ওযূ এর আভিধানিক অর্থ : وضوء শব্দটি الوضائة শব্দ থেকে গৃহীত। এর আভিধানিক অর্থ: পরিছন্নতা ও উজ্জ্বলতা وضوء শব্দের واو বর্ণে পেশ পড়লে, তখন তা فعل (ত্রিয়া) এর অর্থ দিবে। আর واو বর্ণে যবর পড়লে, এর অর্থ হবে: ওযূর পানি এবং সেটা مصدر(ক্রিয়ামূল)ও হবে অথবা এ দু’টি আলাদা শব্দও হতে পারে।[1]
পরিভাষায়: সালাত অথবা অনুরূপ ইবাদাত থেকে বাধা প্রদান করে, এমন অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা মুখ, দু’হাত, মাথা ও দু’পায়ে পানি ব্যবহার করার নাম ওযূ।
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা ওযূ শারঈভাবে প্রমাণিত। যথা:
(ক) কুরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
অর্থাৎ: হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতে দ-ায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসাহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত কর (সূরা মায়েদা-৬)
(খ) হাদীসে বলা হয়েছে-
عَنْ أَبى هُرَيْرَةَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ
(১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুলাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তির বায়ু নির্গত হয় তার সালাত কবুল হবে না, যতক্ষণ না সে ওযূ করে।[2]
عَنْ ابْنَ عُمَرَ قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ: لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ
(২) ইবনে উমার (রাঃ) বললেন: আমি রাসূলুলাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না এবং আত্নসাৎ বা খেয়ানতের সম্পদ থেকে সাদকা কবুল হয় না।[3]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ: إِنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوءِ إِذَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ
(৩) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: আমাকে তো সালাত আদায়ের সময় ওযূ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[4]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ، وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন: সালাতের চাবি হলো পবিত্রতা (অর্থাৎ ওযূ বা গোসল) এর তাকবীর পার্থিব যাবতীয় কাজকে হারাম করে এবং সালাম (অর্থাৎ সালাম ফিরানো) যাবতীয় ক্রিয়া কর্মকে হালাল করে দেয়।[5]
(গ) আর এ ব্যাপারে ইজমা হলো: উম্মতের সকল আলিম এ বিষয়ে ঐক্যমত যে, পবিত্রতা অর্জনে সক্ষম হলে পবিত্রতা ব্যতীত সালাত কবুল হবে না।[6]
[2] সহীহ; বুখারী (১৩৫), মুসলিম (২২৫) প্রভৃতি।
[3] সহীহ; মুসলিম (২২৪)।
[4] সহীহ; তিরমিযী (১৮৪৮), আবূ দাউদ (৩৭৬০), নাসাঈ (১/৭৩) সহীহুল জামে’ (২৩৩৩)।
[5] হাসান লিগাইরহী; তিরমিযী (৩), আবূ দাউদ (৬০), ইবনে মাজাহ (২৭৫), আলবানী তার সহীহুল জামে’ (৫৭৬১) গ্রন্থে সহীহ বলেছেন।
[6] ‘‘আল আউসাত’’ (১/১০৭) ইবনু মুনযির প্রণীত।