তিনি যদি কোন লোকের অবস্থা থেকে জানতে পারতেন যে সে যাকাতের হকদার তাহলে তিনি তাকে যাকাত থেকে দান করতেন। আর এমন কোন লোক যদি যাকাতের মাল চাইত যার অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় নি যে সে যাকাতের হকদার কি না, তাহলে তাকেও তিনি দিতেন। তবে এরূপ ক্ষেত্রে তিনি বলে দিতেন যে, ধনী এবং উপার্জন সক্ষম শক্তিশালী যুবকের জন্য যাকাতের কোন অংশ নেই। তাঁর পবিত্র সুন্নাত এই ছিল যে, যেই এলাকার ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করা হত সেই এলাকার হকদারদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হত। বন্টনের পর যা অতিরিক্ত হত তা তাঁর নিকট পাঠিয়ে দেয়া হত। তিনি তা বণ্টন করতেন। এ জন্যই তিনি যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারীদেরকে গ্রামাঞ্চলে পাঠাতেন; শহরে পাঠাতেন না। বরং মুআয (রাঃ) কে ইয়ামানের ধনী লোকদের থেকে যাকাত আদায় করে সেখানকার ফকীরদের মধ্যে বিতরণ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি চতুষ্পদ জন্তু, শস্যদানা এবং ফলের মধ্য থেকে কেবল প্রকাশ্য মালের মালিকদের নিকটেই কর্মচারীদেরকে পাঠাতেন। তিনি খেজুর ও আঙ্গুরের মালিকদের কাছে কেবল অনুমানে পারদর্শী লোকদেরকেই পাঠাতেন। তারা খেজুরের বাগানের মালিকের খেজুর এবং আঙ্গুরের বাগানের মালিকের আঙ্গুর অনুমান করে যাকাত নির্ধারণ করতেন। তারা অনুমান করে দেখত বাগানে কত ওয়াস্ক ফল হতে পারে। সেই অনুপাতে তারা যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করত।
তিনি অনুমানকারীদেরকে আদেশ দিতেন তারা যেন বাগানের এক তৃতীয়াংশের খেজুর অনুমান না করেই ছেড়ে দেয়। কারণ খেজুরের বাগান বিভিন্ন প্রতিকুল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ নয়। অনুমান করার কারণ এই যে, যাতে বাগান থেকে ফল উঠানো এবং তা থেকে কিছু খেয়ে ফেলার আগেই জানতে পারা যায় যে তাতে কি পরিমাণ যাকাত আবশ্যক ছিল। ফল গাছে থাকতেই অনুমান করার আরেকটি লাভ হল তাতে বাগানের মালিক পরে ইচ্ছামত তার বাগানের ফলে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এবং ফল উঠানোর সময় যাকাত উসুলকারীদের অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
হোড়ার যাকাত আদায় করা তাঁর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। এমনিভাবে ক্রীতদাস, খচ্চর, গাধা, শাক-সব্জি, তরমুজ এবং ঐ সমস্ত ফলের উপরও যাকাত নির্ধারণ করেন নি, যা ওজন করা হয়না ও গোদামজাত করে দীর্ঘ দিন রাখা যায়না। তবে আঙ্গুর ও কাঁচা খেজুরের কথা ভিন্ন। তিনি কাঁচা খেজুর ও শুকনো খেজুরের মাঝে কোন পার্থক্য করেন নি। কোন লোক যাকাতের মাল নিয়ে আসলে রসূল (ﷺ) তার জন্য দু’আ করতেন। কখনও তিনি বলতেন-
اللّٰهُمَّ بَارِكْ فِيْهِ وَفِيْ إِبِلِهِ
‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাঁর মধ্যে এবং তাঁর উটের মধ্যে বরকত দান করো’’।[1]
আবার কখনও তিনি বলতে-اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাঁর উপর রহমত নাযিল করো’’।[2]
শুধু ভাল সম্পদগুলো বাছাই করে নিয়ে নেওয়া তাঁর নিয়ম ছিলনা। বরং মধ্যম মানের সম্পদগুলো গ্রহণ করতেন। তিনি দানকারীকে দানের সম্পদ ক্রয় করতে নিষেধ করতেন। কোন গরীব লোককে সাদকাহ করা হলে সেই গরীব লোক যদি ধনী লোককে হাদীয়া স্বরূপ সেখান থেকে কিছু দান করে তাহলে ধনীর জন্য তা ভক্ষণ করার অনুমতি দিয়েছেন। কখনও কখনও তিনি যাকাতের মাল থেকে ঋণ নিয়ে মুসলিমদের স্বার্থে (রাষ্ট্রীয় কাজে) ব্যয় করতেন। তিনি নিজ হাতে যাকাতের উটগুলো চিহ্নিত করতেন। প্রয়োজন পড়লে তিনি ধনীদের থেকে অগ্রীম যাকাত আদায় করতেন। যেমন তিনি তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ) থেকে দুই বছরের যাকাত অগ্রীম নিয়েছিলেন।
নাবী (ﷺ) প্রত্যেক ব্যক্তি ও তার প্রতিপালনাধীন ছোট-বড় সকলের উপর ফিতরা ফরয করেছেন। এর পরিমাণ হচ্ছে এক ‘সা’। চাই তা খেজুর হোক কিংবা যব হোক বা পনির কিংবা কিসমিস হোক। এক সা আটার কথাও তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় উপরোক্ত বস্ত্তগুলোর এক সা-এর বদলে গমের অর্ধ ‘সা’ দেয়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে। সুনানে আবু দাউদে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে।[3] বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বর্ণনা থেকে জানা যায় আমীর মুআবীয়াই মূল্যের দিকে খেয়াল রেখে আধা ‘সা’ পরিমাণ ফিতরা দেয়ার ফায়সালা দিয়েছেন।
ঈদের সলাতের পূর্বেই ফিতরা আদায় করা তাঁর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল (ﷺ) ঈদের সলাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই ফিতরা আদায় করার আদেশ করেছেন।
সুনানের কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পূর্বে ফিতরা আদায় করবে তা ফিতরা হিসাবে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করবে তা সাধারণ সাদকাহ হিসাবে গণ্য হবে।
উপরোক্ত উভয় হাদীছের দাবী হচ্ছে ঈদের সলাতের পরে সাদকায়ে ফিতরা আদায় করলে তা জায়েয হবে না। ঈদের সলাত আদায়ের সাথে সাথেই এর সময় শেষ হয়ে যায়। এটিই সঠিক অভিমত। এটি ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর পশু যবেহ করার মতই। ঈদুল আযহার সলাতের পূর্বে কুরবানীর পশু যবেহ করলে তা কুরবানী হিসাবে কবুল হবেনা। সলাতের সময় হলেই যবেহ করা যাবেনা। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পূর্বেই কুরবানীর পশু যবেহ করবে তা মাংস খাওয়ার যবেহ হিসাবে গণ্য হবে।
নাবী (ﷺ) এর পবিত্র সুন্নাত ছিল যে, তিনি কেবল ফকীর- মিসকীনদেরকেই সাদকায়ে ফিতর দান করতেন। আট প্রকারের খাতের মধ্য হতে তাদের ব্যতীত অন্য কাউকে তিনি তা থেকে দান করতেন না। তাঁর পরে সাহাবী ও তাবেয়ীগণও তা করেননি।
[2]. বুখারী, তাও. হা/৬৩৫৯,
[3]. আধা ‘সা’ ফিতরা দেয়ার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে তার সবই কোন কোন সাহাবীর ইজতেহাদ মাত্র। এ ব্যাপারে রসূল সাঃ) থেকে কোন সহীহ মারফু হাদীছ নেই। (অনুবাদক)