সমস্ত প্রশংসা আকাশ-যমীনের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর জন্য। যিনি জীবন-মরণের একমাত্র মালিক। তিনি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করার জন্য এবং সীমা লংঘণকারীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্যে সমস্ত মাখলুকের মৃত্যু ও পুনরুত্থান অবধারিত করেছেন। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর বংশধর ও সৎকর্মশীল সাথীদের উপর।
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এ পৃথিবীতে আগমণ করেছি। তাঁর ইচ্ছাতেই আমরা আবার এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। একদল আসছে, অন্য দল বিদায় নিচ্ছে। মানব জাতির এ আগমণ-প্রস্থানকে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তুলনা করা চলে। এক ঝাঁক ঢেউ সমুদ্র সৈকতে এসে শেষ হয়। তার পিছ ধরেই আরেকঝাঁক ঢেউ আগমণ করে এবং তীরে এসে শেষ হয়।
এমনি চলমান নদীর সাথে মানুষের চলার গতির যথেষ্ট মিল রয়েছে। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আপনি এখন যে পানি অবলোকন করছেন সেটি একটু আগে বয়ে যাওয়া পানি নয়। অথচ নদী সেটিই। এমনিভাবে বর্তমান পৃথিবীতে আপনি যাদের সাথে বাস করছেন, তাদের কেউ পাঁচ শত বছর পূর্বের মানুষ নয়। তারা এ পৃথিবীতে আপনার মতই বসবাস করেছিল। তারা চলে যাওয়ার পর আপনি এখন তাদের স্থান দখল করে বসেছেন। আপনিও চলে যাবেন। আপনার স্থানে অন্যরা আসবে।
মানব জাতির চলার এ গতি একদিন থেমে যাবে। সেদিন পৃথিবীতে বসবাসরত সকল মানুষ একসাথে নিঃশেষ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। রাতের তারকাগুলোর আলো নিভে যাবে। সাগরের ঢেউ থেমে যাবে। নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাবে।
এখানেই শেষ নয়; বরং এটি মানব জাতির একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমণ মাত্র। অচিরেই এমন একদিন আসবে যেদিন আমরা সবাই নতুন এক জগতে ফিরে যাবো। সেখানে আমাদের সকল কাজের হিসাব নেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ(
‘‘আর তোমরা সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। তখন যে যা অর্জন করেছে তা সম্পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে। আর তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবেনা’’। (সূরা বাকারাঃ ২৮১) এই দিনকে কুরআনের ভাষায় বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও আখেরাত দিবস, কোথাও বিচার দিবস, কোথাও মহান দিবস, কোথাওও কিয়ামমত দিবস, মহাপ্রলয় ইত্যাদি। কুরআন মাযীদের এমন পৃষ্ঠা খুব কমই পাওয়া যাবে, যেখানে পরকালের অর্থাৎ কিয়ামত দিবসের কথা আলোচিত হয়নি। কারণ কিয়ামত দিবস এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং আখেরাতের শাস্তি কিংবা নেয়ামতের উপর বিশ্বাসই মানুষকে সকল প্রকার কল্যাণের পথে নিয়ে যায় এবং সকল অন্যায় পথ হতে বিরত রাখে।
এ জন্যই পবিত্র কুরআনে বারবার কিয়ামত দিবসের কথা আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের চরিত্র সংশোধনের জন্যে এবং তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্যে পরকালের প্রতি ঈমানের যে প্রভাব রয়েছে, মানব রচিত কোন বিধানেই তা খোঁজে পাওয়া যাবেনা। এজন্যেই যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে এবং যে ব্যক্তি তাতে বিশ্বাস করেনা তাদের উভয়ের চরিত্রে আকাশ-পাতাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
কিয়ামতের আলামতের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আখেরাতের উপর ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুরআন ও সুন্নাহর অনেক স্থানে আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনার পরেই আখেরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের কথা বলা হয়েছে এবং কিয়ামতের আলামতগুলোও বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে কিয়ামতের ছোট-বড় সকল আলামত মুখস্থ করিয়েছেন। সাহাবীগণ তা শিখেছেন এবং তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকেই আলেমগণ এ বিষয়ে অনেক কিতাব রচনা করেছেন। অথচ বাংলা ভাষায় কিয়ামতের আলামত বিষয়ে কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব আছে বলে আমার জানা নেই। তাই আল্লাহর উপর ভরসা করে এ বিষয়ে কিছু লিখার কাজে হাত দিলাম। বইটি পড়ে কিয়ামত দিবসের প্রতি মুসলিম ভাই-বোনদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে এবং মজবুত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন এই ছোট খেদমত তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কবূল করেন এবং বইটির রচনা ও প্রকাশে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করেন। আমীন