নাবী (সাঃ) ও বনী হাশেমকে কুরাইশদের বয়কট

অতঃপর (নবুওয়াতের ৬ষ্ট বছর) হামজাহ (রাঃ) এবং অপর একটি দল ইসলাম গ্রহণ করল। এতে ইসলাম দ্রুত প্রসার হতে লাগল। কুরাইশরা যখন দেখল রসূল (ﷺ) এর দাওয়াত উন্নত হচ্ছে এবং মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন তারা দাওয়াত প্রতিরোধে এক নতুন কর্মসূচী গ্রহণ করল। তারা সকলেই বনী হাশেম এবং বনী আব্দুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হল যে, মুহাম্মাদকে হত্যা করার জন্য তাদের হাতে সোপর্দ না করা পর্যন্ত নিম্ন লিখিত বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ বলবৎ থাকবে।

  • বনী হাশেম ও আব্দুল মোত্তালেব গোত্রের সাথে সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকবে।
  • তাদের সাথে বিবাহ-সাদী বন্ধ থাকবে।
  • এমন কি তাদের সাথে কোন প্রকার কথা-বার্তাও বলবেনা।
  • তাদের সাথে উঠাবসা ও চলা-ফেরা বন্ধ থাকবে।

চুক্তি পত্রটি লিখে তারা কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে। কথিত আছে ঐ চুক্তিপত্রটি বাগীয বিন আমের বিন হাশেম লিখে ছিল। তাই তিনি তার উপর বদ দু’আ করেছিলেন যার ফলে তার একটি হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল।

এই চুক্তিপত্র লিখার পর আবু লাহাব ব্যতীত বনী হাশেম এবং বনী আব্দুল মোত্তালেব গোত্রের সকল মুসলিম-কাফের শিআবে আবু তালেব তথা দুই পাহাড়ের মধ্যবতী একটি স্থানে আশ্রয় নিল। আবু লাহাব বনী হাশেমের লোক হওয়া সত্ত্বেও সে কুরাইশদের পক্ষ নিয়েছিল।

এটি ছিল নুবওয়াতের ৭ম বছর মুহাররাম মাসের প্রথম দিকের ঘটনা। তারা সেখানে অবরুদ্ধ কোণঠাসা অবস্থায় তিন বছর যাবৎ বসবাস করতে থাকলেন। তারা প্রচন্ড অভাবের সম্মুখীন হলেন। প্রচন্ড খাদ্যাভাবে এবং ক্ষুধার তাড়নায় তারা এক পর্যায়ে গাছের পাতা এবং জীব-জন্তুর চামড়া খেতে বাধ্য হলেন। প্রায়ই ঘাটির অপর প্রান্ত হতে ক্ষুধার যন্ত্রনায় শিশু ও মহিলার ক্রন্দন শুনা যেত।

আবু তালেব কুরাইশদের বয়কটের বিবরণ দিয়ে একটি সুপ্রসিদ্ধ কবিতা রচনা করেন। ইতিহাসের কিতাবগুলোতে তার সেই বিখ্যাত কবিতাটি উল্লেখিত হয়েছে। কুরাইশরা এই বয়কটকে কেন্দ্র করে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একদল এই বয়কটকে অপছন্দ করেছিল। আরেকদল এটিকে সমর্থন করেছিল। যারা এটিকে অপছন্দ করেছিল তারা এটি ছিড়ে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ঐ দিকে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রসূলকে চুক্তিপত্রটির বিষয়ে অবগত করেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার হুকুমে একটি পোঁকা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন ও জুলুম-নির্যাতনের বাক্যগুলো খেয়ে ফেলেছে। শুধু আল্লাহ্ তা‘আলার বরকতময় নামটিই অবশিষ্ট রয়েছে। রসূল (ﷺ) তাঁর চাচা আবু তালেবকে এই সংবাদ জানালেন। আবু তালেব কুরাইশদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালেন এবং বললেন তাঁর কথা যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমরা তাঁর উপর থেকে সমর্থন উঠিয়ে নেব এবং তাঁকে তোমাদের জন্য ছেড়ে দেব। আর যদি তাঁর কথা সত্য হয়, তাহলে তোমাদের সিদ্বান্ত পরিবর্তন করা উচিৎ। কুরাইশরা বলল- আপনি ঠিক বলেছেন। সুতরাং তারা চুক্তিটি নামিয়ে এনে দেখল যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সংবাদ হুবহু সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এতে তাদের কুফরী আরও বেড়ে গেল।

অতঃপর কতিপয় ব্যক্তির উদ্যোগে চুক্তিপত্রটি ছিড়ে ফেলার পর রসূল (ﷺ) ঘাটি থেকে বের হলেন। এর ছয় মাস পর আবু তালেব মৃত্যু বরণ করেন। তার তিন দিন পর রসূল (ﷺ) এর স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) মৃত্যু বরণ করেন। এ বিষয়ে অন্য কথাও বর্ণিত হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে এই বছরকে আমুল হুজ্ন তথা দুঃখের বছর বলা হয়।