জেনে রাখুন যে, পরবর্তী উসূলবিদগণের মতে, মুজতাহিদ ছাড়া সাধারণভাবে কুরআন ও সুন্নাহ’র প্রতি আমল করা নিষিদ্ধ। তারা বলেন ইজতিহাদের শর্ত হলো:
- মুজতাহিদকে বালেগ হতে হবে।
- জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
- সৃষ্টিগতভাবে তীক্ষ্ম বুঝের অধিকারী হতে হবে।
- আক্বলী দলীল (প্রমাণ বিহীন বুদ্ধিজাত মতামত) সম্বন্ধে জানতে হবে। মূলতঃ এ আক্বলী দলীলটা অস্তিত্বহীনতারই নামান্তর। আর আক্বলী দলীল এ জন্যই জানতে হবে যে, যাতে এর মাধ্যমে তিনি বিপরীত মত পোষণকারী মুজতাহিদের নকলী (বর্ণনা ভিত্তিক) দলীলের জবাব দিতে পারেন।
- আরবী ভাষায় দক্ষ হতে হবে এবং সাথে সাথে শারঈ ও উরফী হাক্বীকত (গভীর তত্ত্বজ্ঞান) সহ নাহুসরফ ও বালাগাত (অলঙ্কার শাস্ত্র) সম্বন্ধে জানতে হবে।
- কেউ কেউ আবার এর সাথে অতিরিক্ত করেছেন যে, যুক্তি বিদ্যার বিষয় জানতে হবে। যেমন হুদুদের (দণ্ডবিধি) শর্তসমূহ, প্রচলনগত বিষয় এবং দলীলের শর্তসমূহ জানা।
- উসূল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। কিতাব ও সুন্নাহ’র বিধান সমূহের বিভিন্ন দলীল সম্বন্ধে জানতে হবে। দলীলসমূহ মুখস্থ রাখা তাদের কাছে শর্ত নয়। বরং কুরআন ও হাদীসে প্রাপ্ত জ্ঞান অর্জন করাই যথেষ্ট।
- ঐকমত্য (ইজমা) ও মতভেদের (খিলাফ) অবস্থা সম্বন্ধে জানতে হবে।
- হাদীসে মুতওয়াতির, আহাদ, সহীহ ও যঈফের শর্তাবলী সম্বন্ধে জানতে হবে।
- নাসেখ ও মানসূখ সম্বন্ধে জানতে হবে। বিভিন্ন শানে নযূল সম্বন্ধে জানতে হবে।
- সাহাবাদের অবস্থা ও হাদীস বর্ণনার অবস্থা সম্বন্ধে জানতে হবে। তবে তারা ক্বিয়াস গ্রহণের শর্তের ব্যাপারে মতভেদ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, তাদের এ শর্তগুলোর উপর নির্ভর করার জন্য কুরআন ও সুন্নাহ’র এমন কোন দলীল নেই, যা স্পষ্ট করবে যে, এ শর্তগুলো ছাড়া কুরআন ও সুন্নাহ’র প্রতি আমল করা বৈধ নয়। আবার এর প্রমাণে কোন ইজমাও সাব্যাস্ত নেই। তবে তাদের মতে, এ শর্তগুলো আরোপ করার কারণ হলো দায়িত্ব বাস্তবায়ন করা।
এর স্পষ্ট বর্ণনা এই যে, কিতাবুলস্নাহ, সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) ও মুসলমানদের ইজমা প্রমাণ করছে, কিতাবুলস্নাহ ও সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) এর উপর আমল করার জন্য শর্ত একটিই । আর তা হলো, হুকুমগত জ্ঞানার্জন করা। যার মাধ্যমে এতদোভয়ের উপর আমল করা যায়। অবশ্যই ওহীর প্রতি আমল করার জন্য হুকুমগত জ্ঞান ছাড়া আর অতিরিক্ত কোন শর্ত নেই। এ ব্যাপারে কারও মতানৈক্য নেই। আর পরবর্তী উসূলবিদগণ যে সমস্ত শর্তারোপ করেছেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল দায়িত্ব-কর্তব্য বাস্তবায়ন করা।
কেননা (তাদের উদ্দেশ্য হলো,) ওহীর যে জ্ঞান দ্বারা আমল করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তারা তা বাস্তবায়ন করতে চান। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হলো, জ্ঞানার্জনের পর আমল করার যে দায়িত্ব রয়েছে, তা নিশ্চিত করার পদ্ধতি বর্ণনা করা। সুতরাং তারা উল্লেখিত শর্তগুলো আরোপ করেছেন এ মনে করে যে, এগুলো ছাড়া ওহীর জ্ঞানার্জন করা সম্ভব নয়। তবে এই ধারণার মাঝে কথা থেকে যায়। কেননা প্রত্যেক মানুষের বুঝ শক্তি রয়েছে, যদি সে কুরআন ও সুন্নাহ’র দলীল দ্বারা আমল করে তাহলে তাকে বাধা দেয়া যায় না। আর এর অর্থ বুঝাও তার পক্ষে অসম্ভব নয় এবং এ ব্যাপারে তার সে পর্যন্ত অনুসন্ধান করাও অসম্ভব নয় যে, এটা কি মানসূখ (রহিত), না খাস (নির্দিষ্ট), না মুকাইয়্যাদ (শর্তযুক্ত)? যখন সে তা জানতে পারে, তখন আমল করতে পারে।
আর বিদ্বানদেরকে এ প্রশ্ন করা যে, এ দলীলের কোন নাসেখ (রহিত কারী), খাস ও মুকাইয়্যাদ আছে কি না? এ ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ কর্তৃক এর উত্তর দেয়াটা তাক্বলীদের মধ্যে পড়ে না। বরং এটা ইত্ত্বেবারই (দলীলের অনুসরণ) অংশ। ইন্শা আল্লাহ্ এ ব্যাপারে আমরা সামনে তাক্বলীদ এর মাসআলায় তাক্বলীদ ও ইত্ত্বেবা এর মধ্যে পার্থক্য অধ্যায়ে আলোচনা করব।
মোট কথা কুরআন ও সুন্নাহর বহু বর্ণনা প্রমাণ করছে যে, কিতাবুলস্নাহ ও সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) এর উপর আমল করা আবশ্যক। উপরে উল্লেখিত মুজতাহিতদের শর্তসমূহকে নির্দিষ্ট করা যাবে না।