দিন। আল্লাহই ভাল জানেন।

কাফেররা যখন বের হওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করল, তখন তারা তাদের এবং বনী কেনানার মাঝখানের শত্রুতার কথা স্মরণ করল। তখন ইবলীস বনী কেনানার অন্যতম নেতা সুরাকা বিন মালেকের আকৃতিতে প্রকাশিত হয়ে বলতে লাগল-

لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ

‘‘আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবেনা, আমি হলাম তোমাদের সমর্থক’’। (সূরা আনফাল-৮: ৪৮) সুতরাং বনী কেনানার লোকেরা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। ইবলীসের এই আশ্বাস পেয়ে কুরাইশরা বীরত্বের সাথে বেরিয়ে পড়ল। পরিশেষে যখন চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এবং ইবলীস দেখল যে, আকাশ থেকে আল্লাহর সৈনিকগণ অবতরণ করেছেন তখন সে পিছন দিকে পলায়ন করতে লাগল। কুরাইশরা বলল- হে সুরাকা তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ? তুমি কি এর আগে বলনি যে, আমাদের পাশেই থাকবে? তখন ইবলীস বলতে লাগল-

إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَاللهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ

‘‘আমি তোমাদের সাথে নাই। আমি এমন কিছু দেখছি, যা তোমরা দেখছনা; আমি ভয় করি আল্লাহ্কে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন’’।[2] ইবলীসের কথা, আমি এমন কিছু দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; এটি ছিল সত্য।

কারণ সে আকাশ থেকে ফিরিস্তাদের অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা দেখছিল। আর তার কথা, আমি আল্লাহ্কে ভয় করি- এটি ছিল মিথ্যা। কেউ কেউ বলেছেন- ইবলীস কাফেরদের সাথে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিল। এটিই অধিক সুস্পষ্ট।

বদরের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে মুনাফেক এবং রেসূাক্রান্ত হৃদয়ের অধীকারীরা যখন দেখল যে, আল্লাহর সৈনিকদের সংখ্যা খুবই কম এবং শত্রু সংখ্যা খুব বেশী তখন তারা ভাবতে লাগল যে, সংখ্যাধিক্যই বিজয়ের মানদন্ড। তারা বলতে লাগল- এদের দ্বীন এদেরকে প্রতারিত করছে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন- আল্লাহর উপর নির্ভেজাল ঈমান এবং ভরসাই বিজয় অর্জনের মাধ্যম। অস্ত্রের প্রাচুর্যতা ও সংখ্যাধিক্য নয়। আল্লাহ্ তা‘আলা প্রবল শক্তিধর, তাকে পরাজিত করা অসম্ভব। তিনি প্রজ্ঞাময়। যে বিজয়ের হকদার, তাকেই তিনি বিজয় দান করেন। যদিও সে শক্তির দিক দিয়ে দুর্বল হয়।

রসূল (ﷺ) যখন শাওয়াল মাসে বদর যুদ্ধ এবং বন্দীদের বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহণ করার সাত দিন পর বনী সুলাইম গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হলেন। সেখানকার কুদ্র নামক পানির কাছে পৌঁছে তিন দিন অবস্থান করে যুদ্ধ ছাড়াই মদ্বীনায় ফেরত আসেন।

ঐ দিকে মুশরিকরা যখন পরাজিত ও অপমানিত অবস্থায় মক্কায় পৌঁছল তখন আবু সুফিয়ান মানত করল যে, মদ্বীনাবাসীদের সাথে পুনরায় যুদ্ধ না করা পর্যন্ত মাথায় পানি ব্যবহার করবেনা। সে দুইশত অশ্বারোহীর একটি বাহিনী নিয়ে মদ্বীনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় পৌঁছে সালাম বিন মিশকাম নামক ইহুদীর নিকট রাত্রি যাপন করল। সেই ইহুদী মানুষের কাছে আবু সুফিয়ানের আগমণের কথা গোপন রাখল। সকাল বেলা সে বেশ কিছু খেজুর গাছ কর্তন করল এবং একজন আনসারী ও তার এক বন্ধুকে হত্যা করে ফেলল। খবর পেয়ে নাবী (ﷺ) তার সন্ধানে বের হলে সে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বোঝা কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ ছাতু ফেলে যায়। এ কারণেই একে গাযওয়াতুছ ছাওয়ীক বা ছাতুর যুদ্ধ বলা হয়।

অতঃপর নাবী (ﷺ) নজদ এলাকার গাতফান গোত্রের উদ্দেশ্যে বের হন। সেখানে গিয়ে তিনি তৃতীয় হিজরীর পূর্ণ সফর মাস অবস্থান করেন। অতঃপর যুদ্ধ না করেই ফেরত আসেন। সেখান থেকে ফেরত এসে রবীউল আওয়াল মাস মদ্বীনাতেই কাটান। অতঃপর কুরাইশদের উদ্দেশ্যে বের হন। হিজাজের বুহরান এলাকায় পৌঁছে রবীউছ ছানী এবং জুমাদাল আওয়াল মাস অবস্থান করেন। অতঃপর কোন রূপ যুদ্ধ ছাড়াই সেখান থেকে ফেরত আসেন।

অতঃপর মদ্বীনার ইহুদী সম্প্রদায় বনী কায়নুকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং কাব বিন আশরাফকে হত্যা করেন। এর পর অঙ্গীকার ভঙ্গ ও আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রস্ত্ততি নেওয়ার কারণে মদ্বীনার ইহুদীদেরকে হত্যা করার অনুমতি দেয়া হয়।

[1] . সূরা আল-ইমরান-৩:১২৩-১২৬

[2]. সূরা আনফাল-৮:৪৮