সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী (ﷺ) বলেছেন-
أَفْضَلُ الإِسْلَاِم أن تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ
‘‘ইসলামের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, খাদ্য প্রদান করা এবং পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’। বুখারী ও মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে, নাবী (ﷺ) বলেন-
خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، ثُمَّ قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئكَ مِنَ الْمَلائكَةِ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ، فَقَالَ: السَّلامُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السَّلامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الانَ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা যখন আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট গজ। অতঃপর তাঁকে বললেন- তুমি যাও এবং ঐ সমস্ত ফিরিস্তাদেরকে সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জবাবে যা বলে তা শুন। সেটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের পদ্ধতি। সুতরাং আদম (আঃ) তাদের নিকট গিয়ে বললেন- السلام عليكم))। ফিরিস্তাগণ জবাবে বললেন- আস্সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ। জবাবে তারা ‘রাহমাতুল্লাহ্’ বৃদ্ধি করলেন। যে ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবেন, সে আদমের আকার বিশিষ্ট হবেন। আদমের পর থেকে বনী আদমের দৈর্ঘ্য কমতে কমতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে’’। বুখারী ও মুসলিমে আরও এসেছে যে, তিনি সালামের প্রসার ঘটানোর আদেশ দিয়েছেন। আর যখন তারা সালামের প্রচলন ও প্রসার ঘটাবে তখন তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা তৈরি হবে। আর লোকেরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবেনা। আর পরস্পরের মাঝে ভালাবাসা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঈমানদার হতে পারবে না। ইমাম বুখারী স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বলেন- আম্মার (রাঃ) বলেছেন, তিনটি গুণ যে ব্যক্তি অর্জন করতে পেরেছে, সে ঈমানের গুণাবলী অর্জন করতে পেরেছে। নিজের উপর ইনসাফ করা, পৃথিবী বাসীর জন্য সালামের প্রসার ঘটানো এবং অভাবের সময় সম্পদ খরচ করা।
উপরোক্ত তিনটি কথা কল্যাণের সকল প্রকার মূলনীতি ও শাখাকে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। কেননা ইনসাফের দাবী হচ্ছে বান্দা আল্লাহর হকসমূহ পূর্ণ আকারে আদায় করবে, মানুষের হকও আদায় করবে এবং মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করবে যেমন ব্যবহার সে নিজের জন্য পছন্দ করে। নিজের নফসের উপর ইনসাফ করাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। নিজের জন্য এমন কিছু দাবী করবে না, যা তার মধ্যে নেই এবং অপকর্মের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে অপবিত্র করবে না।
সার কথা এই যে, বান্দা নফসের উপর ইনসাফ করার মাধ্যমেই আল্লাহর পরিচয়, আল্লাহর হক এবং বান্দা নিজের পরিচয় এবং তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। বান্দা যখন নিজের উপর ইনসাফ করবে এবং নিজের পরিচয় ও তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারবে তখন সে তার মালিক ও সৃষ্টিকর্তার অধিকার ও হকের মধ্যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেনা। আল্লাহ্ তাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তাতে নিজের জন্য বা অন্য কোন মাখলুকের (অলী-আওলীয়ার জন্য) কোন অংশ নির্ধারণের চেষ্টা করবেনা। নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য বাতিল করার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার দুঃসাহস দেখাবেনা অথবা নিজের উদ্দেশ্যকে স্রষ্টার উদ্দেশ্যের উপর প্রাধান্য দিবেনা। অর্থাৎ রুবুবীয়াত ও উলুহীয়াতের কোন বৈশিষ্টের দাবী করবেনা এবং যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা নিজের মধ্যে ও তার সৃষ্টিকর্তার মধ্যে বণ্টন করতে চাইবেনা। অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতের একাংশ বান্দাদের মধ্য হতে কোন বান্দার জন্য এবং আরেক অংশ আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করবে না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
وَجَعَلُوْا لِلهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالأنْعَامِ نَصِيبًا فَقَالُوا هَذَا لِلهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَذَا لِشُرَكَائِنَا فَمَا كَانَ لِشُرَكَائِهِمْ فَلا يَصِلُ إِلَى اللهِ وَمَا كَانَ لِلهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَى شُرَكَائِهِمْ سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ
‘‘আল্লাহ্ যেসব শস্যক্ষেত্র ও জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো থেকে তারা এক অংশ আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে। অতঃপর নিজ ধারণা অনুসারে বলে, এটা আল্লাহর জন্য এবং ওটা আমাদের অংশীদারদের জন্য। অতঃপর যে অংশ তাদের অংশীদারদের, তা তো আল্লাহর দিকে পৌঁছেনা এবং যা আল্লাহর, তা তাদের উপাস্যদের দিকে পৌঁছে যায়। তাদের বিচার (বণ্টন) কতইনা মন্দ’’। (সূরা আনআম-৬: ১৩৬)
বান্দার চিন্তা করা উচিৎ, সে যেন নিজের অজামেত্ম অসতর্কতা বশতঃ এই শ্রেণীর বণ্টনকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হয়। যারা অজ্ঞতা বশতঃ অন্যায়ভাবে আল্লাহ্ এবং কল্পিত ও বাতিল মাবুদের মধ্যে (ইবাদতের বিভিন্ন অংশ) ভাগ-বণ্টন করেছে। মানুষ কিভাবে সঠিক বণ্টন করবে? অথচ তাদেরকে জালেম ও মূর্খ করে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং যাদেরকে জালেম ও মূর্খ হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে ইনসাফের আসা করা যায় কিভাবে? যে ব্যক্তি মাখলুকের (নিজের উপর এবং আল্লাহর বান্দাদের উপর) ইনসাফ করতে পারেনা, স্রষ্টার সাথে কৃত আচরণে সে ইনসাফ করবে কিভাবে? (সুতরাং মুশরিকরা সবচেয়ে বড় জালেম সম্প্রদায়)। এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ্ তা‘আলা হাদীছে কুদসীতে বলেন-
يَا ابْنَ آدَمَ مَا تُنْصِفُنِي أَتَحَبَّبُ إِلَيْكَ بِالنِّعَمِ وَتَتْمَقَّتُ إِلَيَّ بِالْمَعَاصِي خَيْرِي إِلَيْكَ يَنْزِلُ وَشَرَّكَ إِلَيَّ صَاعِدٌ
হে বনী আদম! তুমি আমার প্রতি অবিচার করছ। নেয়ামত প্রদানের মাধ্যমে আমি তোমার প্রিয় হতে চাই, কিন্তু তুমি পাপাচারের মাধ্যমে আমার কাছে ঘৃণিত হিসাবে পরিগণিত হচ্ছ। আমার কল্যাণ তোমার কাছে যাচ্ছে, কিন্তু তোমার অকল্যাণ আমার কাছে আসছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন- হে বনী আদম! তুমি আমার সাথে ইনসাফ করনি। আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি। অথচ তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করছ। আমি তোমাকে রিযিক দেই। অথচ তুমি অন্যের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছ (আমার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করে মারাত্মক জুলুম করছ)।[1] যে ব্যক্তি নিজের উপর ইনসাফ করতে পারেনা, সে অপরের উপর কিভাবে ইনসাফ করবে? অনেকেই ভাবছে যে, সে নিজের উপর ও অন্যের উপর ইনসাফ করছে। মূলতঃ সে নিজের উপর এবং অন্যের উপর মারাত্মক জুলুম করছে।
সুতরাং আম্মার (রাঃ) এর কথাঃ যে ব্যক্তি তিনটি বিষয় অর্জন করতে পেরেছে, সে ঈমানের গুণাবলী অর্জন করতে পেরেছে। নিজের উপর ইনসাফ করা, পৃথিবীবাসীকে সালাম দেয়া এবং অভাবের সময় খরচ করা। এই কথাটি সকল প্রকার কল্যাণের মূল বিষয় ও শাখাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
যে ব্যক্তি পৃথিবী বাসীকে সালাম দেয় সে বিনয়ী-নম্র হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি মানুষকে সালাম দেয় সে কারও উপর অহংকার করেনা। বরং সে ছোট, বড়, উঁচু, নীচু, পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়। অহংকারী ব্যক্তি এর বিপরীত। সে অহংকারের কারণে সকলের সালামের উত্তরই দেয়না। সুতরাং সে কিভাবে মানুষের জন্য সালাম ব্যয় করবে?
একজন লোক অভাবে থাকা সত্ত্বেও তখনই অন্যের জন্য খরচ করতে পারে যখন সে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসাকারী হয়, তাঁর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী হয়, দানশীলতা, দয়া ও রহমতের গুণে গুণান্বিত হয় এবং যেই শয়তান তাকে ফকীর হয়ে যাওয়ার ভয় দেখায় ও পাপ কাজের আদেশ দেয় সেই শয়তানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।
নাবী (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একদা একদল বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন। তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একবার এক দল মহিলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের ইশারায় তাদেরকে সালাম দিলেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) আসমা বিনতে ইয়াজীদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (ﷺ) আমাদের এক দল মহিলার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন। তিরমিযীতেও তাই বর্ণিত হয়েছে। মূলতঃ উভয় বর্ণনাতে ঘটনা একটিই এবং নাবী (ﷺ) হাতের ইশারাতেই সালাম দিয়েছেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবীগণ জুমআর সলাত হতে ফেরার পথে একজন বৃদ্ধ মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তারা মহিলাটিকে সালাম দিতেন। সেই বৃদ্ধা তাদের জন্য খানা পেশ করতেন।
মহিলাদের সালাম দেয়ার ব্যাপারে এটিই সঠিক মাসআলা। বৃদ্ধা ও মাহরামদেরকে (যাদেরকে বিবাহ করা চিরতরে হারাম) সালাম দেয়া যাবে; অপরিচিত মহিলাদেরকে নয়।[2] সহীহ বুখারীতে আরও বর্ণিত হয়েছে, নাবী (ﷺ) বলেন-
يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ
‘‘ছোট বড়কে সালাম দিবে, পথচারী উপবিশষ্ট লোককে সালাম দিবে এবং কম সংখ্যক লোক বেশী সংখ্যক লোককে সালাম দিবে।’’[3] তিরমিযীতে এসেছে, পথচারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিবে। মুসনাদে বায্যারে বর্ণিত হয়েছে, পায়ে হেটে চলন্ত দু’জন ব্যক্তির মধ্য হতে যে আগে সালাম দিবে সেই উত্তম। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর সবচেয়ে অধিক নিকটবর্তী লোক হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।
কোন গোত্রের কাছে গিয়ে প্রথমেই সালাম দেয়া নাবী (ﷺ)-এর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি তাদের কাছ থেকে ফেরত আসার সময়ও সালাম দিতেন। তাঁর থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসবে সে যেন মজলিসে উপস্থিত লোকদেরকে সালাম দেয় এবং যখন সে দাঁড়াবে তখনও যেন সালাম দেয়। প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালামের চেয়ে অধিক হকদার নয়। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) নাবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের কেউ যখন তার সাথীর সঙ্গে দেখা করবে তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। একবার সালাম দেয়ার পর একটি গাছের বা দেয়ালের আড়ালে গিয়ে পুনরায় ফেরত এসে যদি সাক্ষাৎ করে তথাপিও যেন সালাম দেয়। আনাস (রাঃ) বলেন- রসূল (ﷺ)-এর সাহাবীগণ পথ চলতেন। তাদের সামনে কোন গাছ বা টিলা পড়লে তারা ডানে ও বামে আলাদা হয়ে যেতেন। কিন্তু তা পার হয়ে পুনরায় যখন তারা পরস্পর সামনাসামনি হতেন তখন তাদের একজন অন্যজনকে সালাম দিতেন।
নাবী (ﷺ)-এর পবিত্র সুন্নাত হচ্ছে, মসজিদে প্রবেশকারী প্রথমে দু’রাকআত সলাত (তাহিয়াতুল মসজিদ) পড়বে। অতঃপর উপস্থিত লোকদেরকে সালাম দিবে। এতে তাহিয়াতুল কাওমের পূর্বেই তাহিয়াতুল মসজিদ তথা উপস্থিত লোকদেরকে সম্মান করার পূর্বেই মসজিদের সম্মান করা হবে। কেননা সলাত হচ্ছে আল্লাহর হক। আর সালাম দেয়া মানুষের হক। এ ক্ষেত্রে বান্দার হকের উপর আল্লাহর হককে প্রাধান্য দিতে হবে। তবে আর্থিক হকের বিষয়টি আলাদা। অর্থাৎ বান্দার সম্পদের উপর যদি মানুষের হক ও আল্লাহর হক একত্রিত হয় তাহলে বান্দার হক প্রথমে পরিশোধ করতে হবে। কেননা তাতে ঝগড়া-বিবাদ হয়। আর এ ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজনের বিষয়টি দেখতে হবে। সেই সাথে দেখতে হবে মানুষের হক এবং আল্লাহর হক আদায় করার মত যথেষ্ট মাল আছে কি না? যদি উভয় হক আদায় করার মত সম্পদ না থাকে তাহলে মানুষের হকই আদায় করতে হবে।
নাবী (ﷺ)-এর যামানায় লোকদের অভ্যাস এ রকম ছিল যে, তাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকআত সলাত পড়ত। অতঃপর অগ্রসর হয়ে নাবী (ﷺ) কে সালাম দিত। সুতরাং মসজিদে লোকজন থাকলে তাতে প্রবেশকারী ধারাবাহিকভাবে তিনটি কাজ করবেঃ
প্রথমে ডান ‘পা’ রেখে বিসমিল্লাহ্ ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রসূূলিল্লাহ্ বলবে। ২) অতঃপর দু’রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ সলাত পড়বে। ৩) অতঃপর উপস্থিত লোকদেরকে সালাম দিবে। নাবী (ﷺ) যখন রাত্রে ঘরে প্রবেশ করতেন তখন এমনভাবে সালাম দিতেন, যাতে ঘরে ঘুমন্ত লোকদের নিদ্রার কোন ব্যঘাত না ঘটে। শুধু জাগ্রত লোকদেরকেই সালাম শুনাতেন। ইমাম মুসলিম এ রকমই উল্লেখ করেছেন। ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেনঃ السلام قبل الكلام অর্থাৎ কথা বলার পূর্বেই সালাম দিতে হবে।[4] ইমাম আহমাদ আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, কেউ কারও নিকট কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বে সালাম দিতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাম না দিয়ে তোমাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তোমরা তার কথার উত্তর দিবেনা।[5] তিনি যখন কারও ঘরের দরজার সামনে যেতেন তখন দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন না। বরং ডান দিকে কিংবা বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর বলতেন- السلام عليكم । যাকে সামনে পেতেন তাকে তিনি নিজেই সালাম দিতেন এবং অনুপস্থিত লোকদের জন্য তিনি সালাম পাঠিয়ে দিতেন। তিনি অন্যের সালামও বহন করতেন এবং পৌঁছিয়ে দিতেন। যেমন তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে খাদীজার কাছে সালাম পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তিনি আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাঃ) কে বলেছিলেন- এই তো জিবরীল ফিরিস্তা আগমণ করেছেন। তিনি তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তাঁর পবিত্র সুন্নাত এই ছিল যে, তিনি সালাম দেয়ার সময় ওয়া বারাকাতুহু পর্যন্ত বলতেন। অর্থাৎ এভাবে বলতেন যে, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته। ইমাম নাসাঈ নাবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন লোক এসে বলল- আস্ সালামু আলাইকুম। নাবী (ﷺ) উত্তর দিলেন এবং বললেন- সে দশটি নেকী পেয়েছে। অতঃপর সেই লোকটি বসল। দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি এসে বলল- আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তিনি জবাব দিলেন এবং বললেন- সে বিশটি নেকী পেয়েছে। তৃতীয় আরেকজন এসে বলল- আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। এবার তিনি বললেন- এই ব্যক্তি ত্রিশটি নেকী পেয়েছে।
ইমাম বুখারী (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনবার সালাম দেয়া রসূল (ﷺ) এর পবিত্র সুন্নাত ছিল। সম্ভবতঃ তিনি ঐ সময় এ রকম করতেন যখন লোক সংখ্যা অধিক হত এবং প্রথমবার সকলের কাছে সালামের আওয়াজ পৌঁছত না। তিনি যখন মনে করতেন যে, প্রথমবার এবং দ্বিতীয়বারেও আওয়াজ পৌঁছেনি তখন তিনি তৃতীয়বার সালাম দিতেন। যে ব্যক্তি তাঁর সুন্নাতগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে সে বুঝতে পারবে যে, বিশেষ কোন কারণেই তিনি একাধিকবার সালাম দিতেন।
নাবী (ﷺ) লোকদের সাথে সাক্ষাতের সময় প্রথমেই সালাম দিতেন। কেউ তাকে আগেই সালাম দিয়ে ফেললে তিনি অনুরূপ বাক্য দিয়ে অথবা তার চেয়ে উত্তম বাক্য দিয়ে দ্রুত উত্তর দিতেন। আর কোন কারণ যেমন পেশাব-পায়খানা বা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকলে উত্তর দিতে দেরী করতেন। তিনি হাতের ইশারায় সালামের জবাব দিতেন না। মাথা ঝুকিয়েও না এবং আঙ্গুলের ইশারাতেও না। তবে সলাতরত অবস্থায় কেউ সালাম দিলে তিনি ইঙ্গিতের মাধ্যমে জবাব দিতেন।
প্রথমে সালাম দিলে তিনি আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলতেন। যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দিবে তার জন্য তিনিعليك السلام বলা অপছন্দ করেছেন। মুসলিমদের সালামের জবাবে তিনি وعليكم السلام বলতেন। ওয়া ((وَ বাদ দিয়ে শুধু عليكم السلام বললে ফরয আদায় হবেনা বলে এক দল লোক মত প্রকাশ করেছেন। কেননা এ রকমভাবে জবাব দেয়া সুন্নাত বিরোধী। কেননা এতে জানা যাবেনা যে, সে সালাম দিল? না সালামের উত্তর দিল? অন্য এক দল আলেম মনে করেন, عليكم السلام বলে জবাব দিলেও সঠিক হবে। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) থেকে এ রকমই বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর বাণীঃ
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ إِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلامًا قَالَ سَلامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ
‘‘হে আল্লাহর রসূল! তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে? যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন: সালাম, তখন তিনি বললেন- সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক’’- এর দ্বারা তিনি দলীল গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ سلام عليكم তোমাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। কিন্তু ওয়া (وَ) বাদ দেয়ার কারণ হচ্ছে, বাক্যের শুরুতেই এখানে কিছু বিষয় উহ্য রয়েছে। তাই এখানেও তা উহ্য করা হয়েছে। ইমাম শাফেঈর মতের সমর্থনে আদম (আঃ)-এর সালামে ফেরশতাদের জবাবকে দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। সেখানে ওয়াও ছিলনা।
[2]. আল্লামা আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ) বলেনঃ অপরিচিত মহিলাকে সালাম দেয়াতে কোন দোষ নেই। কেননা নারী-পুরুষ এবং ছোট-বড় সকলকে সালাম দেয়া সুন্নাত। মহিলাকে যদি সালাম দেয়া হয় কিংবা মহিলা যদি পুরুষকে সালাম দেয় এবং এতে যদি কোন ফিতনার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে মহিলার সাথে সালাম বিনিময় করাতে কোন অসুবিধা নেই। পথ চলার সময় বেপর্দা কোন মহিলা দেখলে উপদেশ দিবে এবং হিজাব পরতে বলবে। মহিলা যদি একা থাকে তাহলে তার সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না। তার পাশ দিয়ে যাবে এবং সালাম দিবে। তার সাথে বসবে না এবং তার সাথে দাঁড়িয়েও থাকবে না। শুধু সালাম দিবে এবং চলে যাবে।
[3]. বুখারী তাও. হা/৬২৩১, আবু দাউদ, আলএ. হা/৫১৯৮, সহীহ আত-তিরমিযী, মাপ্র. হা/২৭০৪, মিশকাত, হাএ. হা/৪৬৩৩
[4]. তবে এই হাদীসটি সহীহ নয়। ইমাম আলবানী রহঃ) এটিকে মাওযুআতে উল্লেখ করেছেন, সিলসিলা আহাদিসুস যঈফা হা/১৭৩৬
[5]. ইমাম আলবানী রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। উক্ত প্রসঙ্গটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উদাহরণ। যা হচ্ছে হাদীসের বক্তব্য কিভাবে সঠিক হয়? এ প্রশ্নের জবাব এখানে রয়েছে। যেহেতু ইতিপূর্বের হাদীছ ও বক্ষমান বক্তব্য একই অথচ পূর্বের হাদীছ সনদের দিক থেকে জাল কিন্তু আলোচ্য হাদীছ সহীহ। ফলে এরই ভিত্তিতে বলা হবে উপরোক্ত হাদীছ সাব্যস্ত নয়। তবে তার বক্তব্য সুসাব্যস্ত।