প্রশ্ন: একব্যক্তি একজনের কাছ থেকে কিছু অর্থ ঋণ নিয়েছে। তবে ঋণদাতা শর্ত দিয়েছে এর জন্য তার কাছে একটি ধানী জমি বন্ধক রাখতে হবে। সে ওই জমি চাষাবাদ করবে আর উৎপাদিত ফসলের পুরোটা বা অর্ধেক নিয়ে নিবে। বাকি অর্ধেক নিবে জমির মালিক। যতদিন এ ব্যক্তি তার ঋণ পুরোপুরি শোধ না করতে পারবে ঋণদাতা এ জমি ভোগ করবে। প্রশ্ন হলো এমন করা তার জন্য জায়িয হবে কি? এ ধরনের শর্তযুক্ত ঋণের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
উত্তর: কর্জ হলো অন্যের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতার পরিচায়ক লেনদেনের অন্যতম। ইসলাম এমন লেনদেনর বহুল প্রচার কামনা করে। কেননা কর্জ দ্বারা অন্যের উপকার ও তার ওপর অনুগ্রহ করা হয়। আর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- তোমরা অনুগ্রহ করো আল অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।[1] সুতরাং ঋণ দেয়া মুস্তাহাব ও প্রশংসনীয় কাজ আর ঋণ নেয়া মুবাহ ও বৈধ কাজ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি এক ব্যক্তি থেকে একটি বাচ্চা উট ধার নিয়েছেন এবং তার চেয়ে উত্তমটা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর কর্জ দেয়া যেহেতু অনুগ্রহ ও দয়াপূর্ণ চুক্তি তাই এটাকে লাভ ও বিনিময় চুক্তি তথা নিছক পার্থিব লাভ আহরণের উপায়ে পরিণত করা বৈধ নয়। কারণ এমন করার দ্বারা একটা পুণ্যকর্মকে ভোগসর্বস্ব ব্যবসায়িক লেনদেনে পরিণত করা হয়। এ জন্যই আপনি এ দুই কথার মধ্যে পার্থক্য পাবেন যে বলল, আমি তোমাকে এই দিনারের বিনিময়ে এই দিনার এক বছরের জন্য বাকিতে দিলাম অথবা আমি তোমার কাছে এতগুলো দিনারের বদলে এতগুলো দিনার বিক্রি করলাম। অতপর হস্তগত না করেই দু’জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ উভয় অবস্থায়ই হারাম হবে। কিন্তু যদি তাকে এক দিনার কর্জা দেয় আর সে তা শোধ করে এক মাস বা এক বছর পরে তাহলে সেটা বৈধ। অথচ এখানেও ঋণদাতা বিনিময়টা এক বছর পরে বা তার আগে-পিছে গ্রহণ করছে। এটা এ জন্য যে এখানে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও দয়ার দিকটিই প্রাধান্য পাচ্ছে।
আর এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, আপনার জিজ্ঞাস্য ক্ষেত্রে ঋণদাতা যেহেতু নিছক জাগতিক লাভের শর্ত করেছে সুতরাং এটা কর্জার উপকারী মনোভাব থেকে বেরিয়ে গেছে। অতএব এ সুরত হারাম। এছাড়া ফিকাহবিদদের স্বীকৃত মূলনীতি তো আছেই যে, ‘প্রত্যেক ওই কর্জ যা লাভ টেনে আনে তা সুদ।’ সুতরাং বুঝা গেল, কর্জদাতার জন্য বৈধ হবে না যে তিনি কর্জগ্রহীতার ওপর তার জমি অর্পণের শর্ত করবেন যা চাষাবাদ করে তিনি ভোগ করবেন। এমনকি যদি ঋণগ্রহীতা এক ভাগ দেয় তাও বৈধ হবে না। কারণ এটা সুস্পষ্টভাবে কর্জ দিয়ে লাভ নেয়ার শামিল যা কর্জের মতো একটি সুন্দর সহমর্মিতা মূলক লেনদেনকে বস্ত্ত ও সার্থ সর্বস্ব লেনদেনে পরিণত করে।[2]
[2]. ইসলামি ফতোয়া সংকলন : ২/৪১৫-৪১৬