তাশরীক এর দিনসমূহে করণীয়
দশ জিলহজ্জের পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়।
আইয়ামুত তাশরীকের ফজিলত
-এ দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাববুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। এরশাদ হয়েছে :
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ
‘‘তোমরা গুটি কয়েক দিনে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’’[1]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারি (রহ:) বলেন:
عن ابن عباس رضى الله عنهما ... الأيام المعدودات: أيام التشريق .
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ‘গুটি কয়েকদিন’ বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।’’[2]
ইমাম কুরতুবি (রহ:) বলেন : ‘ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোনো দ্বি-মত নেই।’[3] অবশ্য হজ্জ মৌসুমে এ দিনগুলো মিনায় অবস্থানের দিন। কেননা হাদিসে এসেছে: ‘মিনায় অবস্থানের দিন হল তিনটি। যদি কেহ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেই। আর যদি কেহ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই।’[4]
আইয়ামুত তাশরীক বিষয়ে হাদিসে এসেছে, রসূলে কারিম (ﷺ)বলেছেন: ‘আইয়ামুত-তাশরীক খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাববুল আলামিনের জিকিরের দিন।’[5]
ইমাম ইবনে রজব (রহ:) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন: আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নেয়ামত ও স্বচ্ছন্দ এবং মনের নেয়ামত তথা স্বচ্ছন্দ একত্র করা হয়েছে। খাওয়া- দাওয়া হল দেহের খোরাক আর আল্লাহর জিকির ও শুকরিয়া হল হৃদয়ের খোরাক। আর এ ভাবেই নেয়ামতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিন সমূহে।
(২) তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন: আরাফা দিবস, কুরবানির দিন ও মিনার দিনগুলো (কুরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।’[6]
(৩) এ দিনসমূহ জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফজিলত-পূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে।
(৪) এ দিনসমূহে হজ্জের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফজিলতের অধিকারী।
এ দিনগুলোতে করণীয়
এ দিনসমূহ যেমনি ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন: ‘‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর জিকিরের দিন।’’ এ দিনসমূহে আল্লাহ রাববুল আলামিনের দেয়া নেয়ামত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও জিকির আদায় করা উচিৎ। আর জিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদিসে এসেছে।
(১) সালাতের পর তাকবির পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবির পাঠ করা। আর এ তাকবির আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর জিকিরের দিন। আর এ জিকিরের নির্দেশ যেমন হাজিদের জন্য, তেমনই যারা হজ্জ পালনরত নন তাদেরও জন্য।
(২) কুরবানি ও হজ্জের পশু জবেহ করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম ও তাকবির উচ্চারণ করা।
(৩) খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তা’আলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেয়া। এমনি ভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া।
(৪) হজ্জ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তাআলার তাকবির পাঠ করা।
(৫) এগুলো ছাড়াও যে কোন সময় ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা।
[2] - বোখারি, ঈদ অধ্যায়
[3] - দুরুসুল হজ্জ : পৃ: ৩৫
[4] - أيام منى ثلاثة فمن تعجل في يومين فلا إثم عليه ومن تأخر فلا إثم عليه (আবু দাউদ)
[5] - عن نبيشة الهذلي أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : أيام التشريق أيام أكل وشرب وذكر الله (رواه مسلم)
[6] - عن عقبة بن عامر رضى الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: يوم عرفة، ويوم النحر، وأيام منى عيدنا أهل الإسلام، وهي أيام أكل وشرب رواه أبو داود وصححه الألباني (আবু দাউদ)