তবে নিম্নোক্ত কাজগুলোর ক্ষেত্রে ওযূ করা মুস্তাহাব।
কা’বা শরীফ ত্বওয়াফ করার সময়:
ত্বওয়াফকারীর জন্য ওযূ করা আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সহীহ দলীল আছে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ অসংখ্য মুসলমান, যাদের সংখ্যা আল্লাহ্ তায়ালা ব্যতীত কেউ নির্ণয় করতে পারবে না। তারা আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) এর যুগে তওয়াফ করতেন। কিন্তু তাদের কাউকেও তিনি তওয়াফের জন্য ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমাদের কাছে বর্ণিত হয় নি। অথচ তওয়াফ চলাকালীন সময় অনেকের ওযূ নষ্ট হত এবং অনেকেই ওযূ বিহীন তওয়াফ করতেন। বিশেষ করে ঐ সমস্ত দিন গুলোতে যে দিন গুলোতে বেশি ভিড় জমত। যেমন; তওফে কুদুম, ইফাযাহ ইত্যাদি। অতএব যখন তওয়াফের ক্ষেত্রে ওযূ করা ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোন দলীল বর্ণিত হয়নি এবং এটা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণের কোন ইজমা নেই। অথচ এর জন্য ইজমা বা দলীলের প্রয়োজন ছিল। সুতরাং তা ওয়াজিব না হওয়ার উপরই প্রমাণ করে।[1]
কিছু বিদ্বান তওয়াফের জন্য ওযূ ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস বর্ণিত মারফূ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন:
الطواف بالبيت صلاة إلا أن الله أباح فيه الكلام
অর্থাৎ: বাইতুলস্নাহ তওয়াফ করা এক প্রকার সালাত। তবে তাতে আল্লাহ্ কথা বলা বৈধ করেছেন।[2]
তারা বলেন, তওয়াফ যেহেতু সালাত, সুতরাং তাতে সালাতের মত ওযূ ওয়াজিব। কিন্তু দু‘টি কারণে এমতামতটি গ্রহণযোগ্য নয়:
প্রথমত: এ হাদীসটি মারফূ সূত্রে বর্ণিত নয়। সঠিক কথা হল এটি মাওকূফ সূত্রে বর্ণিত ইবনে আব্বাস (রা.) এর উক্তি। যেমনটি ইমাম তিরমিযি, বাইহাক্বী, ইবনে তাইমিয়াহ ও ইবনে হাজাহ আসকালানী সহ আরো অনেকেই এ কথাটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
২য়ত: ধরে নেয়া হল হাদীসটি সহীহ। তবুও তওয়াফটা সকল ক্ষেত্রে সালাতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। এমনকি সালাতে যে শর্ত রয়েছে তওয়াফে সে শর্ত নেই।[3] উপরন্ত সালাত এমন একটি শারীঈ ইবাদাত, যাতে ত্বহারাসহ আরো অনেক কিছু শর্ত রয়েছে। যার তাকবররের মাধ্যমে সকল কাজ হারাম হয় এবং সালামের মাধ্যমে সকল কাজ বৈধ হয়।
এজন্যই শাইখুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আমার কাছে একথা স্পষ্ট যে, নিঃসন্দেহে তওয়াফের ক্ষেত্রে অপবিত্রতার কারণে ত্বহারাত বা পবিত্রতা শর্ত নয় এবং তা ওয়াজিবও নয় । তবে এ ক্ষেত্রে ছোট পবিত্রতা তথা ওযূ করা মুস্তাহাব। কেননা শারঈ দলীল এ ক্ষেত্রে ওযূ ওয়াজিব না হওয়ার উপরই প্রমাণ করে। আর ইসলামী শরীয়াতে এ ক্ষেত্রে ছোট পবিত্রতা ওয়াজিব হওয়ারও কোন প্রমাণ নেই।[4] আবূ মুহাম্মাদ ইবনে হাযম এ মতমকেই সমর্থন করেছেন।
আবূ মুহাম্মাদ ইবনে হাযম এ মতমকেই সমর্থন করেছেন।[5]
মাসাহাফ (কুরআন) স্পর্শ করা:
ইমাম মালিক, শাফেঈ, আহমাদ ও জমহুর বিদ্বানের মতে, ওযূ বিহীন অবস্থায় মাসাহাফ স্পর্শ করা বৈধ নয়।[6] এ ব্যাপারে তারা দু‘টি দলীল পেশ করে থাকেন-
(ক) আল্লাহ্র বাণী- لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ -অর্থাৎ, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া (সূরা ওয়াক্বিয়াহ-৭৯)।
(খ) আমর বিন হাযম এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানাবী (ﷺ) ইয়ামান বাসীর নিকট একটি চিঠি লিখে ছিলেন, সেখানে বলা হয়েছিল: "لا يمس القرآن إلا طاهرا"
অর্থাৎ: পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না।[7]
আমার বক্তব্য: নিম্নোক্ত ভাবে তাদের দলীলের জবাব দেয়া যায়:
(ক) আয়াতে বর্ণিত يَمَسُّهُ এর সর্বনামটি কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্তন করা ছাড়া অত্র আয়াত দ্বারা দলীল দেয়া সম্পূর্ণ হবে না। অথচ অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট এটা সুস্পষ্ট যে, সর্বনামটি ‘সুরক্ষিত কিতাব’ এর দিকে প্রত্যাবর্তন হয়েছে, যা আসমানে রয়েছে। তা হলো লাওহে মাহফূজ। আর الْمُطَهَّرُونَ বলতে ফেরেশতাগণ উদ্দেশ্য। নিম্নোক্ত আয়াতগুলো দ্বারা এটা বুঝা যায়
﴿إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ (77) فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ (78) لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ (79)﴾
অর্থাৎ: নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া (সূরা ওয়াক্বিয়াহঃ ৮৮-৭৯)।
এর সমর্থনে অন্য আয়াতও উল্লেখ করা যেতে পারে-
﴿فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ ۞ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ ۞ بِأَيْدِي سَفَرَةٍ ۞ كِرَامٍ بَرَرَةٍ ﴾
অর্থাৎ: এটা আছে সম্মাণিত সহীফাসমূহে। সমুন্নত, পবিত্র, লেখকদের হাতে, যারা মহা সম্মানিত, অনুগত (সূরা আবাসাঃ ১৩-১৬)।
(খ) আর যে হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া হয়েছে তা যঈফ। এটা দলীলের যোগ্য নয়। কেননা সহীফাহ এর ব্যাপারে এরূপ কোন বাণী পাওয়া যায় না। এ হাদীসের সনদের রাবীদের ব্যাপারে অনেক মতানৈক্য রয়েছে।
যদি ধরে নেয়া হয় যে, সর্বনামটি কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্ত্যন করেছে, তাহলে এক্ষেত্রে আমরা বলব:
الطاهر শব্দটি মুশতারিক বা বহু অর্থবোধক শব্দ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তার অর্থটি মু‘মিন ব্যক্তি, বড় পবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যক্তি, ছোট পবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যক্তি অথবা শরীরে কোন নাপাক নেই এমন ব্যক্তি উপর প্রযোজ্য হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে মাসআলাটি উসূল সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দিয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে।
যারা মুশতারিক শব্দটিকে তার সমস্ত অর্থের উপর প্রযোজ্য হওয়া বৈধ মনে করেন, তারা এখানে সেটাই প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু যখন নাজাসাত বা নাপাক নামটি ওযূ বিহীন মু’মিন অথবা জুনাবী মু’মিন এর উপর প্রয়োগ করা হবে তখন তা বিশুদ্ধ হবে না। চাই তা প্রকৃত অর্থে হোক, রূপক অর্থে হোক কিংবা আভিধানিক অর্থেই হোক। কেননা আল্লাহ্র রাসূলের বাণী-
"المؤمن لا ينجس"
অর্থাৎ: ‘‘মু‘মিন কখনও নাপাক হয় না’’।[8] আর এ কথা প্রমাণিত যে, মু’মিন সর্বদা পবিত্র থাকে। কুরআন ও হাদীস দ্বারা মুমিন নাজাসাত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে। সুতারাং শব্দটি প্রযোজ্য হবে এমন ব্যক্তির উপর যে মুশরিক নয়। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ﴾
অর্থাৎ: মুশরিকগণ নাপাক (সূরা তাওবা-২৮)।
আর হাদীসে শত্রম্নদের এলাকায় কুরআন নিয়ে ভ্রমন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা বলেন মুশতারিক শব্দটি এক্ষেত্রে মুজমাল বা সংক্ষিপ্তভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং তার অর্থ স্পষ্ট হওয়া ছাড়া তার উপর আমাল করা যাবে না। তাহলে বলা হবে, কুরআন ও হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই। এমন কি যদিও الطاهر নামটি ছোট নাপাক বা বড় নাপাক ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হয়।[9]
সুতরাং বুঝা গেল, মাসাহাক (কুরআন) স্পর্শ করার জন্য ওযূ করা ওয়াজিব নয়। এটা ইমাম আবূ হানীফা, দাউদ ও ইবনে হাযম (রাহি.) এর মতামত। ইবনে আব্বাস ও সালফের একটি দলও এ মতামত পেশ করেছেন। ইবনে মুনযির এমতটিকে পছন্দ করেছেন।[10] এ ব্যাপারে আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
প্রসঙ্গ কথা:
বিদ্বানদের বিশুদ্ধ অভিমতে, যদি নাপাক অবস্থায় স্পর্শ ছাড়া শুধু কুরআন পাঠ করা হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই, চাই তা ছোট নাপাকী হোক কিংবা বড় নাপাকী হোক। এক্ষেত্রে মাসাহাফ স্পর্শ করার বিধানের চেয়ে এ বিধানটি অনেক শিথিল। কারণ-
(১) এ ক্ষেত্রে কুরআন পাঠে নিষেধজ্ঞার ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ মারফূ হাদীস বর্ণিত হয় নি। এ ব্যাপারে যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই যঈফ। তা দলীলের যোগ্য নয়।
যেমন, আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে মারফূ সূত্র বর্ণিত আছে যে:
" لا يقرأ الجنب ولاالحائض شيئأ من القرآن "
অর্থাৎ: জুনুবী ব্যক্তি ও হায়েযওয়ালী কুরআন থেকে কিছু পাঠ করবে না।
ইবনে রওয়াহাহ এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
الْقُرْآنَ وَهُوَ جُنُبٌ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ نَهَى أَنْ يَقْرَأَ أَحَدُنَا
অর্থাৎ: ‘‘রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন যে, আমাদের কেউ যেন জুনাবী অবস্থায় কুরআন পাঠ না করে’’।
আবদুল্লাহ বিন মালিক এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
« إِذَا تَوَضَّأْتُ وَأَنَا جُنُبٌ أَكَلْتُ وَشَرِبْتُ ، وَلاَ أُصَلِّى وَلاَ أَقْرَأُ حَتَّى أَغْتَسِلَ »
অর্থাৎ: ‘‘আমি জুনাবী অবস্থায় যখন ওযূ করি, তখন খাই ও পান করি। কিন্তু গোসল না করা পর্যন্ত সালাত আদায় করি না ও কুরআন পাঠ করি না’’। এ হাদীস গুলোর কোনটিই সহীহ নয়।[11]
(২) হযরত আয়িশা (রা.) থেকে সাব্যাস্ত আছে যে, মহানাবী (ﷺ) সবাস্থায় আল্লাহ্র যিকির করতেন।[12]
(৩) রাসূল (ﷺ) হায়েযওয়ালী মহিলাদের ঈদগাহে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন:
فَيَكُنَّ خَلْفَ النَّاسِ، فَيُكَبِّرْنَ بِتَكْبِيرِهِمْ، وَيَدْعُونَ بِدُعَائِهِمْ
অর্থাৎ: তারা মানুষের পেছনে দাঁড়াবে তাদের তাকবীরে সাথে তাকবীর দিবে ও তাদের সাথে দোয়ায় অংশ গ্রহণ করবে।[13]
সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায়, হায়েয ওয়ালী মহিলা তাকবীর দিতে পারবে ও আল্লাহ্ তা‘আলার যিকির করতে পারবে।
(৪) হযরত আয়িশা (রা.) যখন ঋতুবর্তী ছিলেন তখন মহানাবী (ﷺ) তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন:
«افْعَلِي كَمَا يَفْعَلُ الحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي»
অর্থাৎ: ‘‘বাইতুলস্নাহ তওয়াফ ছাড়া তুমি হাজ্জের সকল কর্ম পালন কর’’।[14] এতে বুঝা গেল, হাজীগণ আল্লাহ্র যিকির করতে পারবে ও কুরআন পাঠ করতে পারবে।
উপরের আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, নাপাক ব্যক্তির কুরআন পাঠ করতে বাধা নেই। শাইখুল ইসলাম বলেন, এটা ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) এর মাযহাব এবং ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ এর প্রসিদ্ধ মাযহাব।[15]
[2] মাওকুফ; তিরমিযী, নাসাঈ, হাকিম সহ অনেকেই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মারফূ সূত্রে এ হাদীসটি সহীহ নয় এ হাদীসটি মাওকূফ হওয়াটাই অধিক বিশুদ্ধ। যেমনটি আমাদের শাঈখ উল্লেখ করেছেন তার জামি’ আহকামুন নিসা (২/৫১৫-৫২১) গ্রন্থে। আলবানী এর বিরvাধিতা করেছেন এবং একে মারফূ’ আখ্যা দিয়েছেন। আল-ইরওয়া (১/১৫৬)।
[3] মাজমু’ আল ফাতাওয়া (২৬/১৯৮), জামি’ আহকামুন নিসা (২/৫২২) এখানে সালাত ও ত্বওয়াফের মধ্যে ১১টি পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে।
[4] মাজমু’ আলফাতাওয়া (২৬/২৯৮)।
[5] আল-মুহালস্না (১/১৭৯)।
[6] আল-মাজমূ (১/১৭), ইসিত্মযকার (৮/১০), আল-মুগনী (১/১৪৭), আল-আওসাত্বব (২/১০২)।
[7] যঈফ; এর অনেকগুলো যঈফ সনদ রয়েছে এবং সকল সনদ একত্রিত করে হাসান পর্যায়ে উন্নিত করার ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। ফলে আলবানী তার ‘ইরওয়া’ গ্রন্থে (১/১৫৮ পৃ:) একে সহীহ বলেছেন। তবে স্পষ্ট কথা হল এটা হাসান পর্যায়ে উন্নিত হবে না।
[8] সহীহ বুখারী (২৭৯), মুসলিম (৩৭১)।
[9] নাসলুল আওতার (১/২৬০-দারুল হাদীস)
[10] আল-বাদাঈ (১/৩৩), হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন (১/৭৩), আল-মুহালস্না (১/১৮), আল-আওসাত্বব (২/১০৩)।
[11] আলবানী প্রণীত আল-ইরওয়াহ (১৯২,৪৮৫), বাইহাক্বী প্রণীত ‘খিলাফিয়্যাত’ (২/১১) এ শায়েখ মাশহুর এর বিশেস্নষণ।
[12] সহীহ; মুসলিম (৩৭৩) , হাদীসের পূর্বে ইমাম বুখারী মুয়ালস্নাক সূত্রে বর্ণনা করেছেন (৬০৮)।
[13] সহীহ; বুখারী (৯৭১), মুসলিম (৮৯০)।
[14] সহীহ; বুখারী (১৬৫০) ।
[15] মাজমূ আল-ফাতওয়া (২১/৪৫৯), আল-আওসাত্বব (২/৯৭)।