মুসলমান মাত্রেই চায় শরিয়তের বিষয়গুলো দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে। তাই সে ওয়াজিবগুলো পালন করে। হারাম এবং মাকরুহ বিষয়গুলো বর্জন করে। সচেষ্ট থাকে মুস্তাহাব কাজগুলো বেশি বেশি করতে। মুবাহ কাজগুলোর মধ্যে নিজ অবস্থা ও প্রয়োজন অনুপাতে কোনোটা করে আবার কোনোটা ছাড়ে। আর দূরে থাকে অস্পষ্ট এবং শংকাপূর্ণ কাজ থেকে। কারণ সে জানে অস্পষ্ট কাজগুলোই সুস্পষ্ট হারাম কাজে লিপ্ত করে।
নুমান বিন বাশির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বলতে শুনেছি (এ কথা বলে তিনি আঙ্গুল দিয়ে নিজ কানের দিকে ইঙ্গিত করেন; অর্থাৎ নিজ কানে শুনেছি।)- ‘নিশ্চয় হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট; এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে অস্পষ্ট বিষয়াবলি- যা অধিকাংশ লোকই জানে না। সুতরাং যে অস্পষ্ট বিষয়াবলি থেকে দূরে থাকবে তা তার সম্মান ও দীনদারি উভয়ের জন্য কল্যাণকর সাব্যস্ত হবে। পক্ষান্তরে যে এতে পতিত হবে সে হারামে লিপ্ত হবে। যেমন- রাখাল সংরক্ষিত এলাকা থেকে সভয়ে দূরে থাকে যাতে সে এতে ঢুকে না পড়ে। মনে রেখ প্রত্যেক রাজারই কিছু সংরক্ষিত স্থান থাকে আরও মনে রেখ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা (যার সীমানা অতিক্রম করা নিষিদ্ধ) হলো, তাঁর হারাম ঘোষিত বিষয়গুলি। তোমরা মনে রেখ, নিশ্চয় (মানুষের) শরীরে একটি মাংসপিন্ড আছে। সেটা যদি সুস্থ থাকে তাহলে সারা দেহ সুস্থ আর সেটা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সারা শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। মনে রেখ সেটা হলো কলব বা আত্মা।’[1]
ইমাম নাববি রহ. বলেন, ‘এ হাদিসের সীমাহীন গুরুত্ব ও অপরিসীম তাৎপর্যের ব্যাপারে আলেমগণ একমত। এটি সে হাদিসসমূহের অন্যতম যেগুলোর ওপর শরিয়তের ভিত্তি। একদল আলেম বলেছেন, হাদিসটি ইসলামের এক তৃতীয়াংশ। অপর দুই তৃতীয়াংশের একটি ‘নিশ্চয় কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল’[2] এবং মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হলো, সে অনর্থক কাজ পরিহার করবে শীর্ষক হাদিস।[3]
ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন, পুরো ইসলাম চারটি হাদিসকে ঘিরে আবর্তিত। উল্লেখিত তিনটি এবং ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে নিজের জন্য যা করে’[4] শীর্ষক হাদিস। কেউ বলেছেন, চতুর্থ হাদিসটি হলো, তুমি দুনিয়ার ব্যাপারে বিরাগ হও আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন আর মানুষের হাতে যা রয়েছে তা থেকে বিরাগ হও লোকে তোমাকে ভালোবাসবে।[5]
উলামায়ে কিরাম বলেন, (নুমান বিন বাশির রা. বর্ণিত) হাদিসটি অবর্ণনীয় গুরুত্বের দাবিদার এ জন্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতে বস্ত্র, আহার্য ও পানীয়সহ মৌলিক সবকিছু সংশোধন করার কথা বলেছেন। তাগিদ দিয়েছেন অস্পষ্ট বিষয় থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকার প্রতি। কারণ তা ধার্মিকতা ও সম্মান রক্ষায় সহায়ক। সতর্ক করেছেন সন্দেহে পতিত হওয়া থেকে। উপরন্তু বিষয়টাকে স্পষ্ট করেছেন সংরক্ষিত স্থানের চমৎকার এক দৃষ্টান্ত পেশ করে। অবশেষে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটিও উল্লেখ করেছেন। আর সেটা হলো, আত্মার প্রতি লক্ষ্য রাখা। তাঁর কথা, আত্মা শুদ্ধ থাকলে সারা দেহ ঠিক এর ব্যতিক্রম হলে পুরো দেহে সমস্যা দেখা দিবে।
তবে পয়গম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্তি ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট’ এর অর্থ, - বিষয় মোট তিন প্রকার।
(ক) সুস্পষ্ট হালাল- যা বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না; যে কেউ বুঝতে পারে। যেমন- রুটি, মধু ইত্যাদি।
(খ) সুস্পষ্ট হারাম- যা বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না; যে কেউ বুঝতে পারে। যেমন- মদ, শূকর ইত্যাদি।
(গ) মুশ্তাবিহাত অর্থাৎ যার হালাল হওয়া বা হারাম হওয়া কোনোটাই স্পষ্ট নয়। অধিকাংশ লোকই এর হুকুম বুঝতে পারে না। শুধু উলামায়ে কিরাম কিয়াস, নস বা অন্য কোনোভাবে তার হুকুম জানেন।[6]
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর প্রিয় কাজগুলো করার এবং অপ্রিয় কাজগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দেন। আমিন।
[2]. বুখারি : ০১, মুসলিম : ১৯০৭
[3]. মুয়াত্তা মালেক : ৩/৯০৩
[4]. বুখারি : ১৩, মুসলিম : ৪৫
[5]. ইবনে মাজাহ : ৪১০২, ইমাম নাববি বলেন, ইবনে মাজা র. এ হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। শরহুন নাববি ১১/২৮
[6]. শরহুন নাববি : ১১/২৮