যুদ্ধবন্দীদের কারও উপর তিনি অনুগ্রহ করতেন এবং ছেড়ে দিতেন। বনী হানীফার সরদার ছুমামা বিন উছালকে বন্দী করে তিনি মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছিলেন। পরে তিনি তাকে ছেড়ে দিলে সে মুসলমান হয়ে যায়। আবার কাউকে তা না করে হত্যা করতেন। যেমন তিনি আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূলের সাথে মাত্রাতিরিক্ত শত্রুতা পোষণ করার কারণে উকবা বিন আবী মুঈত ও নযর বিন হারিছকে হত্যা করেছেন। আবার কাউকে অর্থের বিনিময়েও ছেড়ে দিতেন। বদরের যুদ্ধে তিনি সকল বন্দীকে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার কখনও মুসলিম বন্দীদের বিনিময়েও ছাড়তেন। এ সব কিছুই করতেন মুসলমানদের প্রয়োজনার্থেই। বদরের যুদ্ধে যখন তাঁর চাচা আববাস বন্দী হলেন, তখন আনসারগণ মুক্তিপন ছাড়াই তাকে ছেড়ে দেয়ার সুপারিশ করলেন। নাবী (ﷺ) তখন বললেন- তোমরা তার জন্য একটি দিরহামও ছাড়বেনা। গণীমতের মাল বণ্টন হওয়ার পরও তিনি হাওয়াযেন গোত্রের বন্দীদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন। গণীমতের হকদার সাহাবীগণ এটিকে খুশী মনে গ্রহণ করে নিয়েছেন। আর যারা এতে খুশী হতে পারেন নি, তিনি তাদেরকে প্রত্যেক বন্দীর বিনিময়ে গণীমতের অন্যান্য মাল হতে ছয় অংশ প্রদান করেছেন।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, বন্দীদের কারও মাল থাকতনা। তাই তিনি আনসারদের সন্তানদেরকে লেখা-পড়া শিখানোকেই বিনিময় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কাজের বিনিময়ে বন্দিকে ছেড়ে দেয়াও জায়েয আছে।
নাবী (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আরব বন্দীদেরকেও দাস বানানো জায়েয আছে এবং তাদের দাসীদেরকে ক্রয়সূত্রে বা গণীমত হিসাবে মালিক হয়ে তাদের সাথে সহবাস করাও জায়েয আছে। দাসীদের সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে মুসলমান হওয়া শর্ত নয়। শিশু সন্তানসহ কোন মহিলা বন্দী হলে তিনি মা ও তার সন্তানের পার্থক্য করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন- যে ব্যক্তি কোন শিশু ও তার মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার মাঝে এবং তার প্রিয়জনের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাবেন।[1]
কখনও কখনও কোন পরিবারের সকলেই বন্দী হয়ে আসত। তখন সকলকেই এক সাথে একজনের কাছে দিয়ে দিতেন, যাতে তাদের মাঝে বিচ্ছেদ না ঘটে।
নাবী (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একজন মুশরিক গোয়েন্দাকে হত্যা করেছেন। কিন্তু গোয়েন্দাগিরি করা সত্ত্বেও তিনি হাতেব বিন আবী বালতাআকে হত্যা করেন নি। তিনি বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন। এই ঘটনা থেকে কেউ কেউ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, মুসলিম গোয়েন্দাকে হত্যা করা যাবেনা। এটি ইমাম শাফেঈ, আহমাদ এবং আবু হানীফা (রহঃ) এর মত। আবার কেউ এই হাদীস থেকে হত্যা করা জায়েয হওয়ারও দলীল গ্রহণ করেছেন। ইমাম মালেক (রহঃ) এ মত পোষণ করেছেন। হাতেব (রাঃ) কে হত্যা না করার কারণ হল তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মুসলিম হলেই যদি হত্যা করা নাজায়েয হত তাহলে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করাকে হত্যা না করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করার কোন অর্থ হতনা; বরং মুসলিম হওয়াকেই যথেষ্ট মনে করা হত। কেননা কোন হুকুমকে সাধারণ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করার পর খাস বিষয় উল্লেখ করা অর্থহীন। এটিই সঠিক এবং অধিক শক্তিশালী মত।
নাবী (ﷺ) এর পবিত্র সুন্নাত এটিও ছিল যে, মুশরিকদের দাসেরা মুসলমানদের দেশে চলে আসলে এবং মুসলমান হয়ে গেলে তাদেরকে আযাদ মনে করা হত। তার পবিত্র অভ্যাস এও ছিল যে, কেউ মুসলমান হলে তার কাছে যা কিছু থাকত, তিনি তার সবই নও মুসলিমকে দিয়ে দিতেন। ইসলাম কবুলের পূর্বে সে কিভাবে সেই সম্পদ উপার্জন করেছে, সেদিকে দৃষ্টি দেন নি। কাফেররা কুফরীর হালতে থাকাবস্থায় এবং যুদ্ধের ময়দানে মুসলমানদের জান-মালের যত ক্ষতিই করেছে ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদের থেকে সেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়নি। মুসলমানগণ তাদের হাতে সেই সমস্ত সম্পদ দেখতেন, কিন্তু তা ছিনিয়ে নেওয়ার কোন চেষ্টা করতেন না।
মক্কা বিজয় হলে কতিপয় মুহাজির নাবী (ﷺ) এর কাছে তাদের ঐ সমস্ত বাড়িঘর ফেরত পাওয়ার দাবী করলেন, যেগুলো মুশরিকরা দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাদের কারও ঘর ফেরত দেন নি। কেননা তারা এগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় ছেড়ে দিয়েছিল। আর আল্লাহ্ তা‘আলা এগুলোর বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাতে এর চেয়ে উত্তম ঘর দিয়েছেন। সুতরাং তারা যা আল্লাহর জন্য ছেড়ে দিয়েছেন, তাতে ফেরত আসার অধিকার তাদের নেই। শুধু তাই নয়, হাজ্জ-উমরা সম্পাদনের পর তিনি কোন মুহাজিরকে মক্কায় তিন দিনের বেশী অবস্থান করার অনুমতি দেননি। কেননা তিনি স্বীয় দেশকে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ছেড়ে দিয়েছেন এবং তা থেকে হিজরত করেছেন। সুতরাং তাতে ফেরত এসে পুনরায় বসবাস শুরু করার অধিকার তার নেই। এ জন্যই তিনি সা’দ বিন খাওলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ সে মক্কা হতে হিজরত করার পর পুনরায় ফেরত এসে মক্কাতেই মৃত্যু বরণ করেছিল।