অতঃপর তিনি মুযদালাফায় এসে সলাতের ওযূ করলেন। তাঁর আদেশক্রমে মুআযযিন আযান দিলেন অতঃপর ইকামত দিলেন। লোকেরা বাহন থেকে মাল-পত্র নামালো এবং বাহনগুলো বসানোর পূর্বেই তিনি মাগরিবের সলাত পড়লেন। তারপর যখন লোকেরা বাহন থেকে মাল-পত্র নামাল তখন তিনি ইশার সলাতের ইকামত দিতে বললেন। অতঃপর তিনি আযান ছাড়াই শুধু একামতের মাধ্যমে ইশার সলাত আদায় করলেন। ইশা ও মাগরিবের সলাতের মাঝখানে অন্য কোন সলাত পড়েন নি। অতঃপর তিনি ফজরের পূর্ব পর্যন্ত ঘুমালেন। সেই রাত্রে তিনি তাহাজ্জুদ পড়েন নি। ঈদাইনের রাতেও তিনি তাহাজ্জুদ পড়তেন বলে প্রমাণিত নেই। মুযদালিফার রাত্রে তিনি তাঁর পরিবারের দুর্বল সদস্যদেরকে ফজর হওয়ার পূর্বে এবং চন্দ্র ডুবে যাওয়ার সময় (অর্ধরাত পার হওয়ার পর) মিনার দিকে অগ্রসর হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি মুসলিমদেরকে আদেশ দিলেন যে, তারা যেন সূর্য উদয়ের পূর্বে (জামরায়ে কুবরায়) পাথর নিক্ষেপ না করে।
আর যেই হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, উম্মে সালামা ফজরের পূর্বেই পাথর নিক্ষেপ করেছেন, তা মুনকার হাদীস। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল এবং অন্যরা এই হাদীসকে মুনকার বলেছেন। অতঃপর তিনি সাওদা (রাঃ) এর হাদীস এবং অন্যান্য হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন- আমরা অনুসন্ধান করে এই হাদীসগুলোর মধ্যে কোন প্রকার পারস্পরিক বিরোধিতা পাইনি। তিনি শিশুদেরকে ফজরের পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা সময় হওয়ার পূর্বে তাদের পাথর নিক্ষেপ করার কোন ওযূহাত নেই। আর সূর্য উঠার পর ভীড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ও পুরুষদের ভীড়ের মধ্যে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই তিনি মহিলাদেরকে ফজরের পূর্বেই পাথর মারার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
সহীহ হাদীস দ্বারা এটিই প্রমাণিত। অতি বৃদ্ধ ও অসুস্থ হলে ফজরের পূর্বেই ১০ তারিখের পাথর মারা জায়েয আছে। সক্ষম ও সুস্থ হলে তার জন্য এটি জায়েয নয়। আর সহীহ হাদীস যা প্রমাণ করে তা হচ্ছে, তিনি চন্দ্র ডুবে যাওয়ার পরপরই মহিলাদেরকে রওয়ানা দিতে বলেছেন; অর্ধেক রাতের পর নয়। যারা অর্ধেক রাত চলে যাওয়ার পর রওয়ানা হওয়ার কথা বলেছেন, তাদের কথার পক্ষে কোন দলীল নেই।
অতঃপর মুযদালিফায় রাত্রি যাপন কালে যখন ফজর উদিত হল তখন তিনি আযান ও ইকামত দিয়ে প্রথম ওয়াক্তেই ফজরের সলাত আদায় করলেন; সময় হওয়ার পূর্বে নয়। সলাত শেষে বাহনে আরোহন করে মাশআরে হারামের নিকট (বর্তমানে এখানে একটি বিশাল মসজিদ রয়েছে) এসে কিবলামুখী হয়ে দু’আ শুরু করলেন। এখানে তিনি সূর্য ভালভাবে প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দু’আয় কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করলেন, তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করলেন এবং আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকলেন। তিনি মুযদালিফার একটি স্থানে অবস্থান করেছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিলেন যে, মুযদালিফার সকল স্থানই হাজীদের অবস্থানের জায়গা। অতঃপর তিনি ফযল বিন আব্বাসকে পিছনে বসালেন এবং তালবীয়া পাঠ করতে করতে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। এবার উসামা পায়ে হেঁটে কুরাইশদের দলের সাথে চলতে লাগলেন।
এবার চলার পথে তিনি আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে জামরায়ে কুবরায় নিক্ষেপ করার জন্য সাতটি পাথর সংগ্রহ করার আদেশ দিলেন। মুযদালিফায় রাত্রি যাপন কালে পাহাড় থেকে পাথর ভেঙ্গে কিংবা রাতের বেলায় কুড়িয়ে তা সংগ্রহ করেন নি; যেমন করে থাকে অজ্ঞ লোকেরা। সুতরাং ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁর হুকুমে সাতটি ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করলেন। হাতে নিয়ে তিনি এগুলো থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ এ রকম পাথর দিয়ে নিক্ষেপ কর। আর তোমরা দ্বীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান থাকবে কেননা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণেই তোমাদের পূর্বের লোকেরা ধ্বংস হয়েছে।