রসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, বনী কুরায়যা, বনী নযীর এবং খায়বারের অর্ধেক ভূমি মুজাহিদদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন। মদ্বীনা বিজয় করেছিলেন কুরআনের মাধ্যমে। মদ্বীনাবাসীগণ স্বেচ্ছায় ইসলাম কবুল করেছে। সুতরাং তাদেরকে নিজ নিজ অবস্থানে রেখে দিয়েছেন।
মক্কা বিজয়ের পর মক্কার যমীন মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করা হয়নি। কারণ স্বরূপ কেউ কেউ বলেন, এটি হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র ও ইবাদতের স্থান। তাই এটি আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দাদের জন্য ওয়াক্ফ স্বরূপ। কেউ কেউ বলেছেন- যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত অঞ্চলের যমীনের ব্যাপারে ইমামের স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে এগুলো ভাগ করে দিবেন অথবা ওয়াক্ফ হিসেবে রেখে দিবেন। কেননা নাবী (ﷺ) খায়বারের যমীন ভাগ করে দিয়েছেন এবং মক্কার যমীন ওয়াক্ফ হিসেবে রেখে দিয়েছেন। এতে বুঝা গেল উভয়টিই জায়েয আছে। আলেমগণ বলেন- যুদ্ধলব্ধ অন্যান্য সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থা যমীনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা এই উম্মাত ব্যতীত অন্য কোন উম্মাতের জন্য গণীমতের মাল হালাল করেন নি। আল্লাহ তাদের জন্য কাফেরদের ভূমি যমীন ও বসতবাড়ি হালাল করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنْبِيَاءَ وَجَعَلَكُمْ مُلُوكًا وَآَتَاكُمْ مَا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ - يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوا خَاسِرِينَ
‘‘যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেন- হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামাত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নাবীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিষ দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেন নি। হে আমার সম্প্রদায়! পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছন দিকে প্রত্যাবর্তন করো না। অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে’’। (সূরা মায়েদা-৫:২০-২১) আল্লাহ্ তা‘আলা ফেরাউনের দেশ, জাতি ও যমীন সম্পর্কে বলেন-
كَذَلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا بَـنِى إِسْرَائِيلَ
‘‘এরূপই হয়েছিল এবং বনী-ইসরাঈলকে করে দিলাম এসবের (যমীনের) মালিকানা’’। (সূরা শুআরা-২৬: ৫৯) এ থেকে বুঝা গেল যমীন ভাগ করা হবেনা। যমীনের বিষয়টি ইমামের অধীন। তিনি তাতে মুসলমানদের উপকার অনুযায়ী কাজ করবেন। রসূল (ﷺ) ভাগ করেছেন। আবার ভাগ করা ছেড়েও দিয়েছেন। উমার (রাঃ) ভাগ করে দেন নি; বরং তাতে স্থায়ী টেক্স নির্ধারণ করেছেন। টেক্স আদায় করে তা জিহাদের কাজে ব্যয় করা হবে। যমীন ওয়াক্ফ করার অর্থ এটিই। এটি সেই ওয়াক্ফ নয়, যারা মালিকানা স্থানান্তরের অযোগ্য। বরং এটি বিক্রয়যোগ্য ওয়াক্ফ। এর উপরই উম্মাতের আমল। আলেমদের সর্ব সম্মতিক্রমে এর ওয়ারিছ হওয়া যাবে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বলেছেন- বিবাহের মোহরানা হিসেবে এটি দেয়া জায়েয আছে। ওয়াক্ফকৃত বস্ত্ত বিক্রি করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হল এতে যার জন্য ওয়াক্ফ করা হয়েছে তার হক নষ্ট হয়। মুসলমান সৈনিকদের জন্য খিরাজী যমীনে হক রয়েছে। সুতরাং বিক্রির মাধ্যমে এটি বাতিল হয়না। এই যমীন যে ক্রয় করবে তার কাছেও খিরাজী ভূমি হিসাবেই থাকবে। মালিকের সাথে অর্থের বিনিময়ে গোলামী হতে মুক্তির চুক্তিবদ্ধ গোলাম বিক্রির বিষয়টিও অনুরূপ। লিখিতভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে তার মধ্যে স্বাধীন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাকে বিক্রি করা হলে ক্রেতার নিকট সে মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ) অবস্থায়ই স্থানান্তরিত হবে। যেমন ছিল বিক্রেতার নিকট। বিক্রয়ের কারণে তার মুক্ত হওয়ার সুযোগ বাতিল হবেনা। (আল্লাহই ভাল জানেন)
নাবী (ﷺ) হিজরত করতে সক্ষম মুসলিমদেরকে মুশরিকদের সাথে বসবাস করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন- আমি সেই মুসলিমের সাথে সর্ম্পচ্ছেদ ঘোষণা করছি, যে মুশরিকদের সাথে বসবাস করে। তিনি আরও বলেন- যে মুসলিম মুশরিকদের সাথে একত্রে এবং একসাথে বাস করবে, সে তাদের মতই হবে। তিনি আরও বলেন- তাওবার দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত হিজরত বন্ধ হবেনা। আর পশ্চিম আকাশে সূর্য না উঠা পর্যন্ত তাওবার দরজা বন্ধ হবেনা। অচিরেই কিয়ামতের পূর্বে হিজরতের পর (শাম দেশে) আরেকটি হিজরত হবে। তাই যমীনের উপর সর্বোৎকৃষ্ট লোক তারাই হবে, যারা ইবরাহীম (আঃ)এর হিজরতের স্থানে (শাম দেশে) হিজরত করবে।
যমীনের নিকৃষ্ট লোকেরাই কেবল অবশিষ্ট থাকবে। যমীন তাদেরকে উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ্ তাদেরকে বানর ও শুকরের সাথে হাশর করাবেন।[1]