তিনি একাধারে এত বেশী নফল সিয়াম রাখতেন, যাতে বলা হত, তিনি আর কখনও সিয়াম ছাড়বেন না। আর যখন সিয়াম রাখা ছেড়ে দিতেন, তখন এমন বলা হত যে তিনি আর নফল সিয়াম রাখবেনই না। রমযান মাস ব্যতীত তিনি আর কোন পূর্ণমাস সিয়াম রাখেন নি। তিনি শাবান মাসের চেয়ে অধিক নফল সিয়াম অন্য কোন মাসে রাখেন নি। এ ছাড়া এমন কোন মাস তিনি পার করেন নি, যাতে তিনি নফল সিয়াম রাখেন নি। তিনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন নফল সিয়ামর প্রতি খুবই যত্নশীল ছিলেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- রসূল (ﷺ) আইয়্যামে বীযের (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের) সিয়াম কখনই ছাড়েন নি। তিনি এই তিন দিন সিয়াম রাখার প্রতি উৎসাহও দিতেন। ইমাম নাসাঈ এরূপই বর্ণনা করেছেন। যুল-হাজ্জ মাসের প্রথম নয় দিন সিয়াম রাখার ব্যাপারে নাবী (ﷺ) থেকে মতভেদ রয়েছে।[1] শাওয়াল মাসের ছয় সিয়াম সম্পর্কে সহীহ সূত্রে তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন- শাওয়ালের ছয় সিয়াম রামাযানের সিয়ামর সাথে এক বছরের সিয়ামর সমান। আশুরার সিয়াম সম্পর্কে কথা হচ্ছে তিনি সকল নফল সিয়ামর মধ্যে আশুরার সিয়ামর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতেন। তিনি যখন মদ্বীনায় আসলেন তখন দেখলেন ইহুদীরা আশুরার সিয়াম রাখছে। তিনি এই দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল- এ দিন আল্লাহ্ তা‘আলা ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করেছেন এবং মুসা (আঃ) ও তাঁর সাথীদেরকে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। তখন তিনি বললেন- আমরা তোমাদের চেয়ে মুসার অনুসরণ করার অধিক হকদার। সুতরাং তিনি সিয়াম রেখেছেন এবং তাঁর সাহাবীদেরকেও সিয়াম রাখার আদেশ দিয়েছেন। আর এটি ছিল রামাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বের ঘটনা। যখন রামাযানের সিয়াম ফরয করা হল তখন তিনি বললেন- যার মন চায় সে যেন এই দিন সিয়াম রাখে আর যার মন চায়না সে যেন না রাখে। আরাফার দিন আরাফায় অবস্থান কালে রোযা রাখা তাঁর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে সহীহ সূত্রে অনুরূপই বর্ণিত হয়েছে। সুনান গ্রন্থকারগণ বর্ণনা করেছেন যে, নাবী (ﷺ) আরাফায় অবস্থানকারীদেরকে (হাজীদেরকে) আরাফা দিবসে সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। তাঁর থেকে সহীহ সূত্রে আরও বর্ণিত হয়েছে যে,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ
আরাফা দিবসের সিয়াম পূর্বের ও পরের এক বছরের গুনাহ্ সমূহকে মোচন করে দেয়।[2] সারা বছর একটানা সিয়াম রাখা নাবী (ﷺ) এর সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। তিনি বলেন- যে ব্যক্তি সর্বদা রোযা রাখল সে মূলতঃ সিয়াম রাখেও নি এবং সিয়াম ছাড়েও নি; বরং সে রসূল (ﷺ) এর পবিত্র সুন্নাতের বিরোধীতা করেছে। তিনি অধিকাংশ সময় সকাল বেলা ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রীদের কাছে জিজ্ঞেস করতেনঃ তোমাদের কাছে খাবার কিছু আছে কি? না সূচক উত্তর আসলে তিনি বলতেন- তাহলে আমি সিয়াম রেখে দিলাম। তিনি কখনও নফল সিয়ামর নিয়ত করতেন। অতঃপর তা ছেড়ে দিতেন। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে হাদীছে তিনি আয়িশা ও হাফসা (রাঃ) কে বলেছেন যে, তোমরা নফল সিয়ামর কাযা কর, তা মালুল তথা যঈফ হাদীস।
সিয়াম অবস্থায় কোন কোন গোত্রের কাছে গেলে তিনি সিয়াম পূর্ণ করতেন। যেমনটি তিনি করেছিলেন উম্মে সুলাইমের কাছে প্রবেশ করার সময়। উম্মে সুলাইম তাঁর আহলে বাইতের (পরিবারের) পদমর্যাদায় ছিলেন। সহীহ বুখারীতে আরও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- তোমাদের কাউকে যখন খানা গ্রহণ করার জন্য ডাকা হয় এবং যাকে ডাকা হল সে যদি সায়িম হয় তখন সে যেন বলে আমি সায়িম। তার পবিত্র সুন্নাতে নির্দিষ্ট করে জুমআর দিন সিয়াম রাখাকে মাকরূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং এই দিনগুলোতে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। নাবী সাঃ) নির্দিষ্ট কোন আমলকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন নি। এতে বুঝা যায় যুল হাজ্জ মাসের প্রথম নয় দিন সিয়াম রাখাও মুস্তাহাব। আলেমদের থেকে এ ধরণের কথাই বর্ণিত হয়েছে।
তবে নাবী সাঃ) থেকে প্রথম দশকে সিয়াম রাখার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আয়েশা বলেন- নাবী সাঃ) এই দশ দিন সিয়াম রাখেন নি। অপর পক্ষে হাফসা এর বর্ণনায় সিয়াম রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদীছ সনদের দিক দিয়ে অধিক শক্তিশালী। তা ছাড়া নাবী সাঃ) থেকে এই নয় দিন সিয়াম রাখার ব্যাপারে আলাদাভাবে সহীহ কোন হাদীছ না থাকলেও তাতে সিয়াম রাখা মুস্তাহাব হওয়ার পরিপন্থী নয়। কেননা সাধারণ ভাবে তাতে নফল ইবাদতের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর সিয়াম একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। (আল্লাহই ভাল জানেন)
[2]. মুসলিম মাশ হা/২৮০৩, আবু দাউদ, আলএ. হা/২৪২৫ নাসায়ী, মাপ্র. হা/,সহীহ আত-তিরমিযী, মাপ্র.৭৪৯