কুরবানীর ক্ষেত্রে তাঁর পবিত্র সুন্নাত হল, তিনি কখনও এই সুন্নাতটি ছাড়েন নি। তিনি ঈদের দিন ঈদের সলাতের পর দু’টি করে মেষ কুরবানী করতেন। তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পূর্বে জবাই করবে তার কুরবানী ইবাদত হিসেবে গণ্য হবেনা। এটি হবে মাংস খাওয়ার যবেহ, যা সে তার পরিবারের লোকদেরকে খাওয়াতে চেয়েছে। এটিই হচ্ছে নাবী (ﷺ)-এর পবিত্র সুন্নাত। সলাতের সময় হওয়া যথেষ্ট নয়; বরং আগে সলাত পড়তে হবে, তারপর কুরবানীর জন্তু যবেহ করতে হবে। ছয় মাস বয়সের ভেড়া কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। অন্যান্য পশুর ক্ষেত্রে দাঁত ওয়ালা হওয়া জরুরী। অর্থাৎ ছাগল এক বছর, গরু দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হওয়া জরুরী। নাবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আইয়্যামে তাশরীকের সকল দিনই পশু যবেহ করার সময়। তবে এই হাদীছের সনদ মুনকাতে (বিচ্ছিন্ন)। এটিই ইমাম আতা, হাসান বসরী এবং ইমাম শাফেঈ (রহঃ)এর অভিমত। ইবনুল মুনযির (রহঃ)এর মতও তাই।
কুরবানীর জন্য সবচেয়ে উত্তম এবং সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত পশু নির্বাচন নাবী (ﷺ) এর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ভাঙ্গা শিং এবং কাটা কান বিশিষ্ট পশু দিয়ে কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। কান যদি অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশী কাটা থাকে এবং শিং যদি অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশী ভাঙ্গা থাকে তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা নিষিদ্ধ। ইমাম আবু দাউদ স্বীয় সুনানে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। নাবী (ﷺ) কুরবানীর পশু সংগ্রহ করার সময় চোখ ও কান ভাল করে দেখে নিতে বলেছেন। সুতরাং কানের অগ্রভাগ কাটা বা গোড়ার দিক কাটা এবং লম্বাভাবে চিরা-ছেড়া-ফাটা কান ওয়ালা পশু দ্বারা কুরবানী করা জয়েয নয়।
ঈদগাহে কুরবানী করা তাঁর পবিত্র সুন্নাত ছিল। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) জাবের (রাঃ) হতে উল্লেখ করেছেন যে, নাবী (ﷺ) কুরবানীর দিন শিং ওয়ালা এবং খুব সুন্দর রং বিশিষ্ট দু’টি খাসী যবেহ করেছেন। খাসী দু’টিকে শায়িত করে তিনি এই দু’আ পাঠ করেছেনঃ
إِنِّى وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِى فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ بِاسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ
‘‘হে আল্লাহ্! আমি একমুখী হয়ে স্বীয় মুখমণ্ডল ঐ সত্তার দিকে ফিরাচ্ছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সলাত, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তার কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। হে আল্লাহ্! এটি তোমার পক্ষ হতে প্রাপ্ত এবং এই কুরবানী তোমার জন্যই। অর্থাৎ তোমার নৈকট্য লাভের জন্যই। এটি মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ হতে। তুমি এটিকে কবুল কর। অতঃপর বিসমিল্লাহ্ আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করেছেন। তিনি পশু যবেহ করার সময় মানুষকে পশুর উপর ইহসান করতে বলেছেন। অর্থাৎ ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে এবং এক আঘাতে যবেহ করবে। এতে পশুর কষ্ট কম অনুভব হবে। এমনিভাবে কাউকে কেসাস স্বরূপ হত্যা করলে উত্তমভাবে হত্যা করতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক বস্ত্তর উপর রহম (দয়া) করা ফরয করেছেন। আর কুরবানীতে একজন কিংবা একটি পরিবারের পক্ষ হতে একটি ছাগল যথেষ্ট।