আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যভিচার হারাম করেছেন। ইহা হারাম হওয়া অতি সুস্পষ্ট বিষয়। এমন কোন মুসলিম নারী-পুরুষ পাওয়া যাবেনা, যে ব্যভিচার হারাম হওয়া সম্পর্কে অবগত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا(
‘‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)
ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি হলো বিবাহিত হলে রজম করা তথা পাথর মেরে হত্যা করা। আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করা।
সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেনঃ
فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا
‘‘আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আগমণ করলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম, তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিক থেকে আগুন প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্ববলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মাতের ব্যভিচারী নারী-পুরুষ’’।[1]
কিয়ামতের পূর্বে উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে এই পাপের কাজটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَظْهَرَ الزِّنَا
‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে, মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে এবং মুসলমানেরা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে’’।[2] তিনি আরো বলেনঃ আমার উম্মতের একটি দল যেনাকে হালাল মনে করবে’’।[3] আখেরী যামানায় ভাল লোকগণ চলে যাওয়ার পর শুধুমাত্র দুষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের সামনে গাধার ন্যায় ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। তাদের উপরে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।[4]
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এ হাদীছে নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ রয়েছে। কারণ তাঁর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমাদের যামানায় প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হচ্ছে।
কিয়ামতের এই আলামতটি বর্তমান মুসলিম সমাজেও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে, যা বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখেনা। বড় পরিতাপের বিষয় এইযে, অনেক ইসলামী দেশে সরকারীভাবে ব্যভিচারের লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে। এ সমস্ত মুসলিম দেশের শাসকরা রোজ কিয়ামতে আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিবেন!!
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবা।
[4] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।