কিয়ামতের পর জান্নাতকে ঈমানদারদের নিকটে নিয়ে আসা হবে। তারা তাতে প্রবেশ করার জন্য অস্থির হয়ে যাবে। অপরদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিচার, হিসাব নিকাশে দেরী করবেন। তখন মানুষেরা নবী ও রাসূলদের কাছে যাবে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার জন্য। তখন প্রত্যেক নবীই বলবে, আমি আমার জন্য চিন্তিত তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও।
জান্নাত ঈমানদারদের নিকটবর্তী করা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأُزۡلِفَتِ ٱلۡجَنَّةُ لِلۡمُتَّقِينَ غَيۡرَ بَعِيدٍ ٣١﴾ [ق: ٣١]
“আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে কাছেই আনা হবে”। [সূরা কাফ, আয়াত: ৩১]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَإِذَا ٱلۡجَنَّةُ أُزۡلِفَتۡ ١٣﴾ [التكوير: ١٣]
“আর যখন জান্নাতকে নিকটকর্তী করা হবে”। [সূরা আত তাকবীর, আয়াত: ১৩]
একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা ও হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَجْمَعُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ، فَيَقُومُ الْمُؤْمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ لَهُمُ الْجَنَّةُ، فَيَأْتُونَ آدَمَ، فَيَقُولُونَ: يَا أَبَانَا، اسْتَفْتِحْ لَنَا الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: وَهَلْ أَخْرَجَكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلَّا خَطِيئَةُ أَبِيكُمْ آدَمَ، لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى ابْنِي إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ اللهِ......»
“আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল মানুষকে একত্র করবেন তখন ঈমানদারগণ দাঁড়িয়ে যাবে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য। তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করুন। আদম আলাইহিস সালাম উত্তরে বলবেন, তোমরা কি জান না, তোমাদের পিতা আদমের ভুলের কারণে তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? আমার আবেদন করার অধিকার নেই। বরং তোমরা ইবারহীম খলীলুল্লাহর কাছে যাও.........”।[1]
হাদীসে এ বিষয়ে বিস্তারিত এভাবে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ، وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَشَ مِنْهَا نَهْشَةً، ثُمَّ قَالَ: " أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَهَلْ تَدْرُونَ مِمَّ ذَلِكَ؟ يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، يُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي وَيَنْفُذُهُمُ البَصَرُ، وَتَدْنُو الشَّمْسُ، فَيَبْلُغُ النَّاسَ مِنَ الغَمِّ وَالكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَلاَ يَحْتَمِلُونَ، فَيَقُولُ النَّاسُ: أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ، أَلاَ تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ؟ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ: عَلَيْكُمْ بِآدَمَ، فَيَأْتُونَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَيَقُولُونَ لَهُ: أَنْتَ أَبُو البَشَرِ، خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ، وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ، وَأَمَرَ المَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ آدَمُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُونَ: يَا نُوحُ، إِنَّكَ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ، وَقَدْ سَمَّاكَ اللَّهُ عَبْدًا شَكُورًا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُونَ: يَا إِبْرَاهِيمُ أَنْتَ نَبِيُّ اللَّهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَيَقُولُ لَهُمْ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ كُنْتُ كَذَبْتُ ثَلاَثَ كَذِبَاتٍ - فَذَكَرَهُنَّ أَبُو حَيَّانَ فِي الحَدِيثِ - نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى فَيَأْتُونَ، مُوسَى فَيَقُولُونَ: يَا مُوسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، فَضَّلَكَ اللَّهُ بِرِسَالَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ عَلَى النَّاسِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُونَ: يَا عِيسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي المَهْدِ صَبِيًّا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ عِيسَى: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ قَطُّ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ ذَنْبًا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ، فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا فَيَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتِمُ الأَنْبِيَاءِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَأَنْطَلِقُ فَآتِي تَحْتَ العَرْشِ، فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ مَحَامِدِهِ وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا، لَمْ يَفْتَحْهُ عَلَى أَحَدٍ قَبْلِي، ثُمَّ يُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ سَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلْ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ مِنَ البَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ، ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ مَا بَيْنَ المِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الجَنَّةِ، كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَحِمْيَرَ - أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى - "
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একদিন বকরীর ডানার মাংস পরিবেশন করা হলো। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি এটি দাতের কিনারা দিয়ে চিবাতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এটা কীভাবে হবে? কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্র করবেন একটি প্রান্তরে। তারা সকলকে শুনবে ও দেখবে। সূর্য মানুষের নিকটবর্তী হবে। মানুষেরা এমন দুঃচিন্তা অস্থিরতায় বন্দি হবে, যা তারা সহ্য করতে পারবে না আবার এর থেকে বাঁচতেও পারবে না। তখন মানুষেরা একে অপরকে বলবে, দেখছো আমরা কি দুরবস্থায় পতিত হয়েছি? আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে কে সুপারিশ করবে আমরা কি সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবো না? চলো আমরা আদম আলাইহিস সালামের কাছে যাই। তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে আপনার মধ্যে আত্মা ফুকে দিয়েছেন। তিনি আপনাকে সাজদাহ করার জন্য ফিরিশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে শুপরিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি দুরাবস্থায় আছি? আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পতিত হয়েছি? আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। তিনি তো আমাকে সেই গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তা অমান্য করেছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। নূহের কাছে যাও। তারা নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে হে নূহ! আপনি পৃথিবীতে প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা বলে অভিহিত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে দো‘আ করেছিলাম। আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তারা বলবে, আপনি আল্লাহর নবী ও পৃথিবী বাসীর মধ্যে তার খলীল (বন্ধু)। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি কিছু মিথ্যা বলেছিলাম। তাই আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে মূছা আপনি আল্লাহ তা‘আলার রাসূল। আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে ধন্য করেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি একজন মানুষকে হত্যা করেছিলাম। অথচ আমি এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলাম না। এখন আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি দোলনাতে থাকাকালেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনাকে আল্লাহর বাক্য ও তার পক্ষ থেকে রূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা মারইয়ামের কাছে পাঠানো হয়েছে। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। তারা আমার কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আল্লাহ রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? আমি চলে আসবো তখন ‘আরশের নিচে। আর আমার রবের জন্য সাজদাহ করবো। তখন আল্লাহ আমার জন্য তার রহমত উম্মুক্ত করবেন। আমাকের এমন প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনার বাণী অন্তরে গেথে দিবেন যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয় নি। অতঃপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি প্রার্থনা করো, তোমার প্রার্থনা কবুল করা হবে। তুমি সুপারিশ করো তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। তখন আমি বলবো, হে রব! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত!! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মতদের জান্নাতে প্রবেশ করাও। তবে তাদেরকে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না। তাদের জান্নাতের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অবশ্য অন্যসব দরজা দিয়েও তারা প্রবেশ করতে পারবে। যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার শপথ, জান্নাতের গেটের দু পাটের মধ্যে প্রশস্ততা হবে মক্কা ও বসরার মধ্যে দূরত্বের সমান”। [2]
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. হাদীসে দেখা যায় নবীগণ সেদিন প্রত্যেকে নিজেদের অন্যায়গুলোর কথা মনে করবেন। আসলে নবীগণ সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত ছিলেন। তবে তারা যে পাপের কথা বলবেন তা হলো আল্লাহ তা‘আলার প্রতি তাদের বিনয় ও পরিপূর্ণ আত্ন-সমর্পনের প্রকাশ।
দুই. ইবারহীম আলাইহিস সালাম যে মিথ্যা বলেছিলেন এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, ইবারহীম আলাইহিস সালাম তিনটি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। প্রথমটি হলো, তাকে যখন মূর্তি পুজার উৎসবে যেতে বলা হলো, তখন তিনি বলেছিলেন আমি অসুস্থ। দ্বিতয়টি হলো, যখন তিনি মূর্তিগুলো ভেঙ্গে বড় মূর্তিটি রেখে দিয়েছিলেন আর লোকরা জিজ্ঞস করল এটা কে করেছে? তখন তিনি বলেছিলেন, বড় মূর্তিটি এ কাজ করেছে। তৃতীয়টি হলো, যখন তিনি নিজ স্ত্রী সারাকে নিয়ে সফর করছিলেন তখন এক অত্যাচারী লোকের থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য স্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, এ আমার বোন।
আসলে এগুলো ইবরাহীমের দৃষ্টিভংগিতে মিথ্যা ছিল না। কিন্তু কোনো কোন শ্রোতার কাছে এগুলো মিথ্যার মত মনে হয়েছে। আর এগুলো মিথ্যা হলেও নিন্দনীয় মিথ্যা নয়। এগুলো নন্দিত মিথ্যা। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কিয়ামতের সময় যে বলবেন আমি মিথ্যা বলেছি সেটা আল্লাহর কাছে চরম বিনয় ও পূর্ণ আত্নসমর্পনের বহি:প্রকাশ হিসাবেই বলবেন। সেদিন ভয়াবহতা এমন হবে যে, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাগনও তাদের অনেক ভালো কাজকে খারাপ বলে ধারনা করতে থাকবে।
তিন. সকল নবী ও রাসূলগণের ওপর আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হলো।
চার. আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ-প্রার্থনার সুন্নত তরিকা হলো, দো‘আর শুরুতে তার গুণগান, প্রশংসা ও হামদ-সানা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ভয়াবহ সময়েও আল্লাহ তা‘আলার হামদ-প্রশংসার সুন্দর এ আদর্শটি ভুলে যাবেন না।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৪।