সলাতে দাঁড়ানোর সময় রসূল (ﷺ) ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এর পূর্বে তিনি কোন কিছুই পাঠ করেন নি। সলাতের শুরুতে তিনি মুখে নিয়ত উচ্চারণ করেন নি। সাহাবী, তাবেঈ এবং চার মাজহাবের ইমামদের কেউ এটিকে মুস্তাহাব বলেননি।
তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তিনি ألله أكبر ‘আল্লাহু আকবার’ বাক্যটি পাঠ করতেন। এ ছাড়া তিনি অন্য কিছুই পাঠ করতেন না। তাকবীর পাঠ করার সময় তিনি উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ খোলা রেখে এবং কিবলামুখী করে কানের লতি পর্যন্ত উঠাতেন। কাঁধ পর্যন্ত উঠানোর কথাও বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর ডান হাতের কব্জি ও বাহুকে বাম হাতের কবজি ও বাহুর উপর স্থাপন করতেন। উভয় হাত রাখার স্থান সম্পর্কে রসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে ইমাম আবু দাউদ আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, সলাতে এক হাতের কব্জিকে অন্য হাতের কব্জির উপর রাখা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।[1] তাকবীরে তাহরীমার পর কখনও তিনি এই দু’আটি (ছানাটি) পড়ে সলাত শুরু করতেনঃ
أَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَ بَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার পাপসমূহের মাঝে এমন দুরত্ব সৃষ্টি করে দাও যেমন দুরত্ব সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহসমুহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপাচার থেকে পরিস্কার করে দাও যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে ধৌত করে পরিচ্ছন্ন করা হয়’’।[2] তিনি কখনও এই দু’আটি পাঠ করতেন-
وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِى فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللّٰهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ. أَنْتَ رَبِّى وَأَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِى وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِى فَاغْفِرْ لِى ذُنُوبِى جَمِيعًا إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِى لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِى لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّى سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّى سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِى يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
‘‘আমি একমূখী হয়ে স্বীয় মুখমণ্ডল ঐ সত্তার দিকে ফিরাচ্ছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সলাত, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তার কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। হে আল্লাহ! তুমি এমন বাদশাহ যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তুমি আমার প্রভু, আমি তোমার বান্দা। আমি আমার নিজের উপর জুলুম করেছি।
আমি আমার পাপ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। তুমি ব্যতীত গুনাহসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই। তুমি আমাকে সর্বোত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করো। তুমি ব্যতীত আর কেউ উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করতে পারেনা। তুমি আমার থেকে খারাপ চরিত্রগুলো দূর করে দাও। তুমি ছাড়া আর কেউ আমার থেকে খারাপ চরিত্রগুলো দূর করতে সক্ষম নয়। হে আমার প্রভু! আমি তোমার হুকুম পালন করতে প্রস্ত্তত ও উপস্থিত আছি। আমি তোমার আনুগত্যের জন্য সদা প্রস্ত্তত রয়েছি। সমস্ত কল্যাণ তোমার উভয় হসেত্মই নিহিত। অকল্যাণকে তোমার দিকে সম্পৃক্ত করা শোভনীয় নয়। আমি সম্পূর্ণরূপে তোমার দিকে মুখাপেক্ষী ও নিজেকে তোমার উপর সোপর্দকারী এবং তোমার দিকেই আমি প্রত্যাবর্তনকারী। তুমি বরকমতময় ও মহিমান্বিত। তোমার কাছেই আমি ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার নিকটই তাওবা করছি।’’[3]
তবে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে এই দু’আটি তাহাজ্জুদ সলাতের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। কখনও কখনও তিনি এই দু’আটিও পড়তেন-
اللّٰهُمَّ رَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِى لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ أَنْتَ تَهْدِى مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘হে আল্লাহ! তুমি জিবরীল, মীকাঈল এবং ইসরাফীলের প্রভু। আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সব বিষয়েই তুমি অবগত। তোমার বান্দারা যে বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হয় তুমি সে বিষয়ের ফয়সালাকারী। যেই সত্য সম্পর্কে মতভেদ করা হয়েছে সে বিষয়ে তুমি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করো। অর্থাৎ তুমি আমাকে হক ও হিদায়াতের উপর অবিচল রাখো। নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্রদর্শন করে থাকো’’।[4]
আবার কখনও তিনি তাকবীরে তাহরীমার পর এই দু’আও পড়তেন
اللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ اللّٰهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِى مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
‘‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা। তুমি আসমান-যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যস্থিত সকল বস্ত্তর আলো। তোমার জন্য সকল প্রশংসা। আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তুমি ঐ সব বস্ত্তর অধিকর্তা। তোমার জন্য সকল প্রশংসা। তুমি সত্য, তোমার অঙ্গিকার সত্য, কিয়ামতে তোমার সাক্ষাত সত্য, তোমার কথা সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নাবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ (ﷺ) সত্য এবং কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আত্মসমর্পন করেছি। তোমার উপর ভরসা করেছি। তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি। তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমার শত্রুর বিরুদ্ধে বিবাদে লিপ্ত হয়েছি। তোমার নিকটই সকল বিষয় মীমাংসার জন্য পেশ করেছি। তুমি আমার পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। যা আমি গোপনে ও প্রকাশ্যে করেছি। তুমি যাকে চাও আগে কর বা অগ্রসর কর এবং তুমিই যাকে চাও পিছিয়ে দাও। তুমি ছাড়া কোন সত্য মা’বূদ নেই।[5]
উপরে বর্ণিত সবগুলো দু’আই নাবী (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তাকবীরে তাহরীমার পর তিনি নিম্নের দু’আটির মাধ্যমে সলাত শুরু করতেনঃ
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
‘‘হে আল্লাহ্! প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা সকলের উপরে এবং তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন সত্য উপাস্য নেই’’।[6]
তবে পূর্বে উল্লেখিত দু’আগুলো এই দু’আটির চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ। উমার (রাঃ) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রসূল (ﷺ) এর মুসাল্লায় দাঁড়িয়ে এই শেষোক্ত দু’আটি উঁচু আওয়াজে পাঠ করতেন এবং মানুষকে তা শিখাতেন।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন- উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণনাই আমি গ্রহণ করছি। তবে কোন ব্যক্তি যদি সলাতে দাঁড়ানোর সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম থেকে বর্ণিত যে কোন দু’আ পাঠ করে, তা উত্তম হবে।
সলাত শুরু করার দু’আ তথা ছানা পাঠ করার পর তিনি বলতেন-
أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
‘‘বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করছি। শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু’’। অতঃপর তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। তিনি কখনও উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ্ পাঠ করতেন। তবে অধিকাংশ সময়ই তিনি তা নিরবে বলতেন।
নাবী (ﷺ) প্রত্যেক আয়াত পাঠ করার পর সামান্য সময় থামতেন। আয়াতের শেষ অক্ষর উচ্চারণ করার সময় আওয়াজ লম্বা করতেন। সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ হলে আমীন বলতেন। যেই সলাতে উঁচু আওয়াজে কেরাআত পাঠ করা হয়, তাতে তিনি আমীনও উঁচু আওয়াজে বলতেন। তাঁর পিছনের মুসল্লিগণও উঁচু আওয়াজে আমীন বলতেন।[7]
সলাতের প্রথম রাকআতে তাঁর দু’টি সাকতাহ্ (সামান্য বিরতি) ছিল। অর্থাৎ তিনি দুইবার সামান্য সময়ের জন্য বিরতি গ্রহণ করতেন। একটি ছিল তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মাঝখানে। দ্বিতীয়টির ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এক বর্ণনায় রয়েছে যে, তা ছিল সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর। অন্য বর্ণনায় আছে যে, তা ছিল কিরাআত পাঠ শেষে এবং রুকুতে যাওয়ার পূর্বে। আরও বলা হয়েছে যে, প্রথম সাকতাহ্ ছাড়াও আরও দু’টি সাকতা রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে সাকতাহ্ মাত্র দু’টি। তৃতীয় সাকতা’র ব্যাপারে কথা হচ্ছে, তা ছিল খুবই সামান্য সময়ের জন্য। শ্বাস নেওয়ার জন্য তিনি এই সাকতাহ্ (সামান্য বিরতি) গ্রহণ করতেন। খুব সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে কতক আলেম এটিকে সাকতাহ্ হিসাবে উল্লেখ করেন নি।[8]
সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। রসূল (ﷺ) কখনও লম্বা সূরা পাঠ করতেন আবার কখনও সফর অথবা অন্য কোন কারণে সংক্ষিপ্ত কিরাআত পাঠ করতেন। কিন্তু অধিকাংশ সময় তিনি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতেন।
প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন রহঃ) বলেনঃ সলাতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা সুন্নাত। যেমন-
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ اَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِى الصَّلَاةِ
‘‘ অর্থ: সাহাল ইবন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদেরকে স্বলাতে ডান হাত বাম হাতের যিরার উপর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হত।’’। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদ- ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা, তাও. হা/৭৪০, আপ্র. হা/৬৯৬, ইফা.হা/৭০৪, মুয়াত্তা মালেক, মাশা. হা/৫৪৬, মিশকাত, হাএ. হা/৭৯৮)। কিন্তু হাত দু’টিকে কোন স্থানে রাখবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশুদ্ধতম মত হচ্ছে, হাত দু’টি বুকের উপর রাখবে। ওয়ায়েল বিন হুজ্র্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
كَانَ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ
‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করতেন’’। (দেখুনঃ ইবনে খুযায়মা মাশা. হা/৪৭৯) হাদীসটিতে সামান্য দুর্বলতা থাকলেও এক্ষেত্রে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসের তুলনায় এটিই সর্বাধিক শক্তিশালী। আর বুকের বাম সাইডে অমত্মরের উপর হাত বাঁধা একটি ভিত্তিহীন বিদআত। নাভীর নীচে হাত বাঁধার ব্যাপারে আলী থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তা দুর্বল। ওয়ায়েল বিন হুজর কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি অধিক শক্তিশালী। বুকের উপর হাত রাখার ব্যাপারে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত সহীহ ইবনে খুযায়মাতে অন্য একটি হাদীছ রয়েছে। ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বলেনঃ
صَلَّيْت مَعَ رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعَ يَده الْيُمْنَى عَلَى يَده الْيُسْرَى عَلَى صَدْره
আমি রসূল সাঃ) এর সাথে সলাত পড়েছি। তিনি তাঁর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করেছেন। সুতরাং এই হাদীসটিও বুকের উপর হাত বাঁধা সুন্নাত হওয়ার একটি শক্তিশালী দলীল। আরও বিস্তারিত জানার জন্য ভারত বর্ষের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা হায়াত সিন্দি রহঃ) যিনি কুতুবে সিত্তার উপর টিকা লিখেছেন, তাঁর বিরচিত কিতাব فتح الغفور في وضع اليدين فوق الصدور (ফাতহুল গাফুর ফী ওয়ায-ইল ইয়াদাইনে ফাওকাস্ সুদুর) দেখে নেয়া যেতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।
[2]. বুখারী, অধ্যায়ঃ তাকবীরে তাহরীমার পর কী বলবে?, বুখারী, তাও. হা/৭৪৪, ইফা. হা/৭০৮, আপ্র. হা/৭০০ মুসলিম, হাএ. হা/১২৪১, ইফা. হা/১২৩০, ইসে. হা/১২৪২, সহীহ ইবনে মাজাহ, মাশা. হা/৬৫৬, নাসায়ী, মাপ্র. হা/ ৮৯৫, মিশকাত, হাএ. হা/৮১২।
[3] .মুসলিম হাএ. হা/১৬৯৭, ইফা. হা/১৬৮২, ইসে. হা/১৬৮৯,
[4] .আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ সলাত শুরু করার দুআ, আবু দাউদ,আলএ. হা/৭৬৭, সহীহ আত-তিরমিযী, মাপ্র. হা/৩৪২০
[5]. বুখারী, অধ্যায়ঃ রাতের তাহাজ্জুদ সলাত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ রাতের সলাতের দুআ, হাএ. হা/১৬৯৩, ইফা.হা/১৬৭৮, ইসে. হা/১৬৮৫,
[6]. আবু দাউদ, আলএ. ও ইফা হা/৭৭৫,৭৭৬, নাসায়ী, মাপ্র. হা/৮৯৯, ইফা.হা/৯০২, তিরমিযী, মাপ্র. হা/২৪৩, মিশকাত, হা/৮১৫, ইরওয়াউল গালীল,হা/ ৩৪০সহীহ , তাহক্বীক্ব: আলবানী
[7]. উঁচু আওয়াজে আমীন বলার বিস্তারিত হাদীছগুলো জানতে দেখুন: বুখারীতে ৩টি = তাও.হা/৭৮০,৭৮১,৭৮২, ইফা. হা/৭৪৪,৭৪৫, ৭৪৬, আপ্র. হা/৭৩৬,৭৩৭, ৭৩৮, মুসলিমে মোট ৮টি= হাএ. হা/৭৯৯ হতে ৮০৬ পর্যন্ত, ইফা. হা/৭৯৬-৮০৩, ইসে. হা/৮০৮-৮১৫, আবু দাউদ,আলএ. হা/৯৩২, ৯৩৬, ইফা. হা/৯৩২, নাসায়ী, মাপ্র. হা/৮৩০, ৯২৮, তিরমিযী, মাপ্র. হা/২৫০, সহীহ ইবনে মাজাহ, মাশা. হা/৬৯৩, ৬৯৪, ৬৯৫, ৬৯৬, মুয়াত্তা মালেক, মাশা. হা/২৮৮, সুনানুল কুবরা আ-বাইহাকী, মাশা. হা/২৫৫৫, মিশকাত, হাএ. হা/৮২৫, ৮২৬)এছাড়াও একাধিক সহীহ হাদীস প্রসিদ্ধ কিতাবগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
[8]. সুতরাং সাকতার সংখ্যা মোট দু’টি। একটি তাকবীরে তাহরীমার পর অন্যটি সূরা ফাতিহা পাঠের পর। ইমাম যখন সূরা ফাতিহা পড়ে সাকতাহ গ্রহণ করবেন তখন মুক্তাদীগণ পূর্বে প্রত্যেক আয়াতের সাথে সাথে না পড়ে থাকলে এই সুযোগে সূরা ফাতিহা পড়ে নিবেন। মনে রাখবেন উক্ত বিরতি মূলত সূরা ফাতিহা পাঠ করার জন্য নয়। তাই যারা শুরু থেকে সলাতে উপস্থিত থাকেন, তাদের ইমামের সাথে তা পড়ে নেয়া উচিত।