গায়ের চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নীচে রেখে ডান কাঁধ খালি রাখুন। চাদরের উভয় মাথা বাঁ কাঁধের ওপর রেখে দিন, অর্থাৎ ইযতিবা করুন। মনে-মনে তাওয়াফের নিয়ত করুন। হাজরে আসওয়াদ সোজা মুখোমুখী দাঁড়ান। ভিড় না থাকলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে তাওয়াফ আরম্ভ করুন। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের পদ্ধতি হল এই-হাজরে আসওয়াদের ওপর দু’হাত রাখুন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে আলতোভাবে চুম্বন করুন। আল্লাহর জন্য হাজরে আসওয়াদের উপর সিজদাও করুন।[1] চুম্বন করা দুষ্কর হলে, ডান হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করুন এবং হাতের যে অংশ দিয়ে স্পর্শ করেছেন সে অংশ চুম্বন করুন। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন ও স্পর্শ উভয়টাই অত্যন্ত কঠিন ও অনেকের পক্ষেই দুঃসাধ্য। বোখারির বিবরণ মতে, সে হিসেবে দূরে দাঁড়িয়ে ডান হাত উঁচু করে, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদের দিকে এক হাত দ্বারা ইশারা করুন। যেহেতু হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা সম্ভব হয়নি তাই হাতে চুম্বনও করতে হবে না।[2] পূর্বে হাজরে আসওয়াদ বরাবর একটি খয়েরি রেখা ছিল বর্তমানে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই হাজরে আসওয়াদ সোজা মসজিদুল হারামের কার্নিশে থাকা সবুজ বাতি দেখে হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসেছেন কি-না তা নির্ণয় করুন।
হাজরে আসওয়াদ স্পর্শের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে য়ামানি মাসেহ (স্পর্শ) গুনাহ-অন্যায় সমূলে বিলুপ্ত করে দেয়।[3] তাই হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শের বিষয়টি কখনো অগুরুত্বপূর্ণ মনে করবেন না। তবে অন্যদের যেন কষ্ট না হয় সে বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, স্পর্শ অথবা ইশারা করার পর কাবা শরীফ হাতের বায়ে রেখে তাওয়াফ শুরু করুন। পুরুষদের ক্ষেত্রে কাবা শরীফের কাছ দিয়ে তাওয়াফ করতে পারলে ভাল। রামলবিশিষ্ট তাওয়াফ হলে প্রথম তিন চক্করে রামল করুন। ছোট কদমে কাঁধ হেলিয়ে বীর-বিক্রমে চলুন। অবশিষ্ট চার চক্করে চলার গতি স্বাভাবিক রাখুন। প্রত্যেক তাওয়াফে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া পড়তে হবে এ ব্যাপারে হাদিসে কিছু পাওয়া যায় না। যখন যে ধরনের আবেগ আসে সে ধরনের দোয়া করুন। আল্লাহর প্রশংসা করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ওপর দরুদ পড়ুন। যে ভাষা আপনি ভাল করে বোঝেন ও আপনার মনের আকুতি সুন্দরভাবে প্রকাশ পায় সে ভাষাতেই দোয়া করুন। রুকনে য়ামানি অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের কোণের কাছে এলে তা স্পর্শ করুন। রুকনে য়ামানি স্পর্শ করার পর হাত চুম্বন করতে হয় না। সরাসরি রুকনে য়ামানিকে চুম্বন করাও শরিয়তসম্মত নয়। রুকনে য়ামানি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
-‘হে আমাদের প্রতিপালক আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, ও পরকালেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’ পড়তেন।[4] সে হিসেবে আমাদের জন্য এ জায়গায় উক্ত দোয়া পড়া সুন্নত। হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে ডান হাত উঁচু করে আবার তাকবির বলুন। এভাবে সাত চক্কর শেষ করুন। শেষ চক্করেও হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে তাকবির দিন। অর্থাৎ সাত চক্করে তাকবির হবে ৮ টি।
তাওয়াফ শেষ হলে, ডান কাঁধ ঢেকে ফেলুন, যা ইতোপূর্বে খোলা রেখেছিলেন। এবার মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন,
‘وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى
-মাকামে ইব্রাহীমকে তোমরা সালাতের স্থল হিসেবে সাব্যস্ত করো।[5] জায়গা না পেলে মসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে সালাত আদায় করুন। [6] মাকরুহ সময় হলে এ দু’রাকাত সালাত পরে আদায় করে নিন। সালাতের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করার বিধান নেই। এ সালাতের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ‘কাফিরুন’ - قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস-قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ পড়া সুন্নত। [7] সালাত শেষ করে যমযমের পানি পান করুন, ও মাথায় ঢালুন।
[2] - বোখারি শরীফে ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে.‘ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)উটের ওপর আরোহণ করে তরয়াফ করেন। তিনি যখনই রুকনের বরাবর এসেছেন হাতে-থাকা কোনো কিছু দিয়ে উহার দিকে ইশারা করেছেন, ও আল্লাহ আকবার বলেছেন (বোখারি : হাদিস নং ১৬০৭)
[3] - مسح الحجر والركن اليماني يحط الخطايا حطا (ইবনু খুযায়মাহ : ২৭২৯; হাদিসটি সহিহ সনদে উল্লেখ হয়েছে)
[4] - عن عبد الله بن السائب قال : سمعت النبي صلى الله عليه وسلم وهو يقول بين الركن والحجر : ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار ، أخرجه أحمد وأبوداود والنسائي وعبد الزراق وابن خزيمة والحاكم وصححه الحاكم في شرط مسلم ووافقه الذهبي
[5] - সূরা আল বাকারা : ১২৫
[6] - এই সালাতটি হানাফি মাযহাবে ওয়াজিব, অন্যান্য মাযহাবে সুন্নত।
[7] - তিরমিযী : হাদিস নং ৮৬৯