তৃতীয় হিজরী শতক থেকে ধর্ম-বিশ্বাস ও এ বিষয়ক মূলনীতিসমূহ বুঝাতে ‘আস-সুন্নাহ’ শব্দটির ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে।
‘সুন্নাহ’ বা ‘সুন্নাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ: মুখ, ছবি, প্রতিচ্ছবি, প্রকৃতি, জীবন পদ্ধতি, কর্মধারা ইত্যাদি।[1] ইসলামী শরীয়তে ‘সুন্নাত’ অর্থ রাসূলে আকরাম (ﷺ) -এর কথা, কর্ম, অনুমোদন বা এক কথায় তাঁর সামগ্রিক জীবনাদর্শ।[2] সুন্নাহ শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘এহইয়াউস সুনান’ গ্রন্থে। বিদগ্ধ পাঠককে গ্রন্থটি পাঠ করতে অনুরোধ করছি।
আমরা উল্লেখ করেছি যে, সাহাবীগণের পরবর্তী প্রজন্ম থেকে ঈমান বা ধর্ম-বিশ্বাস বিষয়ক কিছু বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। যুক্তি, তর্ক, দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বাস বিষয়ক কুরআন ও হাদীসের নির্দেশাবলি বিচার করে কোনোটি গ্রহণ ও কোনোটি ব্যাখ্যার নামে বর্জন করতে শুরু করেন কোনো কোনো নতুন মুসলমান। এ বিষয়ে তারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত বা কোনো কোনো হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করলেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের সামগ্রিক মূলনীতির বাইরে চলে যেতেন। এদের বিভ্রান্তি প্রকাশ করতে এবং বিশ্বাসের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের মূলনীতি আলোচনা করতে তৃতীয় শতাব্দী থেকে অনেক ইমাম ও আলিম ‘আস-সুন্নাহ’ নামে ‘আকীদা’ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন।
এদের অন্যতম ছিলেন ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বাল (২৪১ হি)। তিনি ‘আস-সুন্নাহ’ নামে আকীদা বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। একই নামে আকীদা বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন তাঁর প্রসদ্ধি ছাত্র ইমাম আবূ বাকর আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হানি আল-আসরাম (২৭৩হি), ইমাম আবূ আলী হাম্বাল ইবনু ইসহাক ইবনু হাম্বাল আশ-শাইবানী (২৭৩হি), ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আস‘আস আস-সিজিসতানী (২৭৫ হি), ইমাম আবূ বাকর আহমদ ইবনু আমর ইবনু আবী আসিম আদ-দাহ্হাক আশ-শাইবানী (২৮৭ হি), ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বাল (২৯০ হি), ইমাম আবূ বাক্র আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হারূন আল-বাগদাদী আল-খাল্লাল (৩১১ হি), ইমাম আবূ জা’ফার মুহাম্মাদ ইবনু জারীর তাবারী (৩১১ হি), ইমাম তাবারানী আবুল কাসিম সুলাইমান ইবনু আহমদ (৩৬০হি), ইমাম আবূশ শাইখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জাফার ইবনু হাইয়ান আল-আসপাহানী (৩৬৯ হি), ইমাম ইবনু শাহীন আবূ হাফস উমার ইবনু আহমাদ ইবনু উসমান আল-বাগদাদী (৩৮৫হি), ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ইবনু মান্দাহ আল-ইসপাহানী (৩৯৫ হি) ও আরো অনেক প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ।
[2] সুন্নাতের ব্যবহারিক অর্থ দেখুন: আলউদ্দীন বুখারী, কাশফুল আসরার আলা উসূলিল বাযদাবী ২/৬৫৩, মুললা আলী কারী, শরাহু শারহি নুখবাতিল ফিকর, পৃ: ১৫৩-১৫৬।