এরপর জামাইকে কোলে তুলে আনা হয় শ্বশুর বাড়িতে। বসানো হয় সুসজ্জিত বরাসনে বা বিছানায়। বসার আগে কপালে হাত ঠেকিয়ে ‘আলমতালায়’ সালাম করে বর। নিজের শালীর তরফ হতে উপহার আসে দোলাভায়ের গলায় ফুলের মালা, পাড়া-সম্বন্ধে শালী দেয় বিস্কুটের মালার উপহার। শালা দেয় টাকার মালা গলায় পরিয়ে। এরপর একটা একটা করে মেয়েরা আসে এবং বিভিন্ন উপহার দিয়ে ‘জামাই দর্শন’ করে যায়। অবৈধ হলেও দেখা দেয় জামাইকে, জামায়ের ভাই-বন্ধু-বুনাইকে! বাড়ি তখন তো খোলা-মেলা হাসপাতাল। অনেক মহিলা আবার জামাই দেখার সময় জামাইকে চুম্বনও দেয়!

নব পরিণীতা কন্যাকে সুসজ্জিতা করে মশারীর মত পাতলা ওড়নার পর্দায় বরের পাশে বসানো হয়; এত লোক, এত মহিলার মাঝে! চট্ করে শালীরা গাঁটছড়া বাঁধে। চিনি আনা হয়। নানী অথবা দাদী আসে। সামনে বসে কনের ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল নিয়ে চিনিতে চুবিয়ে বরের অধরে স্পর্শ করায় এবং বরের ঐ আঙ্গুল নিয়ে অনুরূপ কনের অধরে স্পর্শ করায়। অতঃপর আয়নায় এক অপরের মুখ প্রদর্শন করা হয়। বরকে নানী বা দাদী রহস্যচ্ছলে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি দেখলে ভাই?’ বর পাকা হলে (অমাবস্যা দেখলেও) বলে ‘চাঁদ দেখলাম।’ কিছু না বললে শিখিয়ে দেয় পাকা বুড়িরা। আর এর মাঝে পাড়ার ডাঁপালীরাও সারা মজলিস হাসিতে ও খুশীতে মুখরিত করে তোলে।

এরপর শাশুড়ী বর-কনের পিছন দিকে এসে দাঁড়ায়। চিনির পাত্রের এক দিকে বরের হাত অপর দিকে কনের হাত সহ নানী বা দাদী শাশুড়ীকে সেই পাত্র তুলে দেয়। সকলে ছেড়ে দেয়, কিন্তু পাকা জামাই ছাড়ে না। উপহার চাই। জামায়ের পাশের্ব তার চতুর বুনাই চোখ টিপে এসব শিক্ষা দেয়। শাশুড়ী কিছু টাকা ফেলে দিলেও জামায়ের পছন্দ না হলে প্লেট না ছাড়লে চলে শাশুড়ী-জামায়ের প্লেট নিয়ে নির্লজ্জ টানাটানি! পুনরায় কিছু টাকা বেশী পড়লে প্লেট ছাড়ে অর্থলোভী জামাই। হাসিতে মজলিস মুখরিত হয়। লজ্জায় মুখ ঢাকে মুসলিমরা। এই নির্লজ্জতা ও ধৃষ্টতা কোন কোন মুসলিম নামধারী ঘরেও ঘটে থাকে।

অতঃপর শাশুড়ী তার জামাই-বেটি, বিয়াই-বিয়ান ও অন্যান্যের হাত একত্রে ধরে ডুকরে কেঁদে কন্যা সঁপে দেয়; ‘উপরে খোদা আর নামোতে দশ, এতদিন মেয়ে আমাদের ছিল। এখন তোমাদের হল। শান্তিতে রেখো। মারধোর করো না। করলে আল্লাহ-আল্লাহর রসূলকে করা হবে----।’ যাতে রয়েছে কথার শির্ক।

এরপর কনে তোলার পালা। কনের দোলাভাই এসে কনেকে তোলে। কিন্তু তার কাপড় বরের কাপড়ের সঙ্গে শালীরা বেঁধে রেখেছে। উপহার ছাড়া খুলবে না। উপহারের জুয়ো খেলায় দোলাভাই একা জিতে যাবে, তা হবে না। টানাটানির পর পছন্দমত টাকা পেলে তবেই গাঁট খোলা হয়। এর মাঝে বিয়াই-বিয়ানে ও আরো অন্যান্য উপহাসের পাত্র-পাত্রীদের মাঝে উপহাসের কত যে ফুলঝুরি ফোটে এবং নজরবাজদের কত যে নজরবাজীর লড়াই চলে, তা তো প্রত্যক্ষদর্শীরাই জানে। একান্ত নির্লজ্জ না হলে এমন পরিবেশ গড়া সত্যই কঠিন।

কোন কোন এলাকায় ঐ মজলিস থেকে বর নিজে নিজ পাত্রীকে কোলে তুলে কোন নির্জন রুমে প্রবেশ করে! আরো কত রকম কীর্তি কত এলাকায় নতুন নতুন রঙে ও ঢঙে দেখতে পাওয়া যায়। যার প্রায় সবগুলিই বিজাতির অনুকরণে অথবা খেয়ালবশে কৃত আচার। পক্ষান্তরে মজলিসের মাঝে বর কনে একঠাঁই করাই নির্লজ্জতা ও হারাম।[1]

অতঃপর কিছু নাস্তা করে জামাই এর হাত ধোয়া নিয়ে উপহার আব্দার করে শালা বা শালী। কি জানি ঐ জুয়াতে কে হারে আর কেই বা জিতে?

এরপর বর-কনে উভয়কে কোলে করে গাড়িতে তুলে বিদায় দেওয়া হয়। এর চেয়ে বড় নির্লজ্জতা আর কি হতে পারে যে, একজন সুসজ্জিতা, সুবাসিতা, নব পরিণীতা, লাবণ্যময়ী যুবতীকে তার কোন বেগানা পুরুষ তার গায়ে হাত রেখে, কোলে ভরে, বাহুতে চেপে গাড়িতে তুলবে বা গাড়ি থেকে নামাবে?! এটা বরেরই বা কি করে রুচি হয়?!

বরকনে নিজে পায়ে হেঁটে গাড়ি চাপবে-নামবে। বিকলাঙ্গ হলে মেয়েরা কেউ কনেকে এবং পুরুষে বরকে তুলবে। একান্ত যদি সম্মানের দরকার হয় তবে এই ভাবেই কনেকে মহিলা এবং বরকে পুরুষে চড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া ঐ প্রথা বেহায়ামী ও অবৈধ।

[1] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৬পৃঃ, রাকানিঃ ৪৭পৃঃ)