অলৌকিকতার নামে উপরের বিবেকবিরুদ্ধ কর্মগুলোর বিপরীতে ইঞ্জিলের মধ্যে অলৌকিক কর্মে যীশুর অক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশু নিজ গ্রাম ‘নাযারেথ’ বা ‘নাসরত’ গ্রামে বড় কোনো অলৌকিক কর্ম করতে সক্ষম হলেন না।
মার্ক ৬/৫-৬: “he could there do no mighty work, save that he laid his hands upon a few sick folk, and healed them.”
কি. মো.-২০০৬:: ‘‘তারপর তিনি কয়েকজন অসুস্থ লোকের উপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন, কিন্তু সেখানে আর কোন অলৌকিক কাজ করা সম্ভব হল না। লোকেরা তাঁর উপর ঈমান আনল না দেখে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন।’’
কি. মো.-১৫: ‘‘তখন তিনি সেই স্থানে আর কোনো কুদরতি-কাজ করতে পরলেন না; কেবল কয়েক জন রোগগ্রস্ত লোকের উপরে হাত রেখে তাদেরকে সুস্থ করলেন। আর তিনি তাদের ঈমান না আনার দরুন আশ্চর্য জ্ঞান করলেন।’’
ইঞ্জিলের এ বর্ণনায় পাঠকরাও খুব আশ্চর্য হন! একজন সমালোচক লেখেছেন: “Must Jesus have a non-familiar audience before His miracles can be performed? This certainly shows some of Jesus' limitations. Who really knew Jesus better than the people in his homeland. It indicated that those who truly knew Jesus didn't much believe in Him. What else could it mean?”
‘‘যীশুর অলৌকিক কার্য সম্পাদনের জন্য কি তাঁর সামনে অপরিচিত দর্শকবৃন্দ থাকা জরুরি ছিল? এটা নিশ্চিতভাবেই যীশুর কিছু সীমাবদ্ধতা প্রদর্শন করে। যীশুর নিজের শহরের মানুষদের চেয়ে তাঁকে অধিক ভালভাবে আর কেউই জানত না। এটা প্রমাণ করে যে, যারা যীশুকে সত্যিকারভাবে জানতেন তারা তাঁকে তেমন বিশ্বাস করতেন না। এ ছাড়া এ কথার আর কী অর্থ হতে পারে?’’[1]
আরেকটা অলৌকিক কর্ম প্রসঙ্গে লূক লেখেছেন: ‘‘তাদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। ডাক্তারদের পিছনে সে তার সব কিছুই খরচ করেছিল, কিন্তু কেউই তাকে ভাল করতে পারেনি। সে পিছন দিক থেকে ঈসার কাছে এসে তাঁর চাদরের কিনারা ছুঁলো, আর তখনই তার রক্তস্রাব বন্ধ হল। তখন ঈসা বললেন,‘কে আমাকে ছুঁলো?’ সবাই অস্বীকার করলে পর পিতর ও তাঁর সংগীরা ঈসাকে বললেন, ‘হুজুর, লোকেরা আপনার চারপাশে চাপাচাপি করে আপনার উপর পড়ছে।’ তবুও ঈসা বললেন, ‘আমি জানি, কেউ আমাকে ছুঁয়েছে, কারণ আমি বুঝতে পারলাম আমার মধ্য থেকে শক্তি বের হল।’ সেই স্ত্রীলোকটা যখন দেখল সে ধরা পড়েছে তখন কাঁপতে কাঁপতে ঈসার সামনে সে উপুড় হয়ে পড়ল।’’ (লূক ৮/৪৩-৪৭, মো.-০৬)
মার্কও ঘটনাটা লেখেছেন। তাঁর বর্ণনায় রয়েছে: ‘‘ঈসা তখনই বুঝলেন যে, তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে। সেজন্য তিনি ভিড়ের চারিদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে আমার কাপড় ছুঁলো?’ তার সাহাবীরা বললেন, আপনি তো দেখছেন লোকে আপনার চারপাশে ঠেলাঠেলি করছে, আর তবুও আপনি বলছেন, কে আপনাকে ছুঁলো?’ এই কাজ কে করেছে তা দেখবার জন্য তবুও ঈসা চারদিকে তাকাতে লাগলেন। সেই স্ত্রীলোকটার যা হয়েছে তা বুঝে সে কাঁপতে কাঁপতে এসে ঈসার পায়ে পড়ল এবং সব বিষয় জানাল। (মার্ক ৫/৩০-৩২, মো.-০৬)
এ ঘটনায় আমরা দেখছি যে, যীশুর অলৌকিক জ্ঞান ও ক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ। আমরা দেখি যে, আমাদের সমাজে অনেক ঠাকুর, সাঁই বাবা, গোসাই বাবা, পীর বাবা ও এ জাতীয় অনেক ভণ্ড ধর্মগুরু এর চেয়ে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা দেখান। এদের ভক্তবৃন্দ আরো অনেক বড় বড় কারামতি বা অলৌকিক কর্মের গল্প বলেন ও লেখেন। এরূপ ‘বাবার আশীর্বাদ’ পেয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য তাকে স্পর্শ করা লাগে না, দূর থেকে তাকে ধ্যান করলেই হয়। এছাড়া এ সকল গুরু বা বাবা নাকি না দেখেই বলে দিতে পারেন কে তাকে ছুঁয়েছে বা তার বিষয়ে কে কি কথা বলেছে!
কিন্তু ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশুর অলৌকিক ক্ষমতা কম! তাঁকে না ছুঁয়ে ভাল হওয়া যায় না। কেউ তাঁকে ছুঁলে তিনি তার পরিচয় জানতে পারেন না। তাঁর থেকে শক্তি বের হওয়া বুঝতে পারলেও শক্তিটা কার কাছে গেল তা জানার ক্ষমতা তাঁর ছিল না!