ঈমানের ছয়টি রুকনের মধ্যে তাক্বদীর অন্যতম। ঈমানের এ গুরুত্বপূর্ণ রুকনটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত কেউ মুমিন হতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ﴾ [سورة القمر: 49]
‘নিশ্চয় প্রত্যেকটি জিনিসকে আমরা ‘ক্বাদর’ তথা পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি (আল-ক্বামার ৪৯)। ইবনু কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এই আয়াত দ্বারা তাক্বদীর সাব্যস্ত হওয়ার দলীল গ্রহণ করেন।[1] অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَّقْدُورًا﴾ [سورة الأحزاب 38]
‘আর আল্লাহ্র বিধান সুনির্দিষ্ট, অবধারিত’ (আল-আহযাব ৩৮)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় অবশ্যই ঘটবে, এর সামান্যতম কোন ব্যত্যয় ঘটবে না। তিনি যা চান, তা ঘটে। আর যা তিনি চান না, তা ঘটে না।[2]
হাদীছে জিবরীলে ঈমানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,
«أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»
‘আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী, আসমানী কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, শেষ দিবস এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নাম ঈমান’।[3]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল আছ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি,
«كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ -قَالَ- وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ»
‘আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে’।[4]
ত্বাঊস (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, আমি অনেকজন ছাহাবীকে পেয়েছি, যাঁরা বলতেন, সবকিছু তাক্বদীর অনুযায়ীই হয়। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, ‘সবকিছু তাক্বদীর মোতাবেকই ঘটে থাকে, এমনকি অপারগতা এবং বিচক্ষণতাও, অথবা বিচক্ষণতা ও অপারগতাও।[5] অন্য এক হাদীছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন,
« لَا يُؤْمِنُ الْمَرْءُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ »
‘তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত কেউ মুমিন হতে পারবে না’।[6]
এ ধরনের আরো বহু আয়াত এবং হাদীছ আছে, যেগুলি অকাট্যভাবে তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার অপরিহার্যতা প্রমাণ করে।
এছাড়া মুসলিম আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা অপরিহার্য। ইমাম নববী (রহেমাহুল্লাহ), শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ), ইবনে হাজার (রহেমাহুল্লাহ)সহ অনেকেই এই ইজমা উল্লেখ করেছেন।[7]
[2]. প্রাগুক্ত, ৬/৪২৭।
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের বর্ণনা, তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি তাক্বদীরে বিশ্বাস করে না, তার সাথে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা’ অনুচ্ছেদ।
[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৩।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৫।
[6]. মুসনাদে আহমাদ, ১১/৩০৫, হা/৬৭০৩, তাহক্বীক্ব: শু‘আইব আরনাঊত্ব, আদেল মুরশিদ প্রমুখ (বৈরূত: মুআস্সাসাতুর্ রিসালাহ, প্রথম প্রকাশ: ২০০১ইং), মুসনাদের মুহাক্কিক্বগণ বলেন, হাদীছটি ‘হাসান’।
[7]. ইমাম নববী, আল-মিনহাজ শারহু ছহীহি মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ, (বৈরূত: দারু এহ্ইয়াউত্ তুরাছিল আরাবী, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৩৯২হিঃ), ১/১৫৫; ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, (মদীনাঃ বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, প্রকাশকাল: ২০০৪ইং), ৮/৪৬৬; ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী, (প্রিন্স সুলতান ইবনে আব্দুল আযীয (রহেমাহুল্লাহ)-এর অর্থায়নে মুদ্রিত, রিয়ায: প্রথম প্রকাশ: ২০০১ইং), ১১/৪৭৮।