একটাই কাপড়ে পুরুষের নামায শুদ্ধ, তবে তাতে কাঁধ ঢাকতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৪-৭৫৬ নং) আর খেয়াল রাখতে হবে, যেন শরমগাহ্ প্রকাশ না পেয়ে যায়। (ঐ মিশকাত ৪৩১৫ নং) তওয়াফে কুদূম (হজ্জ ও উমরায় সর্বপ্রথম তওয়াফ) ছাড়া অন্য সময় ইহ্রাম অবস্থায় ডান কাঁধ বের করে রাখা বিধেয় নয়। বলা বাহুল্য নামাযের সময় উভয় কাঁধ ঢাকা জরুরী।
এক ব্যক্তি হযরত উমার (রাঃ) কে এক কাপড়ে নামায পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আধিক্য দান করলে তোমরাও অধিক ব্যবহার কর।’ অর্থাৎ বেশী কাপড় থাকলে বেশী ব্যবহার করাই উত্তম। (বুখারী ৩৬৫ নং)
দরবার আল্লাহর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। তাই নামাযীর উচিৎ, যথাসাধ্য সৌন্দর্য অবলম্বন করে তাঁর দরবারে হাজির হওয়া। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ে, তখন তাকে দু’টি কাপড় পরা উচিৎ। কারণ, আল্লাহ অধিকতম হ্কদার যে, তাঁর জন্য সাজসজ্জা গ্রহণ করা হবে।” (সহীহ জামে ৬৫২ নং)
পক্ষান্তরে নামাযের জন্য এমন নকশাদার কাপড় হওয়া উচিৎ নয়, যাতে নামাযীর মন বা একাগ্রতা চুরি করে নেয়। একদা মহানবী (ﷺ) নকশাদার কোন কাপড়ে নামায পড়ার পর বললেন, “এটি ফেরৎ দিয়ে ‘আম্বাজানী’ (নকশাবিহীন) কাপড় নিয়ে এস। কারণ, এটি আমাকে আমার নামায থেকে উদাস করে ফেলেছিল।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৭ নং)
নামাযীর নামাযের এমন লেবাস হওয়া উচিৎ নয়, যাতে কোন (বিচরণশীল) প্রাণীর ছবি থাকে। কারণ, এতেও নামাযীর মনোযোগ ছিনিয়ে নেয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) এর কক্ষের এক প্রান্তে একটি ছবিযুক্ত রঙিন পর্দা টাঙ্গানো ছিল। একদা মহানবী (ﷺ) বললেন, “তোমার এই পর্দা আমাদের নিকট থেকে সরিয়ে নাও। কারণ, ওর ছবিগুলো আমার নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।” (বুখারী ৩৭৪ নং)
তিনি বলেন, “যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি (বা মূর্তি) থাকে, সে ঘরে ফিরিশ্তা প্রবেশ করেন না।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহীহ জামে ১৯৬১, ১৯৬৩ নং)
অতএব নামাযের বাইরেও এ ধরনের ছবিযুক্ত লেবাস মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।
যে কাপড়ে অমুসলিমদের কোন ধর্মীয় প্রতীক (যেমন ক্রুশ, শঙ্খ প্রভৃতি) থাকে, সে কাপড় (ও অলঙ্কার) ব্যবহার বৈধ নয়। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) বাড়িতে কোন জিনিসে ক্রুশ দেখলেই তা কেটে ফেলতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৪১৫১ নং)
জুতো পবিত্র হলে, তা পায়ে রেখেই নামায পড়া বৈধ। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা ইয়াহুদীদের বিপরীত কর। (এবং জুতো ও মোজা পায়ে নামায পড়।) কারণ, ওরা ওদের জুতো ও মোজা পায়ে রেখে নামায পড়ে না।” (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭৬৫নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন, যেন কেউ বাম হাতে না খায়, কেউ যেন এক পায়ে জুতো রেখে না চলে, কেউ যেন এমনভাবে একটি মাত্র কাপড় দ্বারা নিজেকে জড়িয়ে না নেয়, যাতে তার হাত বের করার পথ থাকে না এবং কেউ যেন একটাই কাপড় পরে, পাছার উপর ভর করে, পায়ের রলা ও হাঁটু দু’টিকে খাড়া করে পেটে লাগিয়ে, হাত দু’টিকে পায়ে জড়িয়ে, লজ্জাস্থান খুলে না বসে। (মুসলিম, মিশকাত ৪৩১৫ নং)
লুঙ্গির ভিতরে কিছু না পরে থাকলে এবং অনুরুপ বসলেও লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার ভয় থাকে। যেমন মহিলাদের শাড়ি-সায়াতেও ঐ একই অবস্থা হতে পারে। অতএব ঐ সব কাপড়ে ঐরুপ বসা বৈধ নয়।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি নামাযে তার লুঙ্গিকে অহংকারের সাথে গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে রাখে, তার এ কাজ হালাল নয় এবং আল্লাহর নিকট তার কোন সম্মান নেই।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহীহ জামে ৬০১২ নং)
প্রকাশ যে, গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়লে নামায কবুল হয় না -এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ নয়। (যয়ীফ আবূদাঊদ, সুনান ১২৪, ৮৮৪ নং)
নাপাকীর সন্দেহ্ না থাকলে প্রয়োজনে মহিলাদের শাল, চাদর, বা শাড়ি গায়ে দিয়ে পুরুষরা নামায পড়তে পারে।
প্রয়োজনে একই কাপড়ের অর্ধেকটা (ঋতুমতী হলেও) স্ত্রীর গায়ে এবং পুরুষ তার অর্ধেকটা গায়ে দিয়ে নামায পড়তে পারে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) রাত্রে নামায পড়তেন। আমি মাসিক অবস্থায় তাঁর পাশে থাকতাম। আর আমার একটি কাপড় আমার গায়ে এবং কিছু তাঁর গায়ে থাকত।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৩৭০ নং)
যে কাপড় পরে থাকা অবস্থায় মেয়েদের মাসিক হয়, সেই কাপড়ে মাসিক লেগে থাকার সন্দেহ্ না থাকলে পবিত্রতার গোসলের পর না ধুয়েও ঐ কাপড়েই তাদের নামায পড়া বৈধ। মাসিক লাগলেও যে স্থানে লেগেছে কেবল সেই স্থান ধুয়ে খুনের দাগ না গেলেও তাতেই নামায পড়া বৈধ ও শুদ্ধ হবে। (আবূদাঊদ, সুনান ৩৬৫নং)
কেবল দুধ পান করে এমন শিশুপুত্র যদি কাপড়ে পেশাব করে দেয়, তাহলে তার উপর পানির ছিটা মেরে এবং না ধুয়ে তাতেই নামায হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি শিশুকন্যার পেশাব হয় অথবা দুধ ছাড়া অন্য খাবারও খায় এমন শিশু হয়, তাহলে তার পেশাব কাপড় থেকে ধুয়ে ফেলতে হবে। নচেৎ নামায হবে না। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৯৭, ৫০২, আবূদাঊদ, সুনান ৩৭৭-৩৭৯ নং)
কাপড়ের পেশাব রোদে শুকিয়ে গেলেও তাতে নামায হয় না। কাপড় থেকে পেশাব পানি দিয়ে ধোয়া জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৯৮)
যে কাপড় পরে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয় সেই কাপড়েও নামায শুদ্ধ। অবশ্য নাপাকী লাগলে বা লাগার সন্দেহ্ হলে নয়। (আবূদাঊদ, সুনান ৩৬৬নং)
টাইট-ফিট প্যান্ট ও শার্ট এবং চুস্ত পায়জামা ও খাটো পাঞ্জাবী পরে নামায মাকরুহ। টাইট হওয়ার কারণে নামাযে একাগ্রতা ভঙ্গ হয়। তাছাড়া কাপড়ের উপর থেকে (বিশেষ করে পিছন থেকে) শরমগাহের উঁচু-নীচু অংশ ও আকার বোঝা যায়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭৫)
মহিলাদের লেবাসে চুল, পেট, পিঠ,হাতের কব্জির উপরি ভাগের অঙ্গ (কনুই, বাহু প্রভৃতি) বের হয়ে থাকলে নামায হয় না। কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্তহাত বের হয়ে থাকবে। পায়ের পাতাও ঢেকে নেওয়া কর্তব্য। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৬/১৩৮, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৮, কিদারেমী, সুনান ৯৪পৃ:) অবশ্য সামনে কোন বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢেকে নিতে হবে।
ঘর অন্ধকার হলেও বা একা থাকলেও নামায পড়তে পড়তে ঢাকা ফরয এমন কোন অঙ্গ প্রকাশ পেয়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। সেই নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৫)
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “কোন সাবালিকা মেয়ের মাথায় চাদর ছাড়া তার নামায কবুল হয় না।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৭৬২নং)
পুরুষের দেহের ঊর্ধ্বাংশের কাপড় (চাদর বা গামছা) সংকীর্ণ হলে মাথা ঢাকতে গিয়ে যেন পেট-পিঠ বাহির না হয়ে যায়। প্রকাশ যে, নামাযে পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা জরুরী নয়। সৌন্দর্যের জন্য টুপী, পাগড়ী বা মাথার রুমাল মাথায় ব্যবহার করা উত্তম। আর এ কথা বিদিত যে, আল্লাহর নবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবাগণ কখনো কখনো এক কাপড়েও নামায পড়েছেন। তাছাড়া কতক সলফ সুতরার জন্য কিছু না পেলে মাথার টুপী খুলে সামনে রেখে সুতরা বানাতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৯১নং)
প্রকাশ যে, পরিশ্রম ও মেহনতের কাজের ঘর্ম সিক্ত, কাদা বা ধুলোমাখা দুর্গন্ধময় লেবাসে মহান বাদশা আল্লাহর দরবার মসজিদে আসা উচিৎ নয়। কারণ, তাতে আল্লাহর উপস্থিত ফিরিশ্তা তথা মুসল্লীগণ কষ্ট পাবেন। আর এই জন্যই তো কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।