১। ইমামের অপেক্ষা করা :

ইমাম থাকতে তাঁর জায়গায় তাঁর বিনা অনুমতিতে অন্যের ইমামতি করা অবৈধ, আর তা বড় বেপরোয়া লোকের কাজ। এ সব লোকেদের ইমামের একটু দেরী সয় না। সামান্য দেরী হলেই আর তাঁর অপেক্ষা না করে জামাআত খাড়া করে দেয়। এ ধরনের ধৈর্যহারা মানুষরা কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমান।

মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত (নামাযের জন্য উঠে) দাঁড়াও না।” (বুখারী ৬৩৭, মুসলিম, সহীহ ৬০৪নং)

তিনি বলেন, “কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং না কেউ কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে বসে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ ৬৭৩নং)

অবশ্য অস্বাভাবিক বেশী দেরী হলে মুক্তাদীদের অধিকার আছে জামাআত করার। কিন্তু ইমাম উপস্থিত হওয়ার যথাসময় পার হওয়ার পর মুক্তাদীদের কোন এক উপযুক্ত ব্যক্তি ইমামতি শুরু করলে ইতিমধ্যে যদি নিযুক্ত ইমাম এসে পড়েন, তাহলে ইমাম অগ্রসর হয়ে নিজ ইমামতি করতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে ঐ মুক্তাদী ইমাম পিছে হ্‌টে যাবেন। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৮৩) যেমন দু-দুবার হযরত আবূ বাক্‌র (রাঃ) নামায পড়াতে শুরু করলে ইতিমধ্যে মহানবী (ﷺ) এসে উপস্থিত হন এবং আবূ বাক্‌র পিছে হ্‌টে যান ও তিনি ইমামতি করেন। (বুখারী ৬৮৪, ৭১২, মুসলিম, সহীহ)

অবশ্য ইমাম চাইলে মুক্তাদী হয়েও নামায সম্পন্ন করতে পারেন। যেমন একদা এক সফরে মহানবী (ﷺ) নিজ প্রয়োজনে দূরে গেলে আসতে দেরী হল। হযরত আব্দুর রহ্‌মান বিন আওফ (রাঃ) ইমামতি করতে শুরু করলেন। ইতিমধ্যে তিনি এসে উপস্থিত হলে আব্দুর রহ্‌মান পিছে হ্‌টতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে ইঙ্গিতে বললেন যে, তুমি ইমামতি করতে থাক। অতঃপর তিনি সেদিন মুক্তাদী হয়ে নামায পড়লেন। (মুসলিম, সহীহ ২৭৪, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১২৩৬নং)

২। ইক্তিদার নিয়ত :

ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় মনে মনে ইক্তিদার নিয়ত (সংকল্প) করা জরুরী। যেহেতু মুক্তাদী অবস্থায় ইমামের অনুসরণ ওয়াজেব, ইমামের পিছনে মুক্তাদী ভুল করলে সহু সিজদা করতে হয় না এবং অনেক সময় ইমামের নামায বাতিল হলে মুক্তাদীরও বাতিল; তাই এই নিয়ত জরুরী। সুতরাং নিয়ত না হলে মুক্তাদীর নামায জামাআতী নামায হবে না। (আহ্‌কামুল ইমামাতি অল-ই’তিমামি ফিস সালাত, আব্দুল মুহ্‌সিন আল-মুনীফ ২০৬পৃ:)

জ্ঞাতব্য যে, ‘ইক্তাদাইতু বিহাযাল ইমাম’ বলে মুখে উচ্চারিতব্য নিয়ত বিদআত।

৩। যথাসময়ে জামাআতে দাঁড়ানো :

ইকামত হয়ে গেলে এবং ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুক্তাদীর বসে থাকা অথবা তেলাওয়াত বা মুনাজাতে মশগুল থাকা অথবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকা উচিৎ নয়। বরং সত্বর উঠে ইমামের সাথে তাকবীরে-তাহ্‌রীমা দিয়ে নামায শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ।

যেমন তাকবীরে-তাহ্‌রীমা ইমামের সাথে না পাওয়া এক বড় বঞ্চনার কারণ। অতএব ইমাম তকবীর দিয়ে ফেললে কোন কথাবার্তায় অথবা মনগড়া নিয়ত আওড়ানোতে অথবা মিসওয়াকের সুন্নত পালনে ব্যস্ত হয়ে তকবীর দিতে দেরী করা মোটেই উচিৎ নয়। ইমামের সাথে তাকবীরে-তাহ্‌রীমার একটি পৃথক মর্যাদা রয়েছে শরীয়তে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ৪০ দিন জামাআতে নামায আদায় করবে এবং তাতে তাহ্‌রীমার তকবীরও পাবে, সেই ব্যক্তির জন্য দুটি মুক্তি লিখা হয়; দোযখ থেকে মুক্তি এবং মুনাফেকী থেকে মুক্তি।” (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪০৪নং)

মুজাহিদ বলেন, এক বদরী সাহাবী একদা তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘তুমি আমাদের সাথে জামাআত পেয়েছ?’ ছেলে বলল, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘প্রথম তাকবীর পেয়েছ?’ ছেলে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘যা তোমার ছুটে গেছে তা এক শত কালো চক্ষুবিশিষ্ট (উৎকৃষ্ট) উটনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর!’ (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ২০২১নং)

অনুরুপভাবে জামাআত শুরু হয়ে গেলে সুন্নত নামাযে মশগুল থাকাও বৈধ নয়। বৈধ নয় কোন সুন্নত শুরু করা। ফজরের সুন্নত হলেও জামাআতের ইকামত শোনার পর তা আর পড়া চলে না। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন নামায খাড়া হয়, তখন ফরয (বা সেই) নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই।” (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৪, মুসলিম, সহীহ ৭১০ নং, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৫২, প্রমুখ) অর্থাৎ, জামাআত খাড়া হলে ফরয বা (ঐ নামায তাকে পড়তে হলে) ঐ নামাযে শামিল হওয়া ছাড়া পৃথক করে কোন নফল বা সুন্নত নামায পড়া বৈধ নয়। অর্থাৎ ইকামতের পর আর কোন সুন্নত বা নফল নামায শুদ্ধ হবে না।। (শরহুন নওবী ৫/২২১, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৫, আউনুল মা’বূদ ৪/১০১)

এক ব্যক্তি মসজিদে এল। তখন আল্লাহর রসূল (ﷺ) ফজরের নামাযে ছিলেন। সে ২ রাকআত নামায পড়ে জামাআতে শামিল হল। নামায শেষে আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাকে বললেন, “হে অমুক! তোমার নামায কোন্‌টা? যেটা আমাদের সাথে পড়লে সেটা, নাকি যেটা তুমি একা পড়লে সেটা? (নাসাঈ, সুনান ৮৬৮নং)

একদা এক ব্যক্তি মুআযযিনের ইকামত বলার সময় নামায পড়ছিল। তা দেখে তিনি বললেন, “একই সাথে কি দুটি নামায!” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/১৭১, ২৫৮৮নং)

একদা ফজরের নামাযের ইকামত হওয়ার সময় মহানবী (ﷺ) দেখলেন, এক ব্যক্তি নামায পড়ছে। তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ফজরের নামায ৪ রাকআত পড়বে?” (মুসলিম, সহীহ ৭১১, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/১৭২)

একদা তিনি ফজরের নামায পড়ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে এক প্রান্তে ২ রাকআত নামায পড়ে তাঁর সাথে জামাআতে শামিল হল। সালাম ফিরার পর তিনি তাকে বললেন, “ওহে অমুক! তুমি কোন্‌ নামাযকে (ফরয বলে) গণ্য করলে? তোমার একাকী পড়া নামাযকে, নাকি আমাদের সাথে পড়া নামাযকে?” (মুসলিম, সহীহ ৭১২নং)

অবশ্য কারো সুন্নত পড়া কালে যদি ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সে দ্বিতীয় রাকআতে থাকলে বাকীটা হাল্কা করে পড়ে পূর্ণ করে নেবে। পক্ষান্তরে প্রথম রাকআতে থাকলে নামায ছেড়ে জামাআতে শামিল হয়ে যাবে। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ২৪/১৪, ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৪৫)

প্রকাশ যে, নামায ছাড়ার সময় সালাম ফিরা বিধেয় নয়। বরং নিয়ত বাতিল করলেই নামায থেকে বের হওয়া যায়। (মা-যা তাফআলু ফিলহা-লা-তিল আ-তিয়াহ্‌, মুহাম্মাদ সালেহ্‌ আল-মুনাজ্বিদ ২২পৃ:)

৪। যথা নিয়মে কাতার বাঁধা :

মহান আল্লাহর তা’যীম প্রকাশের উদ্দেশ্যে কাতার বাঁধার যে নিয়ম আছে সেই অনুযায়ী কাতার বাঁধা মুক্তাদীর কর্তব্য। আর তা যথাক্রমে নিম্নরুপ :-

কাতার সোজা করা :

কাতার সোজা করা ওয়াজেব। কাতার সোজা হবে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এক অপরের কাঁধ ও পায়ের গাঁট বরাবর সোজা রেখে; যাতে একজনের কাঁধ আগে এবং অপর জনের পিছে না হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে আঙ্গুল মিলিয়ে কাতার সোজা হবে না। কারণ, পা ছোট-বড় থাকার ফলে কাতার বাঁকা থেকে যাবে। আর বসা অবস্থায় বাহুমূল বা কাঁধের সাথে বাহুমূল বা কাঁধ বরাবর থাকলে কাতার সোজা বলে ধরা যাবে।

যেমন মসজিদে কাতারের দাগ থাকলে দাগের মাথায় বুড়ো আঙ্গুল রেখে কাতার সোজা হয় না। কারণ, এতে যার পা লম্বা সে কাতার থেকে পিছনের দিকে এবং যার পা ছোট সে কাতারের সামনের দিকে বের হয়ে থাকবে। সুতরাং পায়ের গোড়ালিকে দাগের মাথায় রাখলে তবেই কাতার বাঞ্ছনীয় সোজা হবে।

কাতার সোজা করার ব্যাপারে মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা কাতার সোজা কর। কারণ, কাতার সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা বা পরিপূর্ণ করার অন্তর্গত কর্ম।” (বুখারী ৭২৩, মুসলিম, সহীহ ৪৩৩, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬৮নং)

আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নামাযের (কাতার বাঁধার) সময় নবী (ﷺ) আমাদের বাহুমূল স্পর্শ করতেন ও বলতেন, “সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং বিভিন্নরুপে দাঁড়াও না; তাতে তোমাদের অন্তরসমূহ বিভিন্নমুখী হয়ে যাবে।” (মুসলিম, মিশকাত ১০৮৮নং)

কাতার মিলিয়ে ঘন হয়ে জমে দাঁড়ানো এবং মাঝের ফাঁক বন্ধ করা :

কাতারে দাঁড়ানোর সময় ঘন হয়ে দাঁড়ানো জরুরী; যাতে মাঝে কোন ফাঁক না থাকে। পার্শ্ববর্তী নামাযীর পায়ের পাতার সাথে পায়ের পাতা (পায়ের বাইরের দিকটা সোজা কেবলামুখী করে কনিষ্ঠা আঙ্গুল থেকে গোড়ালি পর্যন্ত অংশ) ও বাহুর সাথে বাহু লাগিয়ে জমে দাঁড়াতে হবে নামাযীকে। আল্লাহর এ দরবারে আমীর-গরীব, ছোট-বড় ও প্রভু-দাসের কোন ভেদাভেদ নেই, কোন বেআদবী নেই। সাহাবাগণ কাতারে পরস্পর এইভাবেই দাঁড়াতেন। তাহলে কি তাঁরা বেআদব ছিলেন? আল্লাহর কসম! না। ঐ দেখেন না, একজন ছাত্র যদি তার শিক্ষকের গায়ে গা লাগিয়ে বসে, তাহলে শিক্ষক ও সমস্ত লোক তাকে বেআদব বলবেই। কিন্তু সেই ছাত্রই যদি বাস বা ট্রেনের সীটে ঐরুপ বসে, তাহলে তখন আর কেউ তাকে বেআদব বলে না। বলা বাহুল্য নামাযের সারিতে পাশাপাশি এই প্রেমের সূত্রে বড়-ছোটর কোন প্রভেদ নেই।

আসলে মনের সাথে মনের মিল থাকলে পায়ের সাথে পা মিলে যাওয়া দূরের কথা নয়। আর মনের মাঝে দূরত্ব থাকলে, মনের মাঝে ঔদ্ধত্ব, অহংকার ও ঘৃণা-বিদ্বেষ থাকলে অথবা ভুল বুঝাবুঝির ফলে অভিমান ও ক্ষেfভ থাকলে অবশ্যই দেহের দূরত্ব বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে আরো মনের দূরত্ব। দূর হবে সম্প্রীতির বাঁধন। শয়তান সেই ভুল বুঝাবুঝির সুযোগে জামাআতের মাঝে বিচ্ছিন্নতা আনতে বড় কৃতকার্য হবে।

পরন্তু যদি আপনি মনে করেন যে, পাশের মুসল্লী থেকে আপনি বড় এবং সে আপনার পায়ে পা লাগালে আপনার সম্মানে বাধবে, তাহলে আপনি আপনার পা তার পায়ে লাগিয়ে দিন। আর এ ক্ষেত্রে আশা করি আপনার মনের ঐ আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হবে না।

পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়ানোর আমল মহানবী (ﷺ)-এর যামানায় প্রচলিত ছিল। তিনি সাহাবাদের সে আমল দেখেও বেআদবী মনে করে বাধা দেননি। তিনি নামাযের মধ্যে যেমন সামনে দেখতেন তেমনি পিছনে। ঘন হয়ে দাঁড়ানোর ব্যাখ্যাতে সাহাবাগণের এই আমল অবশ্যই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাতে তিনি-সম্মতি প্রকাশ করেছেন। বলা বাহুল্য, এ কাজ যে সুন্নত তাতে কোন সন্দেহ্‌ থাকতে পারে না।

কিন্তু বড় দু:খের বিষয় যে, তাবেঈনদের যামানা থেকেই এ আমল অনেকের কাছে বর্জনীয় হয়ে চলে আসছে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আজকে যদি কারোর সাথে ঐ কাজ করি, তাহলে সে সেরকশ (দুরন্ত) খচ্চরের মত চকে যাবে।’ (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৪৭) সুতরাং আল্লাহ তার প্রতি রহ্‌ম করেন যে এই মৃত সুন্নতকে জীবিত করে। (মারা: ২২৫পৃ:)

মহানবী (ﷺ) নামাযের কাতার তীরের মত সোজা করতেন। অতঃপর সাহাবাগণ যখন সে কাজ সমAক বুঝে উঠতে পেরেছেন এ কথা বুঝতে পারতেন, তখন তিনি তাকবীরে তাহ্‌রীমা দিতেন। একদিন তাকবীরে দিতে উদ্যত হতে গিয়ে তিনি দেখলেন, একটা লোকের বুক কাতারের সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা দেখে তিনি বললেন, “আল্লাহর বান্দাগণ! হয় তোমরা ঠিকমত কাতার সোজা কর, নচেৎ আল্লাহ তোমাদের চেহারাসমূহের মাঝে বিভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন।” (বুখারী ৭১৭, মুসলিম, সহীহ ৪৩৬, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬৩, মিশকাত ১০৮৫নং)

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদা নামাযের ইকামত হল। নবী (ﷺ) আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর এবং ঘন হয়ে দাঁড়াও। নিশ্চয় আমি আমার পিছন দিক হতেও দেখে থাকি।” আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর আমাদের প্রত্যেকে নিজ বাহুমূল তার পার্শ্ববর্তী সঙ্গীর বাহুমূলের সাথে এবং নিজ পা তার পায়ের সাথে (হাঁটু তার হাঁটুর সাথে, পায়ের গাঁট তার পায়ের গাঁটের সাথে) লাগিয়ে দিত। (বুখারী ৭১৮, মুসলিম, সহীহ ৪৩৬, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬২নং)

হযরত জাবের বিন সামুরাহ্‌ (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমাদের কাছে এলেন। সে সময় আমরা গোলাকার দলে দলে বিভক্ত ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদেরকে আমি বিক্ষিপ্তরুপে দেখছি কেন?” অতঃপর একদিন তিনি আমাদের কাছে এসে (আমাদেরকে অনুরুপ বিক্ষিপ্ত দেখে) বললেন, “তোমরা প্রতিপালকের সামনে ফিরিশ্‌তাবর্গের কাতার বাঁধার মত কাতার বেঁধে দাঁড়াবে না কি?” আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! ফিরিশ্‌তাবর্গ তাঁদের প্রতিপালকের সামনে কিরুপে কাতার বেঁধে দাঁড়ান।’ তিনি বললেন, “প্রথমকার কাতারসমূহ পূর্ণ করেন এবং ঘন হয়ে জমে কাতার বেঁধে দাঁড়ান।” (মুসলিম, সহীহ ৪৩০, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬১, মিশকাত ১০৯১নং)

প্রকাশ থাকে যে, ঘন করে দাঁড়ানোর অর্থ এই নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং এইরুপ দাঁড়ানোতে নামাযের একাগ্রতা ও বিনয় নষ্ট হতে পারে। অতএব যাতে পায়ে পা এবং বাহুতে বাহু স্বাভাবিকভাবে লেগে থাকে তারই চেষ্টা করতে হবে। আর তার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই পা ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।

সামনের কাতার খালি থাকলে (রাকআত বা রুকূ ছুটে যাওয়ার ভয়ে) পিছনে দাঁড়ানো বৈধ নয়। যেমন সামনের কাতারে ফাঁক দেখা দিলে তা বন্ধ করা জরুরী। সামনে কাতারে যেতে দূর হলে এবং নামাযের মধ্যে হলেও অগ্রসর হয়ে যেতে হবে কাতার মিলানোর উদ্দেশ্যে। এর জন্য রয়েছে আদেশ, পুরস্কার এবং তিরস্কারও।

নবী মুবাশ্‌শির (ﷺ) বলেন, “প্রথম কাতারকে আগে পূর্ণ কর, তারপর তার পরের কাতারকে। অপূর্ণ থাকলে যেন শেষের কাতার থাকে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬৭১নং)

তিনি বলেন, “তোমরা কাতার সোজা কর, বাহুমূলসমূহকে পাশাপাশি সমপর্যায় করে দাঁড়াও, কাতারের ফাঁক বন্ধ কর, পার্শ্ববর্তী নামাযী ভাইদের জন্য নিজ নিজহাতসমূহকে নরম কর এবং শয়তানের জন্য (কাতারে) ফাঁক রেখো না। আর যে ব্যক্তি কাতার মিলিয়ে দাঁড়ায় সে ব্যক্তির সাথে আল্লাহ মিলন (সম্পর্ক) রাখেন এবং যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করে সে ব্যক্তির সাথে আল্লাহ (সম্পর্ক অথবা কল্যাণ) ছিন্ন করেন।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬৬৬নং)

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ তাদের প্রতি রহ্‌ম করেন এবং ফিরিশ্‌তাবর্গ তাদের জন্য দুআ করে থাকেন, যারা কাতার মিলিয়ে দাঁড়ায়। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন।” (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ১৮৪৩নং)

তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি (কাতারের মাঝে) কোন ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে এক গৃহ্‌ নিমাGণ করেন।” (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম আওসাত্ব, সহিহ তারগিব ৫০২নং)

তিনি বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ রহ্‌মত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশ্‌তাবর্গ দুআ করতে থাকেন তাদের জন্য যারা প্রথম কাতার মিলিয়ে (ব্যবধান না রেখে) দাঁড়ায়। আর যে পদক্ষেপ দ্বারা বান্দা কোন কাতারের ফাঁক বন্ধ করতে যায় তা অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অন্য কোন পদক্ষেপ অধিক পছন্দনীয় নয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, অবশ্য এতে পদক্ষেপের উল্লেখ নেই, সহিহ তারগিব ৫০৪নং)

পাশের নামাযীর জন্য নিজের বাহুকে নরম করে দাঁড়ানো :

পাশের নামাযী যাতে মনে কষ্ট না পায় তার জন্য প্রত্যেক নামাযীর কর্তব্য নিজ নিজ বাহুকে নরম করে রাখা। এতে উভয়ের মনে বিদ্বেষ দূর হয়ে প্রীতির সঞ্চার হবে। দূর হবে ঘৃণা ও কাতারের ফাঁক।

মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক তারাই, যারা নামাযের মধ্যে নিজেদের বাহুসমূহকে (পাশের নামাযীর জন্য) নরম রাখে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬৭২নং)

বলা বাহুল্য, পায়ে পা লাগাবার সময়, বাম পা-কে ডান পায়ের নিচে বের করে বসার সময়ও পাশের নামাযীর সাথে কঠেfরতার পরিচয় দেওয়া উচিৎ নয়। বরং কাতারে চাপাচাপি বা ঠসাঠসি থাকলে পা বের করে অপরকে কষ্ট দেওয়ার চাইতে পা না বের করে উক্ত সুন্নত পালন না করাই উত্তম। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ২২/৩০)

কাতারসমূহের মাঝে বেশী দূরত্ব না রাখা :

ইমাম ও প্রথম কাতার এবং অনুরুপ দ্বিতীয় ও তার পরের কাতারসমূহের মাঝে প্রয়োজনের অধিক দূরত্ব রাখা উচিৎ নয়। যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে ঘন কর, কাতারগুলোর মাঝে ব্যবধান কাছাকাছি কর এবং তোমাদের ঘাড়সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখ। সেই আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার জান আছে, নিশ্চয় আমি শয়তানকে কাল ভেঁড়ার বাচ্চার মত তোমাদের কাতারের ফাঁকে ফাঁকে প্রবেশ করতে দেখছি।” (বুখারী ৭১৮, মুসলিম, সহীহ ৪২৩, ৪৩৩, ৪৩৪, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬৭নং)

সামনে কাতার করার মত জায়গা ফাঁক থাকলে পিছনে কাতার বেঁধে নামায হবে না। যেমন পিছনে কাতার বাঁধলে এবং সামনে ফাঁকা জায়গায় রাস্তায় লোক চলাচল করলেও নামায হবে না। মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেলে তারপর রাস্তা পূর্ণ হবে এবং তার পরে দোকান ইত্যাদিতে কাতার বাঁধা চলবে। রাস্তা খালি থাকতে দোকানে কাতার বাঁধা বৈধ হবে না। (মাজমূউফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ্‌ ২৩/৪১০, দ্র: তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৮২পৃ:)

থামসমূহের ফাঁকে কাতার না বাঁধা :

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর যামানায় এই (থামের ফাঁকে কাতার বাঁধা) থেকে দূরে থাকতাম।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৬৭৩নং, তিরমিযী, সুনান)

হযরত কুর্রাহ্‌ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর যুগে আমাদেরকে থামের ফাঁকে কাতার বাঁধতে নিষেধ করা হত এবং কেউ বাঁধলে তাকে সেখান থেকে দস্তুর মত তাড়িয়ে দেওয়া হত।’ (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১০০২, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী)

এর কারণ হল এই যে, মাঝে থাম হওয়ার ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর এই জন্য ইমাম বা একাকী নামাযীর জন্য দুই থামের মাঝে দাঁড়িয়ে নামায পড়া নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। যেমন অধিক ভিঁড়ে মসজিদে জায়গা না থাকলে ঐ জায়গাতেও কাতার বাঁধা প্রয়োজনে বৈধ। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ২০৮-২০৯পৃ:)

পরিশেষে ইবনুল কাইয়েম (রহঃ)-এর একটি মূল্যবান উক্তির উল্লেখ করে এ বিষয়ের ইতি টানি; তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সামনে বান্দার দুই সময় দাঁড়াতে হবে। নামাযে তাঁর সামনে দাঁড়াতে হয় এবং তাঁর সাক্ষাতের সময় (কিয়ামতে) তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি প্রথম সময়ে (নামাযে) সঠিকভাবে দাঁড়াবে, তার জন্য দ্বিতীয় সময়ে (কিয়ামতে) দাঁড়ানো সহ্‌জ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি প্রথম সময়ে দাঁড়ানোতে অবহেলা প্রদর্শন করবে এবং তার যথার্থ হ্‌ক আদায় করবে না, তার জন্য দ্বিতীয় সময়ে (কিয়ামতে) দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।’

৫। ইমামের অনুসরণ করা :

যথা নিয়মে ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজেব এ বং তাঁর অন্যথা আচরণ গুনাহর কাজ।

ইমামের পশ্চাতে সাধারণত: মুক্তাদীর ৪ প্রকার আচরণ হতে পারে :

(ক) অগ্রগমন : অর্থাৎ ইমামের আগে-আগে রুকূ-সিজদা করা অথবা মাথা তোলা। এমন আচরণ গুনাহর কাজ। বরং জেনেশুনে স্বেচ্ছায় করলে নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। (মিন আহ্‌কামিস স্বালাহ্‌, ইবনে উসাইমীন ৪৬পৃ:) যেমন ইমামের আগে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দিলে নামাযের বন্ধনই শুদ্ধ হবে না। ভুলে দিয়ে ফেললে পুনরায় ইমামের তকবীর দেওয়ার পর তকবীর দিতে হবে। (সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১৬৩পৃ:)

মহানবী (ﷺ) বলেন, “ইমাম এই জন্য বানানো হয়েছে যে, তার অনুসরণ করা হবে। সুতরাং তার বিরুদ্ধাচরণ করো না।” (মুসলিম, সহীহ ৪১৪নং) “তোমরা ইমামের পূর্বে (কিছু করতে) তাড়াতাড়ি করো না। যখন সে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তখন তোমরাও ‘আল্লাহু আকবার’ বল। --- যখন সে রুকূ করে তখন তোমরা রুকূ কর। যখন সে ‘সামিআল্লাহু লিমানহামিদাহ্‌ বলে, তখন তোমরা ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকালহাম্‌দ’ বল।” (ঐ ৪১৫নং) “যখন সে রুকূ করে তখন তোমরা রুকূ কর। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত রুকূ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে রুকূ না করে। যখন সে সিজদা করে, তখন তোমরা সিজদা কর এবং ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদা করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে সিজদা না করে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬০৩নং)

তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে কি এ কথার কে উভয় করে না যে, ইমামের আগে মাথা তুললে তার চেহারা অথবা আকৃতি গাধার মত হয়ে যাবে।” (বুখারী ৬৯১, মুসলিম, সহীহ ৪২৭, আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌)

একদা তিনি মুক্তাদীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। অতএব আমার আগে তোমরা রুকূ করো না, সিজদা করো না, বসো না এবং সালাম ফিরো না।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত ১১৩৭নং)

(খ) পশ্চাদগমন : অর্থাৎ ইমামের অনেক পিছনে দেরী করে রুকূ-সিজদা করা। ইমাম রু কূ বা সিজদা থেকে উঠে গেলেও মুক্তাদীর দেরী করে রুকূ বা সিজদাতে পড়ে থাকা। এমন করাও বৈধ নয়। কারণ, রসূল (ﷺ) বলেন, “যখন সে রুকূ করে তখন তোমরা রুকূ কর। যখন সে সিজদা করে, তখন তোমরা সিজদা কর।”

(গ) সহ্‌গমন : অর্থাৎ চটপট ইমামের সাথে সাথেই রুকূ-সিজদা ইত্যাদি করা। এরুপ করাটাও অবৈধ।

(ঘ) অনুগমন : অর্থাৎ, ইমাম রুকূ-সিজদা করলে তবেই রুকূ-সিজদা ইত্যাদি করা। আর এরুপ করাটাই ওয়াজেব।

নবী মুবাশ্‌শির (ﷺ) বলেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত রুকূ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে রুকূ না করে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদা করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে সিজদা না করে।”

সাহাবী বারা’ বিন আযেব (উক্ত আমলের ব্যাখ্যায়) বলেন, ‘আমরা নবী (ﷺ)-এর পিছনে নামায পড়তাম। যখন তিনি ‘সামিআল্লাহু লিমানহামিদাহ্‌’ বলতেন, তখন আমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদা করার জন্য নিজের পিঠ ঝুকাত না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি মাটিতে নিজের কপাল রেখে নিতেন।’ (বুখারী ৬৯০নং, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌)

ইমামের তকবীর বলার পর তকবীর বলতে হবে। ইমামের ‘আমীন’-এর ‘আ-’ বলতে শুরু করার পরেই ‘আমীন’ বলতে হবে।

কোন ওজরের ফলে ইমামের আগে হয়ে গেলে নামায বাতিল নয়। যেমন কোন ব্যথার কারণে অসহ্য যন্ত্রণায় তাড়াতাড়ি ইমামের আগে সিজদা থেকে উঠে পড়লে তা ধর্তব্য নয়।

তদনুরুপ কোন ওজরের ফলে কেউ ইমামের পিছনে থেকে গেলে তাও ধর্তব্য নয়। যেমন যদি কেউ সিজদায় গিয়ে ঘুমিয়ে গেল, অতঃপর পরের রাকআতে রুকূর সময় জেগে উঠল অথবা কোন বড় জামাআতে বা মসজিদের অন্য তলায় নামায পড়তে পড়তে সূরা ফাতিহা শোনার পর মাইকের শব্দ বন্ধ হওয়ার ফলে ইমামের রুকূ করার কথা ঠিকমত বুঝা না গেলে হ্‌ঠাৎ করে জানতে পারা গেল যে, ইমাম ‘সামিআল্লাহু---’ বলে রুকূ থেকে উঠছেন -এ ক্ষেত্রে ছুটে যাওয়া রুক্‌ন নিজে নিজে আদায় করে বাকী নামাযে ইমামের অনুসরণ করবে। আর তার এ নামায হয়ে যাবে।

তবে যে জায়গা থেকে নামায ছুটে গেছে পরের রাকআতে সেই জায়গায় যদি ইমাম চলে গিয়ে থাকেন, তাহলে তার এক রাকআত বাতিল হবে। সেখান থেকেই ইমামের অনুসরণ করে বাকী নামায পড়ে ইমামের (দুই) সালাম ফিরার পর উঠে ছুটে যাওয়া ঐ রাকআত নিজে পড়ে নেবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৬৪-২৬৫)

ইমামের দুই সালাম ফিরার আগে মুক্তাদীর সালাম ফিরা বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১২/৯১)

মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং তোমরা রুকূ, সিজদা, কি য়াম ও বৈঠকে, আর না সালামে আমার অগ্রবর্তী হ্‌য়ো না।” (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত১১৩৭নং)

আফযল হল ইমামের দুই দিকে সালাম ফিরার পরই সালাম ফিরা। অবশ্য যদি কেউ ইমামের ডান দিকে সালাম ফিরার পর ডান দিকে এবং তাঁর বাম দিকে সালাম ফিরার পর বাম দিকে সালাম ফিরে, তাহলে তা দোষের নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৬৭)

অনেকের মতে ইমামের দুই সালাম ফিরার আগে যদি মুক্তাদী সালাম ফিরে দেয় অথবা বাকী নামায পড়ার জন্য উঠে যায়, তাহলে তার নামায নষ্ট হয়ে নফলে পরিণত হয়ে যায়। (ফাতওয়া শায়খ সা’দী ১৭৪পৃ:, মুত্বাসা ৯৭পৃ:)

জ্ঞাতব্য যে, গুপ্ত বিষয়সমূহ ইমামের আগে-পিছে বা সাথে-সাথে হলে কোন দোষের নয়। যেমন সির্রী নামাযে সূরা ফাতিহা, কোনও নামাযে তাশাহহুদ ইমামের আগে বা সাথে সাথে পড়া হলে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, সাধারণত: এর শুরু ও শেষ বুঝা যায় না এবং এ ব্যাপারে ইমামের অনুসরণ করতে মুক্তাদী আদিষ্ট নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৬৭-২৬৮)

বুকেহাত বাঁধেন না এমন ইমামের পশ্চাতে বুকেহাত বেঁধে এবং রফ্‌য়ে ইয়াদাইন করেন না এমন ইমামের পশ্চাতে রফ্‌য়ে ইয়াদাইন করে মুক্তাদীর নামায পড়া ইমামের বিরুদ্ধাচরণ নয়। যেমন যে ইমাম তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতবিশিষ্ট নামাযের শেষ বৈঠকে বাম পা-কে ডান পায়ের রলার নিচে বের করে বসেন না, তাঁর পিছনে মুক্তাদী ঐরুপ বসলে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ হয় না।

জালসায়ে ইস্তিরাহাহ্‌ করেন না এমন ইমামের পিছনে নামায পড়লে প্রথম বা তৃতীয় রাকআতের সিজদা থেকে সরাসরি উঠে গেলে মুক্তাদীর জন্য বসা বৈধ নয়। কারণ, এটি ইমামের বাহ্যিক কর্ম। অতএব তিনি দাঁড়িয়ে গেলে মুক্তাদীর বসে যাওয়া চলবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/৩১২)

অবশ্য অনেকে বলেন, এটি হাল্কা বৈঠক। এতে ইমামের বিরুদ্ধাচরণ হয় না। অতএব ইমাম জালসায়ে ইস্তিরাহাহ্‌র সুন্নত পালন না করলেও মুক্তাদীর হাল্কা বসে সাথে সাথে উঠে গিয়ে তা পালন করায় দোষ নেই।

ইমাম ফজরের নামাযে হাত তুলে কুনুত পড়লে মুক্তাদীর জন্য হাত তুলে আমীন বলে তাঁর অনুসরণ করা জরুরী। তবে সেই ইমামের পিছনে নামায পড়া উত্তম, যে ফজরে কুনুত পড়ে না। যেহেতু তা বিদআত। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৯৩)

ইমাম সালাম ফিরার পর মুক্তাদীদের প্রতি ফিরে না বসা পর্যন্ত মুক্তাদীর উঠে মসজিদ ত্যাগ করা উচিৎ নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৪৩২, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৯১)

ইমাম তাশাহ্‌হুদে দেরী করলে মুক্তাদীর চুপচাপ বসে থাকা উচিৎ নয়। বরং এ সময়ে সহীহ নববী দুআ দ্বারা মুনাজাত করে আল্লাহর কাছে বহু কিছু চেয়ে নেওয়া উচিৎ। কারণ, এটা হল দুআ কবুল হওয়ার সময়। অনুরুপ প্রথম তাশাহ্‌হুদে দেরী করলে আধা তাশাহহুদ পড়ে নীরব বসে থাকা উচিৎ নয়। বরং তাশাহহুদের পর দরুদ এবং তার পরেও সময় থাকলে মু নাজাত করা উচিৎ। আর এ ব্যাপারে তাশাহহুদের বর্ণনায় (১ম খন্ডে) আলোচনা করা হয়েছে।

সতর্কতার বিষয় যে, তাশাহহুদের বৈঠকে ইমামকে দেরী করতে দেখে অনেকে গলা ঝাড়তে শুরু করে। এমন করা তাদের ধৈর্যহীনতা ও অজ্ঞতার পরিচয়।