আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনুল কারীমে কুপ্রবৃত্তির গোলামী থেকে নিষেধ এবং পবিত্রতা, নফসের কামনা-বাসনা ও ভ্রষ্টতা হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ করেছেন। এ ছাড়া আরো নিষেধ করেছেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে। কুরআনের যেখানেই কুপ্রবৃত্তির কথা উল্লেখ হয়েছে সেখানে ভর্ৎসনা ও নিষেধ করাই হয়েছে। কারণ যে কোন পাপ ও অন্যায় সংঘটিত হওয়ার পেছনে রয়েছে কুপ্রবৃত্তির গোলামী। আদম ও হাওয়া (আঃ)এর জান্নাত থেকে বের হওয়া, ইবলীসের বহিস্কার ও সমস্ত জাতির ধ্বংসের একমাত্র কারণই হচ্ছে কুপ্রবৃত্তির গোলামী তথা মনের পূজা।

ইমাম ইবনুল কায়োম (রহ:) বলেন: যখন অধিকাংশ সময় প্রবৃত্তি, শাহওয়াত তথা নফসের কামনা-বাসনা ও রাগের অনুসারীরা উপকারের সীমায় দাঁড়াই না, তখন প্রবৃত্তি, শাহওয়াত ও রাগকে ভর্ৎসনাই করা হয়েছে। কারণ সাধারণত ক্ষতিই প্রাধান্য পেয়ে থাকে[1]

(ক) কুরআনে নিষেধ ও ভর্ৎসনা

১. আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী দাউদকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করেন:

یٰدَاوٗدُ  اِنَّا جَعَلۡنٰکَ خَلِیۡفَۃً فِی الۡاَرۡضِ فَاحۡکُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ بِالۡحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعِ الۡہَوٰی فَیُضِلَّکَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَضِلُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ  لَہُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌۢ بِمَا نَسُوۡا یَوۡمَ الۡحِسَابِ 

“হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।” [সূরা ছোয়াদ: ২৬]

২. আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর খালীল ও হাবীব মুহাম্মদ ﷺ কে মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করে বলেনঃ

قُلۡ  اِنِّیۡ نُہِیۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ؕ قُلۡ  لَّاۤ  اَتَّبِعُ  اَہۡوَآءَکُمۡ ۙ  قَدۡ ضَلَلۡتُ اِذًا وَّ مَاۤ  اَنَا مِنَ  الۡمُہۡتَدِیۡنَ

(১) “আপনি বলে দিন: আমাকে তাদের এবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের এবাদত কর। আপনি বলে দিন: আমি তোমাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করব না। কেননা, তাহলে আমি পথভ্রান্ত হয়ে যাবো এবং সুপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হবো না।” [সূরা আন'আম: ৫৬]

قُلۡ ہَلُمَّ  شُہَدَآءَکُمُ  الَّذِیۡنَ یَشۡہَدُوۡنَ اَنَّ اللّٰہَ  حَرَّمَ  ہٰذَا ۚ فَاِنۡ شَہِدُوۡا فَلَا تَشۡہَدۡ مَعَہُمۡ ۚ وَ لَا تَتَّبِعۡ  اَہۡوَآءَ  الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ وَ ہُمۡ بِرَبِّہِمۡ یَعۡدِلُوۡنَ

(২) "আপনি বলুন তোমাদের সাক্ষীদেরকে আন, যারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা'য়ালা এগুলো হারাম  করেছেন। যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তবে আপনি এ সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না এবং তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, যারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং যারা স্বীয় প্রতিপালকের সমতুল্য অংশীদার করে।"

[সূরা আন'আম: ১৫০]

ثُمَّ جَعَلۡنٰکَ عَلٰی شَرِیۡعَۃٍ  مِّنَ الۡاَمۡرِ فَاتَّبِعۡہَا وَ لَا تَتَّبِعۡ  اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

(৩) "এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।" (সূরা জাসিয়া ১৮/

وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ مُہَیۡمِنًا عَلَیۡہِ فَاحۡکُمۡ  بَیۡنَہُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ عَمَّا جَآءَکَ مِنَ الۡحَقِّ ؕ لِکُلٍّ جَعَلۡنَا مِنۡکُمۡ شِرۡعَۃً

 (৪) "আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।” [মায়েদা: ৪৮)

وَ اَنِ احۡکُمۡ بَیۡنَہُمۡ  بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ  وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ وَ احۡذَرۡہُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنُوۡکَ عَنۡۢ بَعۡضِ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ اِلَیۡکَ

(৫) “আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাজিল করেছেন।" [সূরা মায়েদা: ৪৯

فَلِذٰلِکَ فَادۡعُ ۚ وَ اسۡتَقِمۡ  کَمَاۤ   اُمِرۡتَ ۚ وَ لَا تَتَّبِعۡ  اَہۡوَآءَہُمۡ

(৬) "সুতরাং আপনি ওর দিকে সবাইকে আহবান করুন এবং এতেই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।" [সূরা শূরা: ১৫]

وَ لَنۡ تَرۡضٰی عَنۡکَ الۡیَہُوۡدُ وَ لَا النَّصٰرٰی حَتّٰی تَتَّبِعَ مِلَّتَہُمۡ ؕ قُلۡ اِنَّ ہُدَی اللّٰہِ ہُوَ  الۡہُدٰی ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ بَعۡدَ الَّذِیۡ جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ

(৭) "আর ইহুদি ও খ্রীষ্টানরা আপনি তাদের ধর্ম অনুসরণ না করা পর্যন্ত আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। আপনি বলুন! আল্লাহর পথ-নির্দেশিত পথই সুপথ এবং তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তৎপর যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তবে আল্লাহ হতে আপনার জন্যে কোনই অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।" [সূরা বাকারা: ১২০]

وَ لَئِنۡ اَتَیۡتَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ بِکُلِّ اٰیَۃٍ مَّا تَبِعُوۡا قِبۡلَتَکَ ۚ وَ مَاۤ اَنۡتَ بِتَابِعٍ قِبۡلَتَہُمۡ ۚ وَ مَا بَعۡضُہُمۡ  بِتَابِعٍ قِبۡلَۃَ بَعۡضٍ ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ  ۙ اِنَّکَ اِذًا  لَّمِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

    (৮) “আপনি যদি আহলে কিতাবদের কাছে সমুদয় নিদর্শন উপস্থাপন করেন, তবুও তারা আপনার কেবলা মেনে নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন না। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, সে জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয়ই আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা বাকারা: ১৪৫]

 کَذٰلِکَ اَنۡزَلۡنٰہُ حُکۡمًا عَرَبِیًّا ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ بَعۡدَ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا  وَاقٍ

 (৯) “এনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নিদর্শনরূপে অবতারণ করেছি। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী।” [সূরা রা'দ:৩৭

৩. আল্লাহ তা'য়ালা আহলে কিতাবকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করে বলেন:

قُلۡ یٰۤاَہۡلَ الۡکِتٰبِ لَا تَغۡلُوۡا فِیۡ دِیۡنِکُمۡ غَیۡرَ  الۡحَقِّ وَ لَا  تَتَّبِعُوۡۤا اَہۡوَآءَ قَوۡمٍ قَدۡ ضَلُّوۡا مِنۡ قَبۡلُ وَ اَضَلُّوۡا کَثِیۡرًا وَّ ضَلُّوۡا عَنۡ سَوَآءِ السَّبِیۡلِ

“বলুন: হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা স্বীয় ধর্মে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং এতে ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।” [সূরা মায়েদা: ৭৭]

৪. আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদেরকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করে বলেন:

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡا قَوّٰمِیۡنَ بِالۡقِسۡطِ شُہَدَآءَ  لِلّٰہِ وَ لَوۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ اَوِ الۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ ۚ اِنۡ یَّکُنۡ غَنِیًّا اَوۡ فَقِیۡرًا فَاللّٰہُ اَوۡلٰی بِہِمَا ۟ فَلَا تَتَّبِعُوا الۡہَوٰۤی اَنۡ تَعۡدِلُوۡا ۚ وَ اِنۡ تَلۡوٗۤا اَوۡ تُعۡرِضُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ  کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক: আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনদের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব তোমরা বিচার করতে গিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা-নিসা: ১৩৫]

৫. প্রবৃত্তির অনুসরণ করলে আসমান-জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে বলে মহান আল্লাহর ঘোষণা:

وَ لَوِ اتَّبَعَ الۡحَقُّ اَہۡوَآءَہُمۡ لَفَسَدَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ بَلۡ اَتَیۡنٰہُمۡ بِذِکۡرِہِمۡ فَہُمۡ عَنۡ ذِکۡرِہِمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ

"সত্য যদি তাদের কাছে প্রবৃত্তির অনুসারী হত, তবে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। বরং আমি তাদের দান করেছি। উপদেশ, কিন্তু তারা তাদের উপদেশ অনুধাবন করে না।" [সুরা মু'মিনুন : ৭১

৬. আল্লাহ তা'য়ালা প্রবৃত্তির গোলামীর ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেন:

فَلَا یَصُدَّنَّکَ عَنۡہَا مَنۡ لَّا یُؤۡمِنُ بِہَا وَ اتَّبَعَ  ہَوٰىہُ  فَتَرۡدٰی

(১) “সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন আপনাকে তা থেকে নিবৃত না করে। নিবৃত হলে আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন।” [সূরা ত্ব-হা: ১৬]

اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ  عَلَیۡہِ   وَکِیۡلًا

(২) “আপনি কি তাদের দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদারী হবেন?" [সূরা ফুরকান: ৪৩]

فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ  اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ  اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ اَضَلُّ  مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ  لَا  یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ

(৩) "অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।" [সূরা কাসাস: ৫০]

بَلِ  اتَّبَعَ  الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ بِغَیۡرِ  عِلۡمٍ ۚ فَمَنۡ  یَّہۡدِیۡ مَنۡ  اَضَلَّ  اللّٰہُ ؕ وَ  مَا لَہُمۡ  مِّنۡ  نّٰصِرِیۡنَ

(৪) "বরং যারা জালেম, তারা অজ্ঞতাবশত তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। অতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। ” [সূরা রূম: ২৯ |

اَفَمَنۡ کَانَ عَلٰی بَیِّنَۃٍ  مِّنۡ  رَّبِّہٖ  کَمَنۡ زُیِّنَ  لَہٗ  سُوۡٓءُ عَمَلِہٖ  وَ اتَّبَعُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ

(৫) "যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি তার সমান, যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।" [সূরা মুহাম্মদ ১৪ ]

وَ مِنۡہُمۡ  مَّنۡ یَّسۡتَمِعُ  اِلَیۡکَ ۚ حَتّٰۤی  اِذَا خَرَجُوۡا مِنۡ عِنۡدِکَ قَالُوۡا لِلَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ  مَاذَا  قَالَ  اٰنِفًا ۟ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ طَبَعَ اللّٰہُ  عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ وَ اتَّبَعُوۡۤا  اَہۡوَآءَہُمۡ

(৬) “তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত তাদেরকে বলে। এইমাত্র তিনি কি বললেন? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।” [সূরা মুহাম্মাদ:১৬]

اَفَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ  اِلٰـہَہٗ  ہَوٰىہُ وَ اَضَلَّہُ  اللّٰہُ  عَلٰی  عِلۡمٍ  وَّ خَتَمَ عَلٰی سَمۡعِہٖ وَ قَلۡبِہٖ وَ جَعَلَ عَلٰی بَصَرِہٖ  غِشٰوَۃً ؕ فَمَنۡ یَّہۡدِیۡہِ  مِنۡۢ  بَعۡدِ اللّٰہِ ؕ اَفَلَا  تَذَکَّرُوۡنَ

(৭) "আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে স্বীয় উপাস্য স্থীর করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথপ্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা করবে না।" (সূরা জাসিয়া ২৩]

اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ  عَلَیۡہِ   وَکِیۡلًا

اَمۡ  تَحۡسَبُ اَنَّ  اَکۡثَرَہُمۡ  یَسۡمَعُوۡنَ  اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ  ہُمۡ   اِلَّا  کَالۡاَنۡعَامِ  بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ  سَبِیۡلًا

(৮) “আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত [সূরা ফুরকান: ৪৩,৪৪ |

وَ کَذَّبُوۡا وَ اتَّبَعُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ وَ کُلُّ اَمۡرٍ مُّسۡتَقِرٌّ

 (৯) "তারা মিথ্যারোপ করেছে এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরকৃত হয়।" (সুরা কামার: ৩]

৭. আদম [আঃ]-এর সস্তান কাবীলের আপন ভাই হাবীলকে হত্যার কারণ ছিল প্রবৃত্তির গোলামী |

فَطَوَّعَتۡ  لَہٗ نَفۡسُہٗ  قَتۡلَ اَخِیۡہِ فَقَتَلَہٗ  فَاَصۡبَحَ  مِنَ  الۡخٰسِرِیۡنَ

“অতঃপর তার নফস তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।" [সূরা মায়েদা: ৩০]

৮. মিশরের আজীজের স্ত্রী জুলায়খার ইজ্জতহানীর কারণ ছিল প্রবৃত্তির গোলামী:

وَ مَاۤ  اُبَرِّیٴُ نَفۡسِیۡ ۚ اِنَّ  النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ  اِلَّا مَا رَحِمَ  رَبِّیۡ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ  غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ

“আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের প্রবৃত্তি মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়- আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।" [ সূরা ইউসুফ: ৫৩

৯. তওরাতের হাফেজ বাল'আম ইবনে বাউরের ধ্বংসের কারণ প্রবৃত্তির গোলামী

وَ اتۡلُ عَلَیۡہِمۡ  نَبَاَ الَّذِیۡۤ  اٰتَیۡنٰہُ  اٰیٰتِنَا فَانۡسَلَخَ مِنۡہَا فَاَتۡبَعَہُ الشَّیۡطٰنُ فَکَانَ مِنَ  الۡغٰوِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾ وَ لَوۡ شِئۡنَا لَرَفَعۡنٰہُ بِہَا وَ لٰکِنَّہٗۤ اَخۡلَدَ اِلَی الۡاَرۡضِ وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ ۚ فَمَثَلُہٗ  کَمَثَلِ الۡکَلۡبِ ۚ اِنۡ  تَحۡمِلۡ عَلَیۡہِ یَلۡہَثۡ اَوۡ تَتۡرُکۡہُ یَلۡہَثۡ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُ الۡقَوۡمِ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا ۚ فَاقۡصُصِ الۡقَصَصَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ

“আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ নান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পিছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ে রইল সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত, যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।" [সূরা আ'রাফ ১৭৫ ১৭৬]

(খ) হাদীসে নিষেধ ও ভর্ৎসনা

ععَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ

হুযাইফা [রাঃ] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি: “মানুরের গাঁথা পাতার সারির মত অন্তরের প্রতি একটির পর অপরটি ফেৎনা আসতে থাকবে। অতঃপর যে অন্তর সে ফেৎনার প্রীতি পান করবে তাতে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে। আর যে অন্তর সে ফেৎনাকে অস্বীকার করবে তাতে একটি সাদা দাগ পড়বে। এভাবে অন্তর দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি হলো পিচ্ছিল অন্তর যাতে আসমান জামিন থাকা অবধি ফেৎনা কনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হলো: কালো-ধূসরবর্ণ অন্তর উপর করা জগের মত। যা ভালকে ভাল ও মন্দকে মন্দ উপলব্ধি করতে পারে না বরং তার কুপ্রবৃত্তির প্রীতির অনুসরণ করে । [2]

من عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: قال رسول الله عليه وسلم: « لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواة لبعـة ملی لما جنت به . [٢٧٦] شرح الـــه وقال النووي في أربعينه هذا حديث صحيح رويناه في كتاب الحجة بإسناد صحيح

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস [আঃl থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “ততক্ষণ তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমার আনিত বিধানের অনুগত না হবে।[3]

عن أبي برزة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قـال د إنما أختي عليكم شهوات الغـي فـي بـطـونكم وفــروحكم وصلات الهوى ». رواه أحمد والطبراني والبزار وبعض الدهم رجال العات صحيح الترغيب والترهيب - (ج ٢ / م ٢٤٦)

আবু বারজা [আঃ] হতে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (ﷺ) বলেছেন: "আমি তোমাদের প্রতি তোমাদের পেট ও লজ্জাস্থানের কামনা-বাসনার ভ্রষ্টতা ও কুপ্রবৃত্তির গুমরাহী হতে ভয় করছি।”[4]

عن أبي عامر الفوزني آلة حج مع معاوية فسمعة يقول قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فذكر : أن أهل الكتاب قبلكم تفرقوا على النتين وسبعين فرقة في الأهواء، الا وإن هذه الأمة ستطرق على ثلاث وستعين فرقة في الأهواء، كلها في النار الا واحدة، وهي الجماعة، ألا وإله يخرج في أنني قـوم بهرود هوى بتجاري بهم ذلك الهوى كما بتجاري الكل بصاحبه لا يدع منه عرفا ولا مفصلاً إلا دخله».

আবু আমের হাওজানী হতে বর্ণিত, তিনি মুআবিয়া (রাঃ)এর সঙ্গে হজ্ব করা অবস্থায় তাঁকে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন: তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবরা কুপ্রবৃত্তির কারণে বাহত্তর দলে বিভক্ত হয়। আর জেনে রাখ। আমার এ উম্মত কুপ্রত্তির কারণে অদূর ভবিষ্যতে তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল বাদে বাকিগুলো সব জাহান্নামে যাবে। সে দলটি হলো: সকল মুসলিমদের সম্মিলিত জামাত। আরো জেনে রেখ! আমার উম্মত থেকে একটি জাতি বের হবে যারা তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করবে। সে কুপ্রবৃত্তি তাদেরকে ঐভাবে দৌড়াবে যেমন কুকুর তার সঙ্গীর সাথে দৌড়াই। প্রবৃত্তি তাদের প্রতিটি রগরেশার ও জোড়ে জোড়ে প্রবেশ করবে।"[5]

ثلاث منحبات : خشية الله تعالى في السر و العلائية و العدل في الرضا و الغصب و الفصل في الفقر و العلى و ثلاث مهلكات . هری منبع و شخ مطاع و إنجاب المرء بنفسه » - تخريج السيوطي ( أبو الشيخ في التوبيخ طلس ) في أنس تحقيق الألباني انظر حديث رقم : ٣٠٣٩ في صحيح الجامع.

নবী (ﷺ) বলেছেন: “তিনটি নাজাতকারী জিনিস: প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর ভয়, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে ইনসাফ ও স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় মিতব্যয়ীতা। আর তিনটি জিনিস ধ্বংসকারী: কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ, মান্য কৃপণতা এবং মানুষের আত্মমুগ্ধতা।[6]

أفضل الجهاد أن يجاهد الرجل نفسة و هواة .. تخريج السيوطي ( ابن النجار ) عن أبي در تحقيق الألباني ( صحيح ) انظر حديث

নবী (ﷺ) বলেন: "মানুষের সর্বোত্তম জিহাদ হলো তার নিস ও কুপ্রবৃত্তির সাথে জিহাদ।[7]

(গ) বিভিন্ন মনীষীদের বাণীতে নিষেধ ও ভর্ৎসনা

১. আলী ইবনে আবি তালেব [রাঃ] বলেন: “আমি দু'টি জিনিসকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। বড় আশা ও প্রবৃত্তির গোলামী; কারণ বড় আশা আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়। আর প্রবৃত্তির গোলামী সত্যকে গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। জেনে রাখ! দুনিয়া পেছনে যাচ্ছে আর আখেরাত সামনে আসতেছে। আর প্রতিটির সন্তান রয়েছে। অতএব, আখেরাতের সন্তান হওয়ার চেষ্টা কর এবং দুনিয়ার সন্তান হওয়ার চেষ্টা করা না। এ জগতে আমল আছে হিসাব নেই এবং পরকালে হিসাব আছে আমল নেই।”

২. ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বলেন: দাবিতে প্রবৃত্তির অনুসারীদের চাইতে বড় মিথ্যুক আর কাউকে দেখিনি। অনুরূপ মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানে শিয়া রাফেযীদের চাইতে বড় মিথ্যাসাক্ষী প্রদানকারী কাউকে দেখিনি।[8]

৩. ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ বলেন: “দ্বীনের জন্য সবচেয়ে সাহায্যকারী চরিত্র হলো আল্লাহমুখী হওয়া এবং ধ্বংসের জন্য হলো প্রবৃত্তির গোলামী। প্রবৃত্তির গোলামীর মধ্য হতে হচ্ছে দুনিয়ামুখী হওয়া। দুনিয়ামুখী হওয়ার মধ্য হতে সম্পদ ও পদের ভালবাসা। সম্পদ ও পদের ভালবাসা হারামকে হালাল করে এবং এর দ্বারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি আসে। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি এমন একটি রোগ যার ঔষধ তাঁর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য আর কিছুই নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি এমন ঔষধ যার পরে আর কোন রোগ ক্ষতি করতে পারে না। অতএব, যে তার প্রতিপালককে রাজি করাতে চায় তাকে তার প্রবৃত্তিকে নারাজ করাতে হবে: কারণ যে তার প্রবৃত্তিকে নারাজ করতে পারবে না সে তার প্রতিপালককে খুশী করাতে পারবে না। আর মানুষ তার প্রতি দ্বীনের কোন কাজ যখনই ভারী মনে করে ছাড়তে থাকবে একদিন এমন হবে যে, তার সাথে দ্বীনের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

৪. মুযাইল ইবনে ইয়ায বলেন: “যার প্রতি তার প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনার অনুসরণ বিজয়ী হবে, তার থেকে সকল প্রকার তওফিকের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে।”

৫. আতা বলেন: "যার প্রবৃত্তি তার বিবেকের উপর এবং অধৈর্য ধৈর্যের উপর জয়ী হবে, সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।”

৬. আলী ইবনে সাহল বলেন: "বিবেক ও প্রবৃত্তি দু'টির মাঝে ঝগড়া লাগে। এরপর তওফিক হয় বিবেকর বন্ধু এবং অপদস্ত হয় প্রবৃত্তির বন্ধু। আর নফস দুইজনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে যার জয়ী হয় তার সঙ্গে থাকে। "

৭. ইমাম গাজ্জালী বলেন: “মূলত দ্বীনের সকল বৈশিষ্ট্য ও সুন্দর চরিত্র ভালবাসার ফলাফল। আর যে ভালবাসা ফলপ্রসূ নয়, তা হচ্ছে প্রবৃত্তির গোলামী যা নিকৃষ্ট চরিত্র। এ ছাড়া যখন প্রবৃত্তির গোলামী জয়ী হয় তখন তোমাকে সে বধির ও অন্ধ বানিয়ে ফেলে। আর তখন ভয় থাকে না হেদায়েতে জটিলতা বরং ভয় হয় প্রবৃত্তির গোলামীর।"

৮. ইমাম ইবনুল কায়্যেম বলেন: “প্রতিটি বান্দার শুরু ও শেষ রয়েছে, যার শুরুটা প্রবৃত্তির গোলামী দ্বারা তার শেষ অপদস্ত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও বালা-মসিবত। যতটুকু প্রবৃত্তির গোলামী হবে ততটুকু হবে তার বিপদ। বরং তার শেষ হবে এমন আজাব দ্বারা  যা সর্বদা সে অন্তরে ব্যথা অনুভব করতে থাকবে। ----- আর যার শুরুটা হবে প্রবৃত্তির বিপরীত করা এবং বিবেকের অনুসরণ দ্বারা তার পরিণাম হবে ইজ্জত সম্মান, অভাবমুক্ত এবং আল্লাহ ও মানুষের নিকট সম্মানিত।

৯. আবু আলী আন্দাক্কাক বলেন: "যে যৌবনে তার নফসের কামনা-বাসনার মালিক হতে পারবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তার পরিণতবয়সে সম্মানিত করবেন।"

১০. মুহাল্লাব ইবনে আবী সুরাকে বলা হলো: কী দ্বারা এসব অর্জন করতে পেরেছেন? তিনি বললেন: দৃঢ়তার অনুসরণ এবং প্রবৃত্তির নাফরমানি দ্বারা। ইহাই হচ্ছে দুনিয়ার শুরু ও শেষ। আর আখেরাতে আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাতকে শেষ স্থান করে দিয়েছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে নিষেধ করে। আর যে প্রবৃত্তির গোলামী করে তার জন্য করেছেন জাহান্নামকে।"

১১. জুবাইর বলেন:"মানুষ তার নফসকে যখন যা চাবে তাই দেবে ও বারণ করবে না তখন সে প্রতিটি বাতিলের কামনা করবে এবং বয়ে আনবে তার জন্যে পাপ ও লাঞ্ছনা।"

১২. আবু ইসহাক শীরাজী বলেন " যদি তোমাকে তোমার নফস একদিন কামনা-বাসনার কথা বলে আর তার বিপরীত করার কোন রাস্তা থাকে তবে সম্ভবপর বিপরীত কর; কারণ নফসের চাওয়া হলো শত্রু এবং তার বিপরীত হলো মি।

১৩. মালেক ইবনে দীনার বলেন: “তওরাতে পড়েছি যে, যার জ্ঞান তার প্রবৃত্তির উপরে বিজয়ী সেই হলো জয়ী বিজ্ঞ আলেম।

১৪. ইবরাহীম তায়মী তাঁর দোয়াতে বলতেন: “হে আল্লাহ! সত্যের ব্যাপারে মতভেদ করা হতে আমাকে তোমার কিতাব ও নবীর সুন্নত দ্বারা হেফাজত কর আরো হেফাজত কর তোমার হেদায়েত দ্বারা প্রবৃত্তির গোলামী করা থেকে, পথভ্রষ্ট থেকে, সংশয়, বক্রতা ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে।

১৫. কেউ বলেছেন: আসমানের নিচে আল্লাহ ছাড়া সবচেয়ে যার বেশি এবাদত করা হয় তা হলো: প্রবৃত্তির এবাদত তথা মন পূজা।

১৬. কোন একজন সালাফে সালেহীন বলেছেন: যে তার প্রবৃত্তির উপরে বিজয়ী সে একটি শহর বিজয়কারীর চাইতেও বেশি শক্তিশালী।

১৭. কেউ বলেছেন: প্রবৃত্তির গোলামী সবচেয়ে বড় বিপদ এবং দ্বীন-দুনিয়ার মারত্মক ক্ষতিকারক।

১৮. কেউ বলেছেন: জমিনের উপর সবচেয়ে ঘৃণ্য উপাস্য হলো প্রবৃত্তি।

১৯. কেউ বলেছেন: যদি তোমান নিকট দু'টি জিনিসের মাঝে শংসয় ঘটে তাহলে তোমার নফসের উপর যেটি ভারী মনে হয় সেটির অনুসরণ কর: কারণ নফসের উপর সত্যটি ছাড়া ভারী হয় না।

২০. কেউ বলেছেন: প্রবৃত্তির বিপরীত করাতেই রয়েছে দ্বীনের ও আখেরাতের সম্মান এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ইজ্জত। আর প্রবৃত্তির গোলামীতে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে অপমান এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অপদস্ত ।

২১. কেউ বলেছেন: আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবীর মাধ্যমে যে সকল এবাদত, আনুগত্য, আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি পাঠিয়েছেন তার সবকিছুর বিপরীত হয় শুধুমাত্র প্রবৃত্তির অনুসরণের দ্বারাই।

২২. কেউ বলেছেন: যখন বিবেক শরিয়তের অনুসারী না হয় তখন তার জন্যে প্রবৃত্তি ও শাহওয়াত ছাড়া আর কোন উপাস্য থাকে না। প্রবৃত্তির গোলামীতে ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নেই।

২৩. কেউ বলেছেন: তোমার সাথী তুমি যা পছন্দ কর তাতে একমত এবং তুমি যা ঘৃণা কর তাতে দ্বিমত হলে বুঝতে হবে তুমি প্রবৃত্তির গোলামী করছ। আর যে তার প্রবৃত্তির গোলামী করে সে দুনিয়ার আরাম আয়েশ তালাশকারী।

[1] রাজিয়াতুল মুহিদীন। পৃ-৪০৯
[2] মুসলিম ২৬৪
[3] সরহুস সুন্নাহ, ইমাম নববী তার আরবায়ীনে বলেনঃ এ হাদিসটি সহিহ, আমি কিতাবুল হুদাতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছি।
[4] আহমাদ,তাবারানীওবাজ্জার, হাদিসটি সহিহ, আত তারগীব ও আত তারহীব, আলবানী ২য়খন্ড,পৃঃ২৪৬ হাঃ২১৪৩
[5] হাদীসটি সহীহ লিগাইরিহী, যিলালুলজান্নাহ-আলবানী:১/২
[6] হাদীসটি হাসান, সহীহুল জামে—আলবানী হা: নং ৩০৩৯
[7] হাদীসটি সহীহ, সহীহুল জামে—-আলবানী হা: নং ১০৯৯
[8] আল-ইবাদাতুল কুবরা-ই বা 2/20