সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ভূমিকা এবং জরুরী জ্ঞাতব্য আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম ১ টি
এ গ্রন্থ প্রণয়নের পদ্ধতি (المسلك في هذا الكتاب)

অতঃপর উল্লেখিত তিনটি বিষয় আমাকে এ গ্রন্থটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হতে উৎসাহিত করেছে। আমি আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন এর দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের উপকার দান করেন এবং তিনি যেন এটাকে তার দ্বীনের পা--ত্য অর্জনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে একটি পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করেন। আর আমি অন্যের মাঝে যে নেতিবাচক দিকগুলো দেখে সমালোচনা করেছি, তা থেকে যেন তিনি আমাকে দূরে রাখেন। এ ধরনের নেতিবাচক বিষয়ের ক্ষেত্রে আমিও নিজেকে ত্রুটিমুক্ত মনে করছি না।

নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে আমি এ গ্রন্থকে সাজিয়েছি:

১. সামান্য কিছু ভিন্নতা ছাড়া আমি এর লেখনী ও অধ্যায়গুলোকে অধিকাংশ ফিক্বহ গ্রন্থের কাছাকাছি নিয়মে সাজিয়েছি। প্রথমেই আমি ইবাদাত সংক্রান্ত আলোচনা দিয়ে শুরু করেছি। যাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, ত্বহারাত (পবিত্রতা), সালাত, জানাযা, যাকাত, সিয়াম ও হাজ্জ অধ্যায়। ইবাদাত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও আমি এর সঙ্গে সংযোজন করেছি। যেমন: শপথ, মানত, পানাহার, শিকার, যবেহ প্রভৃতি অধ্যায়। এর পর আমি এর সাথে পারিবারিক তথা ব্যক্তিগত বিষয়াবলীর বিধান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোও উল্লেখ করেছি। যেমন: পোশাক, সৌন্দর্য, নাযর ও মীরাস সংক্রান্ত অধ্যায়। এরপর উল্লেখ করা হয়েছে حدود (দণ্ডবিধি), جنايت(অপরাধ সমূহ) ও ديات (রক্তপণ) অধ্যায়। এরপর ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত অধ্যায়। এভাবেই গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে।

২. এ গ্রন্থের ভূমিকায় আমি মাযহাবের উৎপত্তি, বিদ্বানদের মতভেদের কারণ এবং তাক্বলীদ সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করেছি। যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য ফিক্বহ শাস্ত্র পাঠের পূর্বে জানা আবশ্যক।

৩. আমি এ গ্রন্থের বিষয়গুলো এবং বিষয়ের শব্দগুলো সহজ ও স্পষ্ট ভাষায় সাজাতে চেষ্টা করেছি। যাতে গবেষক ও সাধারণ পাঠকদের জন্য উপযোগী হয়। সাথে সথে আমি সুক্ষ্মতা ও উদ্দেশ্য হাসিলের দিকে লক্ষ্য রেখে যথাসম্ভব এর ইবারতগুলো ফক্বীহদের ইবারতের কাছাকাছি করে সাজানোর ব্যাপারে খেয়াল রেখেছি। কখনও কখনও আমি বিভিন্ন ফিক্বহ গ্রন্থ থেকে সংকলন করে উত্তম ইবারতও নির্বাচন করেছি।

৪. পাঠকের স্মৃতিতে যুগপৎ সংঘটিত হয়, এমনভাবে আমি এর মাসআলাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে যুক্তি ভিত্তিক সাজিয়েছি। যাতে তা দ্রুত বুঝা যায় ও সহজে গ্রহণ করা যায়।

৫. বিস্তারিত শিরোনাম রচনার ক্ষেত্রে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। যাতে স্পষ্টভাবে এর উদ্দেশ্য বুঝা যায়। এছাড়াও শিরোনামের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। যাতে আলোচনার বিষয়বস্ত্ত নির্ধারিত হয়ে যায় এবং বিষয়বস্ত্তগুলোকে একটি অপরটি থেকে পার্থক্য করা যায় ও চিন্তা-চেতনাগুলোকে একই বিষয়ের মধ্যে সাজানো যায়।

৬. মাসআলাগুলোর ক্ষেত্রে সমস্ত দলীল একত্রিত করে ও তা বাছাই করে এবং মাসআলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো সহীহ-যঈফ নির্ণয় করে আমি যথাসম্ভব কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে উপযুক্ত দলীল পেশ করার চেষ্টা করেছি। আমার সাধ্য অনুযায়ী এ দলীলগুলো সংক্ষিপ্তভাবে টীকায় উল্লেখ করেছি। কোন মাসআলার ক্ষেত্রে যদি কোন ইজমা থাকে তাহলে আমি তার সূত্রও উল্লেখ করে দিয়েছি।

৭. যদি কোন মাসআলার ক্ষেত্রে মতভেদ পাওয়া যায় (যা অধিকাংশ ফিক্বহী মাসআলার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে), তাহলে আমি সে মতভেদ উল্লেখ করতে অলসতা করি নি। আর তা করবই বা কেন? কেননা কাতাদাহ বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি মতভেদ সম্পর্কে জানে না, সে ব্যক্তি নাসিকা দিয়ে ফিক্বহ এর ঘ্রাণ গ্রহণ করতে পারে নি’’।[1]

মূলতঃ মতভেদ সম্পর্কে অজ্ঞতা এমন হক্বকে বাতিল করার দিকে নিয়ে যায়, যা হয়তো সে জানে না। কেননা হক্বটা শুধু বিদ্বানদের যে কোন একজনের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সে যে মাপেরই বিদ্বান হোক না কেন। এজন্য ওসমান বিন আত্বা তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের মতভেদ সম্পর্কে জানে না তার ফাৎওয়া দেয়া উচিৎ নয়। এরূপ যদি না করে তাহলে সে তার কাছে যে জ্ঞান রয়েছে তার চেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্ঞানকে বাতিল করে দিতে পারে’’।[2]

যদি কোন মাসআলার ক্ষেত্রে মতভেদটা গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার উপস্থাপন পদ্ধতি হল, আমি সকল মতামতসহ বিদ্বানদের মধ্যে যারা এ মতামতগুলো দিয়েছেন তাদের কথা উল্লেখ করেছি। মতামতগুলো সংকলনের ক্ষেত্রে আমি যথাসম্ভব স্ব-স্ব ইমামের গ্রন্থের উপর নির্ভর করেছি। অথবা বিদ্বানদের নিকট নির্ভরযোগ্য মাযহাবী গ্রন্থগুলোর উপর নির্ভর করেছি। সাথে সাথে আমি টীকাতে এ সমস্ত মতামতের নির্ভরযোগ্যতার কথা উল্লেখ করে দিয়েছি।

অতঃপর আমি এ সমস্ত মতামতের ক্ষেত্রে যে দলীলগুলো জানতে পেরেছি তা বর্ণনা করে দিয়েছি। সাথে সাথে যদি দলীলটি স্পষ্ট না হয়, তাহলে আমি দলীল গ্রহণের পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিয়েছি। কখনও আবার যে সব দলীলের ব্যাপারে প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে এবং বিপরীত পক্ষ থেকে এর যা উত্তর দেয়া হয়েছে সে বিষয়টিও উল্লেখ করে দিয়েছি। যাতে এর দ্বারা পরিপূর্ণ উপকার পাওয়া যায়। এভাবেই আমি সকল মাসআলার ক্ষেত্রে বিদ্বানদের মতামতগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি।

৮. আমি শুধু এ মতামতগুলো সংকলন ও দলীলগুলো বর্ণনা করাকেই যথেষ্ট মনে করি নি। কেননা প্রাধান্য দেয়া ছাড়াই শুধু মতামত পেশ ও দলীল বর্ণনা করা হলে, সাধারণ পাঠক এর সঠিকতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হতাশা ও দ্বিধা-দ্বন্দের মধ্যে পড়ে যাবে। কারণ একজন গবেষক যখন সমস্ত মতামত একত্রিত করল এবং তা বাছাই করল। কিন্তু প্রাধান্য দিল না, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যরা এর সঠিকতা নির্ণয় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি সকল মতামত বুঝার চেষ্টা করেছি এবং সেগুলো সনদ ও মতনগত দিক থেকে যাচাই-বাছাই করেছি। সর্বোপরি এর উদ্দেশ্য বুঝেছি, একটিকে আরেকটির সাথে তুলনা করেছি এবং যথাসম্ভব এ ক্ষেত্রে আমি বিদ্বানদের নীতিমালা আরোপ করারও চেষ্টা করেছি। যেন প্রাধান্যপ্রাপ্ত অভিমতটিই গ্রহণ করা যায়। যে মাপেরই ব্যক্তি হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে আমি কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করার চেষ্টা করি নি। মূলতঃ একনিষ্ঠ গবেষক তিনি, যিনি হক্ব এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্য অন্বেষণের চেষ্টা করেন। এর পরে তার আর কোন যায় আসে না যে, সে কি বলল বা অমুকে কি বলল। বিশেষ করে একনিষ্ঠ গবেষক তিনি, যিনি হক্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে এক ইমামের মতামত ত্যাগ করে অন্য ইমামের মতামত গ্রহণ করতেও পরওয়া করে না।

এ ক্ষেত্রে আমি সুদৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছি যে, সর্বদা আমি শরীয়াতের দলীলের সাথেই থাকব। এখান থেকেই শ্রবণ করব, এর দিকেই মনোযোগ দিব এবং এর উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করব। এর আগে বেড়ে কোন কথা বলব না। যা বলা যায় না তা বলব না। যে অর্থের সম্ভাবনা রাখে না, সে অর্থ করার চেষ্টাও করব না এবং নিজের অথবা মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ করব না। এর মূল উদ্দেশ্য হল, যদি প্রাধান্যের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য দিকটা স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে, আমার যোগ্যতা অনুযায়ী তা প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করব। আর যদি প্রাধান্যের ক্ষেত্রে সঠিক দিকটা স্পষ্ট না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমি নীরবতা পালন করব। কেননা দলীল-প্রমাণ ছাড়া প্রাধান্য দেয়া বৈধ নয়।

ইবনু আব্দিল বার বলেন: ‘‘বিদ্বানদের মতভেদের সময় কুরআন, সুন্নাহ ও এ দু’য়ের নীতিমালার আলোকে গঠিত ইজমা ও কিয়াস থেকে দলীল গ্রহণ করা ওয়াজিব। এটা এমন নয় যে, কোন কোন ক্ষেত্রে এ গুলো থেকে যে দলীল পাওয়া যাবে না। যদি দলীলগুলো সমপর্যায়ের হয়ে যায়, তাহলে কুরআন সুন্নাহর দিক দিয়ে যে দলীলটা বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ সে দিকেই ধাবিত হতে হবে। আর যদি তা স্পষ্ট না হয় তাহলে নীরবতা পালন করতে হবে। নিশ্চিত জ্ঞান ছাড়া কোনটিকে অকাট্যভাবে গ্রহণ করা বৈধ হবে না’’।[3]

কখনও আবার সমস্ত মতামতের মধ্যে দুইটি শক্তিশালী মতামতকে নির্বাচন করেছি অথবা আমার কাছে যে মতামতগুলো দুর্বল মনে হয়েছে সেগুলোকে দুর্বল বলেছি। সুতরাং এগুলো মূলতঃ আংশিক প্রাধান্য যা সঠিক মাসআলার কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

যদি কোন অভিমত স্পষ্টভাবে অন্যের উপর প্রাধান্য পায়, তাহলে আমি অকাট্য দলীলের মাধ্যমে শক্তিশালী কথার দ্বারা তা উল্লেখ করেছি। সাথে সাথে পূর্বোলেস্নখিত নিয়মের মত করেই এ মতের প্রবক্তাদেরও উল্লেখ করেছি। এরপর সংক্ষিপ্তভাবে মতভেদের বিষয়টিরও ইঙ্গিত দিয়েছি। কখনও আমি বাতিল, অগ্রহণযোগ্য যা বর্ণনা ও উল্লেখ করা নিয়ে ব্যাস্ত থাকা উচিৎ নয়, এমন মতভেদগুলো আলোচনা করা থেকে বিরত থেকেছি। তবে কোন উপকার থাকলে তা উল্লেখ করেছি।

মতামত নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করেছি যে, সালাফদের মতসমষ্টি থেকে আমি বের হব না। সুতরাং পূর্বে বলা হয় নি এমন কোন নতুন মতামত নিয়ে আসার কোন চেষ্টা আমি করি নি। কেননা পূর্ববর্তীদের এসব মতামতের উপর সীমাবদ্ধ থাকাটা তাদের পক্ষ থেকে ইজমা হিসেবে ধরে নিতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, এদের মতামতের মধ্যেই হক্ব সীমাবদ্ধ রয়েছে। হক্ব এদের মতামতের বাইরে যেতে পারে না। যদিও এসব মতামতের মধ্যে কোনটির সাথে হক্ব সংশ্লিষ্ট তা নিয়ে তারা মতভেদ করেছেন। সুতরাং এ ধারণা করা যাবে না যে, সমস্ত উম্মতের মাঝে যে কোন এক যুগে হক্ব গোপন থাকতে পারে।

আমি এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি যে, আমার নির্বাচনগুলো আমি ব্যতীত অন্যের জন্য অবধারিত হওয়াটা আবশ্যক নয়। যদিও আমার এই নির্বাচনগুলো উপকার দিতে পারে ঐসকল ব্যক্তিদের যারা মাসআলাকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। আর যে শিক্ষার্থী মাসআলাকে প্রাধান্য দিতে সক্ষম তার ক্ষেত্রে এ উপকার হবে যে, আমি তার জন্য বিক্ষিপ্ত মাসআলাগুলো একত্রিত করে দিলাম। ফলে কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তার কাছে যেটা সঠিক বলে বিবেচিত হবে সেটাকেই সে প্রাধান্য দিবে। আর যদি কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি আমার এ কথাগুলো অবগত হওয়ার পর তা শক্তিশালী মনে না করেন, তাহলে তিনি যেন আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দেন। আমার উপর তাকে যে জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে, এ জন্য তিনি যেন আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করেন।

মূলতঃ যখন মহিয়ান আল্লাহ্‌র দ্বীনের ব্যাপারে কোন ব্যক্তির প্রজ্ঞা বৃদ্ধি পায়, তখন হক্বপন্থি বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি তার দয়া প্রদর্শনও বৃদ্ধি পায়।

উল্লেখিত বিন্যাস ও পদ্ধতিতে আমি আমার এ গ্রন্থের অধিকাংশ অংশকেই সাজিয়েছি। এমনকি আমি যখন "كتاب البيوع" এর শুরুর দিকে পৌঁছলাম তখন আমি ভ্রমণে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। এমন সময় প্রকাশকও (আল্লাহ্‌ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য পিড়াপিড়ি করছিলেন। তখন আমাদের ভাই শাইখ ফুয়াদ সিরাজ (আল্লাহ্‌ তাকে হিফাযত করুন) প্রণিত "البيوع المحرمة" নামক সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা আমার এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ইসিত্মখারা করলাম। তবে বিভিন্ন মতামত সমূহের মধ্যে মতভেদ ও প্রাধান্যের ব্যাপারে যে শর্তটি আমি আমার গ্রন্থে আরোপ করেছি সে শর্তের আলোকে অত্র আলোচনাটি লিপিবদ্ধ করা হয় নি। আর যে আলোচনার পরিপূর্ণটা গ্রহণ করা যায় না, তার অধিকাংশটা ছাড়াও যায় না। আমার শর্তালোকে এ অংশটুকু আলোচনা করতে হলে পরিপূর্ণ প্রচেষ্টা, দীর্ঘ সময় ও বিশেষ গুরুত্বের প্রয়োজন। বিশেষ করে এ গ্রন্থের আলোচনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ নব উদ্ভাবিত মাসআলার জন্য এটা করা প্রয়োজন। প্রকৃত পক্ষ আমি "كتاب البيوع" এর আলোচনা শুরুও করেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় সফরে যেতে বাধ্য হওয়াই এটা সম্পূর্ণ হয়ে উঠে নি। সুতরাং আমি আশা করব যে, পাঠকরা যেন আমার এই ওযরটি গ্রহণ করেন। যেহেতু আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় আমি কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলাম। ইনশা আল্লাহ্‌ আগামী সংস্করণে এ বিষয়ে একটি অধ্যায় আলোচনা করার চেষ্টা করব।

পরিশেষে আরেকটি কথা না বলেই পারছি না যে, যারা মাসআলা প্রণয়নের ব্যাপারে, কিতাব ধার দেয়ার ব্যাপারে, লেখার ব্যাপারে, কপি করার ব্যাপারে, সংকলনের ব্যাপারে, ছাপানোর ব্যাপারে অথবা অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের ব্যাপারে এ কাজটি সম্পন্ন এবং এভাবে প্রকাশ করার জন্য যে কোন ভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও একনিষ্ঠ দু‘আ করছি। বিশেষ করে আমাদের ভাই শাইখ ফুয়াদ সিরাজ (আল্লাহ্‌ তার জ্ঞানে, আমলে ও পরিবারে বরকত দান করুন), শাইখ হানী আল-হাজ্জ (আল্লাহ্‌ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন), আমার সম্মানিত দু’ভাই মুস্তফা আশ-শামী ও ফাইসাল আব্দুল ওয়াহিদ (আল্লাহ্‌ তাদের হিফাযত করুন) এবং সম্মানিত ভাই সাইয়্যিদ ফাতহী এর কথা উল্লেখ করছি। আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন তাদের অশেষ সাওয়াব ও প্রতিদান দান করেন এবং আমাদেরকে তাদের সাথে চিরস্থায়ী জান্নাতে একত্রিত করেন।

আমি এ গ্রন্থের নাম রেখেছি "صحيح فقه السنه و توضيح مذاهب الأئمة" (বিশুদ্ধ সুন্নাহ সম্বলিত ফিক্বহ ও ইমামগণের মতামতের বিশ্লেষণ)। বিদ্বানদের কাছে নিজ ত্রুটি প্রকাশ করতে আমার কোন অসুবিধা নেই এবং এটা জানাতেও কোন সমস্যা নেই যে, এ ক্ষেত্রে আমার ক্ষমতা খুবই স্বল্প।

যদি আমি ভুল করি, তাহলে ভুল থেকে কে নিষ্কৃতি পেয়েছে? আর যদি আমাকে ভুল বুঝা হয়, তাহলে কার পক্ষ থেকে আমাকে ভৎর্সনা করা হচ্ছে?

আমি জানি যে, মানুষকে যেহেতু ত্বরাপ্রবণ করে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে ভুল করে ও তার পদস্খলন হয়। যদি আমি সঠিক করে থাকি তাহলে তা শুধু আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকেই হয়েছে। আর যদি ভুল করে থাকি তাহলে তা আমার নিজের পক্ষ থেকে ও শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (ﷺ) এ থেকে মুক্ত। এ ক্ষেত্রে আমি দৃষ্টান্ত স্বরূপ কবির পংক্তি পেশ করলাম-

لقد مضيتُ وراءَ الركبِ ذا عرجٍ مؤمّلاً جبرَ ما لاقيتهُ من عَرَجِ

فإن لحقت بهم من بعدما سبقوا فكم لربِّ الورى في الناسِ من فَرَجِ

وإن ضللتُ بقفرِ الأرضِ منقطعاً فما على أعرج في الناسِ من حَرَجِ

‘‘আমি খঞ্জত্ব নিয়ে একটি অভিযাত্রী দলের পিছনে অগ্রসর হয়েছি,

আমার এই খঞ্জত্বের শক্তিটুকুর উপর ভরসা করেই।

যদি তাদের অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার পরও আমি তাদের সাথে মিলিত হতে পারি (তবে এতে আমার কোন কৃতিত্ব নেই)।

সৃষ্টি কুলের স্রষ্টা, মানুষের জন্য কতই না সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

আর আমি যদি জনমানবহীন অরণ্যে একাকি বিভ্রান্ত হয়ে যায়,

তবে মানব সমাজে একজন খঞ্জ ব্যক্তির জন্যে কিবা ক্ষতি হবে’’।

আমি আল্লাহ্‌র কাছে কামনা করছি, তিনি যেন এ কর্মের দ্বারা আমাকে ও আমার শিক্ষার্থী ভাইদেরকে উপকার দান করেন। আমি তাঁর (আল্লাহ্‌র) সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠ নিয়ত কামনা করছি। কেননা অন্তর তার হাতেই রয়েছে। আমি এ আশাও করছি যে, তাঁর সৃষ্টি জীবের কাউকে যেন এই একনিষ্ঠ নিয়্যাতের মধ্যে অংশীদার না করেন। আর এই নিষ্ঠার সম্পূর্ণ প্রতিদান যেন সাক্ষাৎ এর দিন (ক্বিয়ামতের দিন) আমাকে দান করেন!

﴿يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ ٭ إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ﴾

যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না। তবে যিনি আল্লাহ্‌র কাছে সুস্থ অন্তরে আসবেন তার ব্যাপার টি আলাদা। (সূরা : শু‘আরা-৮৮,৮৯)

আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গের উপর এবং তাঁর সাহাবাদের উপর আল্লাহ্‌র দয়া, শান্তি ও বরকত অবতীর্ণ হোক!


নিবেদক

দয়ালু পালনকর্তা, সমস্ত জাহানের মালিক আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে ক্ষমা ভিখারী
আবূ মালিক কামাল ইবনু সাইয়্যিদ সালিম

[1] ‘জা‘মিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহ’ (২/৪৬) ।

[2] ‘জা‘মিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহ’ (২/৪৬) ।

[3] ‘জা‘মিউ বায়ানিল ইলম’ (১/৮০) ।