পর্দার অর্থ নারী স্বীয় শরীরকে পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখা, যারা তার মাহরাম নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ﴾ [النور: ٣١]
“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই ব্যতীত সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“আর যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু প্রার্থনা কর, তবে পর্দার আড়াল থেকে তাদের কাছে চাও”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
এখানে পর্দার উদ্দেশ্য নারীকে আড়ালকারী দেয়াল অথবা দরজা অথবা পোশাক। আয়াতটি যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে; কিন্তু তাতে সকল মুমিন নারীই প্রবেশ করবে; যেহেতু এখানে আল্লাহ তার কারণ বলেছেন:
﴿ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“এটিই তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতা”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩] আর অন্তরের পবিত্রতা সবার প্রয়োজন, তাই এ হুকুম সবার জন্য ব্যাপক। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “জিলবাব অর্থ হচ্ছে অবগুণ্ঠন ও বোরকা। ইবন মাস‘উদ এটিকেই চাদর বলেছেন। আর সাধারণরা এটাকে বলে: ইযার। বড় ইযার মাথা ও সারা শরীর ঢেকে নেয়। আবু উবায়দাহ প্রমুখ বলেন: ইযার মাথার উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে চোখ ব্যতীত কিছু দেখা যায় না। ঘোমটা ইযার বা চাদর থেকেই হয়। সমাপ্ত[1]।
মাহরাম ব্যতীত পরপুরুষ থেকে নারীদের চেহারা ঢাকার হাদীস। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم محرمات، فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها، فإذا جاوزنا كشفناه«
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুহরিম ছিলাম, আরোহীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। যখন তারা আমাদের বরাবর হত, আমরা প্রত্যেকে জিলবাব মাথার উপর থেকে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম, যখন তারা আমাদের ছাড়িয়ে যেত আমরা তা খুলে ফেলতাম”।[2]
মাহরাম ব্যতীত অন্যান্য পুরুষদের থেকে নারীদের চেহারা ঢাকার দলীল কুরআন ও সুন্নায় অনেক রয়েছে, এ জন্য মুসলিম বোন হিসেবে আমি তোমাকে কয়েকটি কিতাব অধ্যয়ণের নির্দেশ দিচ্ছি: শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রচিত حجاب المرأة ولباسها في الصلاة শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রচিত حكم السفور والحجاب হামুদ ইবন আব্দুল্লাহ তুওয়াইজুরি রচিতالصارم المشهور على المفتونين بالسفور এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন রচিত رسالة الحجاب কিতাবগুলো পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ কিতাবসমূহে যা রয়েছে তাই যথেষ্ট।
হে মুসলিম বোন, যেসব আলেম বলেন তোমার চেহারা খোলা বৈধ, যদিও তাদের কথা দুর্বল, তবুও তারা নিরাপত্তার শর্তারোপ করেছেন। আর ফেতনার কোনো নিরাপত্তা নেই, বিশেষ করে এ যুগে, যখন নারী ও পুরুষের মাঝে দীন সুরক্ষার প্রেরণা কমে গেছে, কমে গেছে লজ্জা। পক্ষান্তরে ফিতনার দিকে আহ্বানকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর নারীরা চেহারায় বিভিন্নভাবে সৌন্দর্য গ্রহণ করে, যা মূলত ফিতনার দিকেই আহ্বান করছে।
হে মুসলিম বোন, তুমি তা থেকে বিরত থাক, ফিতনা থেকে সুরক্ষাদানকারী হিজাব ব্যবহার কর। পূর্বাপর কোনো আলেম বর্তমান যুগে নারীরা যে ফিতনায় পতিত হয়েছে তার বৈধতা দেন নি। আর মুসলিম নারীরা লোক দেখানো যে পর্দা পরিধান করে তারও কেউ অনুমোদন দেন নি। পর্দার সমাজে থাকলে পর্দা করে পর্দাহীন পরিবেশে গেলে পর্দা ত্যাগ করে। আর কতক নারী পাবলিক স্থানে পর্দা করে; কিন্তু যখন মার্কেটে অথবা হাসপাতালে যায় অথবা কোনো স্বর্ণকারের সাথে কথা বলে অথবা কোনো দর্জির সাথে কথা বলে, তখন সে চেহারা ও বাহু খুলে ফেলে যেন স্বামী অথবা কোনো মাহরামের সাথেই কথা বলছে। এ জাতীয় কর্মে লিপ্ত নারীরা আল্লাহকে ভয় কর। বাহির থেকে আগত আমরা কতক নারীকে দেখি প্লেন যখন দেশের মাটিতে ল্যান্ড করে তখন তারা হিজাব পরে, যেন হিজাব পরা একটি দেশীয় কালচার, শর‘ঈ কোনো বিষয় নয়।
হে মুসলিম নারী, ব্যাধিতে আক্রান্ত অন্তর ও কুকুর শ্রেণীর মানুষ থেকে পর্দা তোমাকে সুরক্ষা দিবে। তারা তোমার থেকে নিরাশ হবে। অতএব, তুমি পর্দাকে জরুরি কর ও তাকে আকড়ে ধর। তুমি অপ্রচারের শিকার হয়ো না, যারা পর্দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে অথবা নারীকে তার মর্যাদার আসন থেকে বিচ্যুত করছে, কারণ তারা তোমার অনিষ্ট চায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَيُرِيدُ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلشَّهَوَٰتِ أَن تَمِيلُواْ مَيۡلًا عَظِيمٗا﴾ [النساء: ٢٧]
“আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা প্রবলভাবে (সত্য থেকে) বিচ্যুত হও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৭]
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮৩৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৩৫; আহমদ (৬/৩০)