নতুন নিয়মের মধ্যে আরেকটা বিষয় অশোভন বলে প্রতীয়মান হয়, তা হল যীশুকে ‘Cursed’ অর্থাৎ অভিশপ্ত বা বদদোয়াগ্রস্ত বলা। যীশু নিজে কখনো এ কথা বলেননি; তবে পল তা দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, দু’টা কারণে যীশু অভিশপ্ত: (১) তিনি শরীয়ত মানতেন; আর যে শরীয়ত মানে সে অভিশপ্ত। (২) তিনি ক্রুশে মরেছেন; আর তৌরাতের বিধানে ক্রুশে মৃত ব্যক্তি অভিশপ্ত।
এ বিষয়ে গালাতীয় ৩/১০-১৩ বলছে : “For as many as are of the works of the law are under the curse ... Christ hath redeemed us from the curse of the law, being made a curse for us: for it is written, Cursed is every one that hangeth on a tree.” ‘‘যারা তৌরাত (শরীয়ত) পালন করে তারা সকলেই অভিশাপের অধীন... খ্রিষ্ট আমাদেরকে তৌরাতের (শরীয়তের) অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছেন, আমাদের জন্য একটা অভিশাপ বানানো হওয়ার মাধ্যমে; কারণ পাক-কিতাবে লেখা আছে, গাছে ঝুলানো প্রতিটা ব্যক্তিই অভিশপ্ত।’’
কি. মো.-২০১৩: ‘‘বাস্তবিক যারা শরীয়তের কাজ অবলম্বন করে তারা সকলে বদদোয়ার অধীন, কারণ লেখা আছে, ‘যে কেউ শরীয়ত কিতাবে লেখা সমস্ত কথা পালন করার জন্য তাতে স্থির না থাকে, সে বদদোয়াগ্রস্ত।... মসীহই মূল্য দিয়ে আমাদের শরীয়তের বদদোয়া (অভিশাপ) থেকে মুক্ত করেছেন, কারণ তিনি আমাদের জন্য শাপ-স্বরূপ হলেন; কেননা লেখা আছে, ‘যাকে গাছে টাঙ্গানো হয়, সে বদদোয়াগ্রস্ত’।’’ (গালাতীয় ৩/১০, ১৩)
কি. মো.-২০০৬: ‘‘যারা শরীয়ত পালন করবার উপর ভরসা করে তাদের সকলের উপরে এই বদদোয়া রয়েছে। ... শরীয়ত অমান্য করার দরুন যে বদদোয়া আমাদের উপর ছিল মসীহ সেই বদদোয়া নিজের উপর নিয়ে আমাদের মুক্ত করেছেন।...’’ (গালাতীয় ৩/১১-১৩)
কিং জেমস ভার্শনের পাঠ: ‘being made a curse for us: আমাদের জন্য তাঁকে অভিশাপ বানানো হল’। কমপিস্নট জুইশ বাইবেল (CJB: Complete Jewish Bible)-এর পাঠ: ‘The Messiah redeemed us from the curse pronounced in the Torah by becoming cursed on our behalf: মাসীহ নিজে আমাদের পক্ষ থেকে অভিশপ্ত হয়ে তৌরাতে উচ্চারিত অভিশাপ থেকে আমাদেরকে মুক্ত করলেন।’
এভাবে পল যীশুকে অভিশপ্ত বলে দাবি করলেন। বিষয়টা খুবই বিস্ময়কর:
(১) তৌরাতে ঈশ্বরের বিধান অমান্য করে নরহত্যা, ব্যভিচার, ঘুষ ইত্যাদি মহাপাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। এ সকল মহাপাপীকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করা ঈশ্বরের মহা দায়িত্বে পরিণত হল!
(২) তৌরাতের অভিশাপ ঈশ্বরের। অভিশাপ দিলেন ঈশ্বর। এরপর তা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তিনিই পাগলপারা হয়ে গেলেন? এ কি সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের পরিচয়?
(৩) মহাপাপীদেরকে অভিশাপ মুক্ত করার জন্য এ ‘অভিশাপ’ অন্য কারো উপর আরোপ করতেই হবে! যেমন যীশু পাগলের মধ্য থেকে ভূত বের করে ২ হাজার শূকরের মধ্যে প্রবেশ করাতে বাধ্য হলেন! ঈশ্বরের ভা-ার থেকে অভিশাপ বেরিয়ে গিয়েছে। একে আর ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষমতা ঈশ্বরের নেই? অন্তত একজনকে অভিশাপ ভোগ করতেই হবে? ঈশ্বর কি অভিশাপটা অকার্যকর করার আর কোনো উপায় পেলেন না? বাইবেল বলছে, ঈশ্বরের পক্ষে সবই সম্ভব: with God all things are possible’’ (মার্ক ১০/২৭) অথচ ঈশ্বর একজনকে ক্রশে ঝুলিয়ে অভিশপ্ত না করে তাঁরই দেওয়া অভিশাপ কাটাতে পারলেন না?
(৪) ঈশ্বর অভিশাপটা শয়তান বা আর কারো উপর আরোপ করতে পারলেন না। স্বয়ং ঈশ্বরকে তাঁর পুত্রসত্তার মাধ্যমে অভিশপ্ত হতে হল?
(৫) অভিশপ্ত হওয়ার জন্য ফাঁসিতে ঝোলা বা ক্রুশে চড়া ছাড়া আর কোনো উপায় ঈশ্বরের ভা-ারে ছিল না? তৌরাতের মহাপাপগুলো: নরহত্যা, পিতামাতার অবমাননা, ব্যভিচার ইত্যাদি পাপগুলো একত্রে পালন করলে কি হত না?
(৬) শাপগ্রস্ত বস্ত্ত ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য: ‘‘কোন ঘৃণার জিনিস তোমাদের ঘরে আনবে না। ওগুলো তোমরা মনে-প্রাণে ঘৃণা ও তুচ্ছ করবে, কারণ ওগুলোর উপর রয়েছে ধ্বংসের বদদোয়া (for it is a cursed thing এগুলো অভিশপ্ত দ্রব্য)। ওগুলো যদি তোমরা ঘরে আন তবে তোমাদের উপরও ধ্বংসের বদদোয়া নেমে আসবে (lest thou be a cursed তোমরাও অভিশপ্ত হবে)।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৭/২৬)
পলের দাবি অনুসারে যীশুও কি তাহলে এরূপ পরিত্যাজ্য। তাঁকে ঘরে বা মনে স্থান দেওয়া যাবে না? তাহলে সে ঘর বা সে ব্যক্তি অভিশপ্ত হয়ে যাবে?
(৭) ঈশ্বরকে অভিশপ্ত বলে দাবি বা বিশ্বাস করা কি মহাপাপ ও ঈশ্বর নিন্দা নয়? মানবতাকে পাপের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আর কোনো পথ কি ছিল না? পাপের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য পাপ মুক্ত হতে শিক্ষা দেওয়া দরকার, না পাপের অভিশাপ নিজে বহন করে সকলকে ঢালাও পাপের অনুমতি দেওয়া দরকার?