এ মাসআলা সম্পর্কে সৌদি মুফতি বোর্ডের লিখিত ফতোয়া প্রকাশ করা হয়েছে। নিম্নে হুবহু তার অনুবাদ তুলে ধরা হলো-
হামদ ও সালাতের পর, সৌদি মুফতি বোর্ড বরাবর উপস্থাপিত ‘শরয়ি দৃষ্টিকোণে কাগজের টাকা ও তার বিধান’ শীর্ষক গবেষণাকর্মটি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে অধ্যয়ন করেছেন। তারা পরস্পর আলোচনা-পর্যালোচনা এবং বিচার-বিশ্লেষণ করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোয় সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
প্রথমত. যেহেতু সোনা-রুপাই টাকার মূল এবং আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুসারে সোনা-রুপায় তাদের মূল্যমানই সুদের ইল্লত আর ফকিহদের মতানুসারে উৎস এক হওয়া সত্ত্বেও সোনা-রুপাতেই মূল্যমানতা সীমাবদ্ধ নয় তাই। এবং যেহেতু টাকাই বর্তমানে মূল্য হিসেবে প্রচলন পেয়েছে, লেনদেনের বেলায় স্থান দখল করেছে সোনা-রুপার, এমনকি এ দিয়ে লেনদেন চলে, মানুষ এটা অর্জন ও সঞ্চয় করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে অথচ নিছক কাগজ হিসেবে তার কোনো মূল্য নেই; মূল্য তার অতিরিক্ত কারণে সেটা হলো, এর দ্বারা আস্থা অর্জন করা এবং লেনদেনের সময় বিনিময় মাধ্যম স্থির হওয়া আর এটাই মূল্যযোগ্য হওয়ার উদ্দেশ্য- এতসব কারণে মুফতি বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কাগজের টাকা একধরনের স্বতন্ত্র মুদ্রা যার বিধান সোনা-রুপার বিধানের অনুরূপ। সুতরাং এতে জাকাত ওয়াজিব হবে এবং এর ওপর সোনা-রুপার মতো সুদের উভয় প্রকার তথা ফযল ও নাসিয়া খাটবে। এককথায় কাগজের টাকা শরিয়তের সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে সোনা-রুপার অনুরূপ হবে।
দ্বিতীয়ত. সোনা-রুপা ও অন্যান্য মুদ্রার মতো কাগজকেও স্বতন্ত্র মুদ্রা হিসেবে ধরা হবে। তেমনি কাগজের নোটকেও বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে। এটা হবে দেশ ও প্রকাশ-প্রচলন স্থানের ভিন্নতা বিচার করে। অর্থাৎ সৌদি টাকা এক শ্রেণী আর মার্কিনি টাকা আরেক শ্রেণী। এভাবে প্রত্যেক দেশের টাকা মুদ্রার একেক স্বতন্ত্র শ্রেণী হিসেবে গণ্য হবে। আর সে অনুযায়ী সোনা-রুপা ও অন্যান্য মূল্যের মতো কাগজের মুদ্রা বা নোটের ওপরও সুদের বিধান খাটানো হবে।
আর এসবই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দাবি করে :
(ক) কেবল নগদ ছাড়া বাকিতে কোনোভাবে কাগজের নোট একটার বদলে একটা কিংবা মুদ্রার অন্য কোনো প্রকার যেমন- সোনা,রুপা ইত্যাদির মোকাবেলায় বিক্রি করা বৈধ নয়। অতএব উদারণত, সৌদি রিয়াল অন্য কোনো দেশের কাগজের টাকার মোকাবেলায় কমবেশি করে হস্তগত না করে বাকিতে বিক্রি করা বৈধ নয়।
(খ) একই (দেশের) ধরনের কাগজের মুদ্রার একটার মোকাবেলায় অন্যটা কমবেশি করে বিক্রি করা বৈধ নয়; চাই তা নগদে হোক বা বাকিতে। সুতরাং কাগজের সৌদি দশ রিয়াল কাগুজের এগারো রিয়ালের বিনিময়ে বিক্রি করা বাকিতে বা নগদে কোনোটাই বৈধ নয়।
(গ) দুই ধরনের দুই কাগজের মুদ্রা একটার বিনিময়ে আরেকটা বিক্রি করা বৈধ। যদি তা হয় হাতে হাতে। সুতরাং পাকিস্তানি রুপি দিয়ে সৌদি রিয়াল ক্রয় করা জায়িয। চাই তা সোনার হোক বা রুপার, কম হোক বা বেশি। তেমনি এক মার্কিন ডলার সৌদি তিন রিয়াল কিংবা তার কম বা বেশি দিয়ে বিক্রি করা এবং সৌদি রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে সৌদি কাগুজে মুদ্রা কমবেশি করে বিক্রি করা জায়িয। যদি তা হয় নগদে। কারণ এটাকে এক জাতীয় মুদ্রার বিনিময়ে আরেক জাতীয় মুদ্রা বিক্রি হিসেবে গণ্য করা হবে। আর বাস্তবতা এবং মূল্য ভিন্ন হলে শুধু নাম এক হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।
তৃতীয়ত. সোনা-রুপার মতো কাগুজে মুদ্রার ওপরও জাকাত ফরজ হবে যখন স্বর্ণ বা রৌপ্য কোনোটার নেসাব পরিমাণ টাকা হবে। অথবা নেসাব পূর্ণ হবে অন্য কোনো মূল্য বা ব্যবসায়িক পণ্যের সঙ্গে মিলিয়ে।
চতুর্থত. কাগজের মুদ্রাকে বাইয়ে সলম এবং অংশীদারি কারবারগুলোতে মূলধন বানানো যাবে।[1]