তিনি প্রত্যেক বছর মাত্র একবার যাকাত দেয়া আবশ্যক করেছেন। প্রত্যেক বছর ফল ও ফসল পরিপূর্ণরূপে পাকা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছেন। এটি একটি অসাধারণ ও অদ্বিতীয় ন্যায় সংগত ব্যবস্থা। কেননা প্রত্যেক মাসে বা সপ্তাহে একবার ফরয করা হলে ধনীদের কষ্ট ও ক্ষতি হত। আর জীবনে একবার ফরয করা হলে দরিদ্রদের হক নষ্ট হত।
সম্পদ উপার্জনে কষ্ট করা বা বিনা কষ্টে তা অর্জিত হওয়ার প্রতি দৃষ্টি রেখে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণে কমবেশী করেছেন। সুতরাং কোন পরিশ্রম ছাড়াই মানুষ যমীনের নীচে যে সমস্ত সম্পদ পেয়ে যায় তাতে তিনি পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরয করেছেন। আর এতে এক বছর পার হওয়াও শর্ত নয়। বরং যখনই পাবে তখনই আদায় করতে হবে। আর যা এর চেয়ে একটু বেশী কষ্ট করে উপার্জন করতে হয় তাতে তিনি তার অর্ধেক তথা দশভাগের এক ভাগ ফরয করেছেন।
সেটি হচ্ছে ঐ সমস্ত ফসলের মধ্যে, যা মানুষেরা চাষ করে আর আল্লাহ্ তা‘আলা তাতে পানি দান করেন। পানি সেচের বিষয়ে বান্দার কোন প্রকার কষ্ট করতে হয় না।
আর বান্দা কষ্ট করে নিজ খরচে পানি সেচ দিয়ে এবং অন্যান্য খরচ করে চাষাবাদের মাধ্যমে যে ফসল উৎপাদন করে তাতে তিনি ২০ ভাগের এক ভাগ ফরয করেছেন।
আর মালিকের বিরামহীন পরিশ্রম ছাড়া যে সম্পদ বৃদ্ধি হয়না, চাই সেই পরিশ্রম ভ্রমণের মাধ্যমে হোক বা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হোক, তাতে ৪০ ভাগের এক ভাগ ফরয করেছেন। যেমন স্বর্ণ-রোপ্য, নগদ টাকা ও ব্যবসায়িক পণ্যদ্রব্য।
আর যেহেতু একজন ব্যক্তির হাতে যে পরিমাণ মাল থাকে তার পূর্ণটাই দান করে সহমর্মিতা প্রকাশ করা সম্ভব নয় এবং প্রত্যেক প্রকার সম্পদ দিয়েও যেহেতু তা করা অসম্ভব তাই যে সমস্ত সম্পদের মাধ্যমে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা করা সম্ভব তাতে নির্দিষ্ট একটি নিসাব (পরিমাণ) নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাতে ধনীদের কোন ক্ষতি না হয় এবং গরীবদেরও উপকার হয়। সুতরাং রূপার নিসাব হচ্ছে দুইশত দিরহাম। দুই শত দিরহাম (৫৯০ গ্রাম) হলে এবং তার উপর দিয়ে এক বছর অতিক্রম করলে যাকাত দিতে হবে। স্বর্ণের নিসাব হচ্ছে বিশ মিছকাল ((সাড়ে সাত ভরি (৮৫ গ্রাম))। শস্যদানা ও ফলের নিসাব হচ্ছে পাঁচ ওয়াসাক। ছাগলের নিসাব হচ্ছে ৪০টি। গরুর নিসাব হচ্ছে ৩০টি। উটের পাঁচটি। তবে উটের এই নিসাবের অন্তর্ভুক্ত তথা উট দিয়ে যেহেতু সহমর্মিতা ও সাহায্য করা সম্ভব নয়, তাই এতে একটি ছাগল দেয়া আবশ্যক। তবে উট যখন পঁচিশটিতে উপনীত হবে তখন নিসাবের অন্তুর্ভূক্ত একটি উট দিয়ে যাকাত বের করা সম্ভব। সুতরাং উট যদি পঁচিশটি হয় তাহলে দুই বছর বয়সে পদার্পনকারী একটি মাদী উট দিতে হবে। ৩৬টি হতে পয়ঁতাল্লিশটি পর্যন্ত তিন বছর বয়সে পদার্পনকারী একটি উটনী দিতে হবে। ৪৬ থেকে ৬০ পর্যন্ত ৪ বছর বয়সে পদার্পনকারী একটি উটনী দিতে হবে। ৬১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত চার বছর বয়স পূর্ণকারী একটি উটনী দিতে হবে। ৭৬ থেকে ৯০ পর্যন্ত ৫ বছর পূর্ণকারী দু’টি উটনী দিতে হবে। আর উটের সংখ্যা যখন ১২০ এর বেশী হবে তখন প্রত্যেক চল্লিশটিতে দুই বছরের একটি করে বাছুর উটনী দিতে হবে।
সুতরাং পবিত্র শরীয়ত মালদার ও ফকীর-মিসকীন উভয় শ্রেণীর মানুষের স্বার্থের প্রতিই খেয়াল রেখেছে। যাতে ধনীদের কোন ক্ষতি না হয় এবং গরীবদেরও সহযোগিতা হয় এই দিকটির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা না করা হলে উভয় শ্রেনীর লোকের পক্ষ হতে জুলুমের আশঙ্কা ছিল। ধনী লোকের উপর সাধ্যাতিত কিছু ওয়াজিব করলে তা না দিয়ে তারা জুলুম করত আর যাকাত উসুলকারীরাও তাদের প্রাপ্যের অধিক দাবী করেও জুুলুম করত। আর উভয় শ্রেণীর লোকদের জুুলুমের ক্ষতিকর ফলাফল গরীবদেরকেই ভোগ করতে হত।
আল্লাহ্ তা‘আলা নিজেই যাকাত বন্টনের ব্যবস্থা করেছেন এবং আট শ্রেণীর লোকদের মাঝে তা ভাগ করে দিয়েছেন। এই আট শ্রেণীর লোককে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
(ক) এক প্রকার লোক হচ্ছে যারা নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যাকাত গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং তারা অভাবের প্রকটতা বা দুর্বলতা এবং আধিক্যতা বা স্বল্পতা অনুপাতে যাকাত থেকে গ্রহণ করতে পারে। তারা হল ফকীর, মিসকীন, ক্রীতদাস এবং মুসাফির।
(খ) অন্য এক প্রকার লোক হচ্ছে, যারা মুসলিমদের উপকারার্থে যাকাত গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং যাকাত উসুলকারী কর্মচারী/কর্মকর্তাদের, যাদের অন্তর জয় করা সম্ভব তাদের জন্যে, ঋণ পরিশোধ করে পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক করার জন্য এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য যাকাতের মাল ব্যয় করা জায়েয আছে। আর যাকাত গ্রহণকারী যদি অভাবী না হয় এবং যে খাতে যাকাত ব্যয় করাতে মুসলিমদেরও কোন উপকার নেই। তার জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েয নয়।