উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نخرجهن في الفطر والأضحى: العواتق، والحيض، وذوات الخدور، فأما الحيض فيعتزلن الصلاة - وفي لفظ: المصلى - ويشهدن الخير، ودعوة المسلمين«
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন, যেন আমরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ঋতুমতী, যুবতী ও অবিবাহিতা নারীদের বের করি, তবে ঋতুমতী নারীরা সালাত থেকে বিরত থাকবে, অপর বর্ণনায় আছে: মুসল্লীদের থেকে দূরে থাকবে এবং কল্যাণ ও মুসলিমদের দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবে”।[1]
শাওকানী রহ. বলেন: “এ হাদীস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দুই ঈদের দিন নারীদের ঈদগাহ যাওয়া বৈধ, এতে কুমারী, বিধবা, যুবতী, বৃদ্ধা, ঋতুমতী ও অন্যদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তবে যদি সে যদি ইদ্দত পালনকারী হয় অথবা তার বের হওয়ায় ফেতনার আশঙ্কা থাকে অথবা কোনো সমস্যা হলে বের হবে না”।[2] সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া ‘মাজমু‘ ফাতাওয়ায়’: (৬/৪৫৮ ও ৪৫৯) বলেন: “মুমিন নারীদের বলা হয়েছে যে, জামা‘আত ও জুমআয় উপস্থিত হওয়া অপেক্ষা ঘরে সালাত পড়াই তাদের জন্য অধিক উত্তম তবে ঈদ ব্যতীত। ঈদে তাদের উপস্থিতির আদেশ রয়েছে, কয়েকটি কারণে, আল্লাহ ভালো জানেন:
এক. ঈদ বছরে মাত্র দু’বার, তাই তাদের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য পক্ষান্তরে জুমু‘আ ও জামা‘আত এরূপ নয়।
দুই. ঈদের সালাতের কোনো বিকল্প নেই, পক্ষান্তরে জুমু‘আ ও জামা‘আতের বিকল্প আছে, কারণ ঘরে জোহর আদায় করাই নারীর জন্য জুমু‘আ আদায় করা।
তিন. ঈদের সালাতের জন্য বের হওয়া মূলত আল্লাহর যিকিরের জন্য ময়দানে বের হওয়া, যা কয়েক বিবেচনায় হজের সাথে মিল রাখে। এ জন্য হাজীদের সাথে মিল রেখে হজের মৌসুমেই বড় ঈদ হয়। সমাপ্ত।
শাফে‘ঈগণ বলেন: সাধারণ নারীরা যাবে, বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নারীরা যাবে না।
ইমাম নাওয়াওয়ী ‘আল-মাজমু’: (৫/১৩) গ্রন্থে বলেন: শাফে‘ঈ ও তার সাথীগণ বলেছেন: সাধারণ নারীদের ঈদের সালাতে হাযির হওয়া মুস্তাহাব, সম্ভ্রান্ত ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নারীদের সালাতে বের হওয়া মাকরূহ... অতঃপর বলেন: তারা যখন বের হবে নিম্নমানের কাপড় পরিধান করে বের হবে, আবেদনময়ী কাপড় পরিধান করে বের হবে না, তাদের জন্য পানি দ্বারা পরিচ্ছন্ন হওয়া মুস্তাহাব, তবে সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ। এ বিধান বৃদ্ধা ও তাদের ন্যায় নারীদের জন্য যারা বিবাহের ইচ্ছা রাখে না, তবে যুবতী, সুন্দরী এবং বিবাহের ইচ্ছা রাখে এরূপ নারীদের উপস্থিত হওয়া মাকরূহ। কারণ, এতে তাদের ওপর ও তাদের দ্বারা অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা থাকে। যদি বলা হয়, এ বিধান উল্লিখিত উম্মে আতিয়্যার হাদীসের বিপরীত, আমরা বলব: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, তিনি বলেছেন: “নারীরা যা করছে তা যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতেন অবশ্যই তাদেরকে নিষেধ করতেন, যেরূপ বনু ইসরাঈলের নারীদের নিষেধ করা হয়েছে।” দ্বিতীয়ত প্রথম যুগের তুলনায় বর্তমান যুগে ফিতনার উপকরণ অনেক বেশি। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন। সমাপ্ত
আমি বলি: আমাদের যুগে ফিতনা আরো মারাত্মক।
ইমাম ইবনুল জাওযী ‘আহকামুন নিসা’: (পৃ. ৩৮) গ্রন্থে বলেন: আমরা বর্ণনা করেছি যে, নারীদের বের হওয়া বৈধ; কিন্তু যদি তাদের নিজেদের কিংবা তাদের দ্বারা অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা হয় তাহলে বের না হওয়াই উত্তম। কারণ, প্রথম যুগের নারীরা যেভাবে লালিত-পালিত হয়েছে সেভাবে এ যুগের নারীরা হয় নি, পুরুষদের অবস্থাও তথৈবচ”। সমাপ্ত। অর্থাৎ তারা অনেক তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
হে মুসলিম বোন, এসব উদ্ধৃতি থেকে জান যে, ঈদের সালাতের জন্য তোমার বের হওয়া শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ, তবে শর্ত হচ্ছে পর্দা ও সম্ভ্রমকে সংরক্ষণ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ, মুসলিমদের দো‘আয় অংশ গ্রহণ ও ইসলামের নিদর্শনকে বুলন্দ করার ইচ্ছায়, তার উদ্দেশ্য কখনো সৌন্দর্য চর্চা ও ফিতনার মুখোমুখি হওয়া নয়।
[2] নাইলুল আওতার: (৩/৩০৬)=