ইচ্ছাকৃতভাবে হাদী জবেহ করার পূর্বে মাথা-মুন্ডন করা নিয়ম-বহির্ভূত কাজ। তদ্রূপভাবে এদিনের অন্যান্য কাজেও তরতিবের উল্টো করা উচিৎ নয়। তবে যদি কেউ অপারগ হয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারে, অথবা ভুলবশত উলট-পালট করে বসে তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সাথে হজ্জ করার সময় সাহাবায়ে কেরামদের কেউ কেউ এরূপ আগে-পিছে করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘কর, কোনো অসুবিধা নেই। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে—
كان النبي صلى الله عليه وسلم يسأل يوم النحر بمنى، فيقول: لا حرج ، فسأله رجل فقال: حلقت قبل أن أذبح ، قال: إذبح ولا حرج وقال: رميت بعد ما أمسيت ، قال: لا حرج .
-মিনায়, কোরবানির দিন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হত। তিনি বলতেন, ‘সমস্যা নেই’। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি জবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন জবেহ কর, কোনো সমস্যা নেই। লোকটি বললেন, ‘আমি সন্ধ্যার পর কঙ্কর মেরেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, সমস্যা নেই।[1]
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় এসেছে—
عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم، وأتاه رجل يوم النحر، وهو واقف عند الجمرة، فقال : يا رسول الله، إني حلقت قبل أن أرمي، فقال : ارم ولا حرج، وأتاه آخر، فقال : إني ذبحت قبل أن أرمي، قال : ارم ولا حرج، وأتاه آخر، فقال : إني أفضت إلى البيت قبل أن أرمي، قال : ارم ولا حرج، قال : فما رأيته سئل يومئذ عن شيء، إلا قال : افعلوا ولا حرج.
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে শুনেছি- এক ব্যক্তি ১০ জিলহজ্জ তাঁর কাছে এল। তিনি তখন জামরার কাছে দাঁড়ানো ছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি, তিনি বললেন, নিক্ষেপ করো সমস্যা নেই। অন্য আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে জবেহ করেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ কর সমস্যা নেই। অন্য আরেক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ করো সমস্যা নেই। বর্ণনাকারী বললেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে যে প্রশ্নই করা হয়েছে তার উত্তরেই তিনি বলেছেন, করো সমস্যা নেই।[2]
এ সম্পর্কে আরো হাদিস রয়েছে যেগুলো শুদ্ধ ও যেগুলোর আলোকে আমল করলে হজ্জের আদৌ কোনো ক্ষতি হবে না। বিশেষ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে ও কোরবানি আদায় প্রক্রিয়া জটিল, এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে অজ্ঞাত থাকা অবস্থায়, বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)যেভাবে সরল আকারে দেখেছেন আমদেরও সেভাবে নেয়া উচিৎ। বিশেষ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর প্রখ্যাত দুই ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ—যাদেরকে সাহেবাইন বলা হয় ও ইমামের বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কথার ওপরই ফতোয়া দেয়া হয়—১০ জিলহজ্জের কাজসমূহে তরতিব তথা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলেও দম ওয়াজিব হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। হানাফি ফেকাহর প্রসিদ্ধ কিতাব, بدائع الصنائع -তে এসেছে:
فإن حلق قبل الذبح من غير إحصار فعليه لحلقه قبل الذبح دم في قول أبي حنيفة وقال أبو يوسف ومحمد وجماعة من أهل العلم أنه لا شيء عليه -
যদি জবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে তবে এর জন্য দম দিতে হবে আবু হানিফা (র) মতানুযায়ী। আর ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহম্মদ ও আহলে ইলেমের একটি জামাতের মতানুযায়ী, কিছুই দিতে হবে না।[3]
[2] - মুসলিম : মুসলিম হাদিস নং ‘২৩০৫
[3] - বাদায়েউস্সানায়ে’ : খন্ড : ২, পৃ:১৫৮