আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে বলেন,

﴿ وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ ٱلۡكِتَٰبُ وَجِاْيٓءَ بِٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيۡنَهُم بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ٦٩ ﴾ [الزمر: ٦٧، ٦٨]

“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না”। [সূরা আয-যুমার. আয়াত: ৬৮-৬৯]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ ٥١﴾ [يس: ٥١]

“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

﴿وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ﴾

“আর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে সবাই ভীত হবে; তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া। আর সবাই তাঁর কাছে হীন অবস্থায় উপস্থিত হবে”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৭]

এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:

১- প্রথম শিঙ্গা ফুৎকারে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা থাকবে সকলেই বেহুশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাদের রক্ষা করবেন তারা বেহুশ হবে না।

২- দ্বিতীয় বার শিঙ্গা ফুঁক দিলে সকলেই জীবিত হয়ে উঠবে।

৩- দুই বার শিঙ্গা ফু‍কের বিষয়টি প্রমাণিত হলো।

৪- দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুৎকারের পর পৃথিবী আলোকিত হবে, হিসাব-নিকাশ শুরু হবে।

৫- দ্বিতীয় আয়াতে যে শিঙ্গা ফুৎকারের কথা এসেছে সেটা দ্বিতীয় ও শেষ ফুঁৎকার।

৬- তৃতীয় আয়াতে যে ফুৎকারের কথা আলোচিত হয়েছে সেটা হলো প্রথম ফুৎকার।

৭- শুধু পৃথিবীর অধিবাসীরা নয়। আকাশের অধিবাসীরাও কিয়ামতের ভয়াবহতায় কম্পিত হবে।

হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ» قَالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: أَرْبَعُونَ شَهْرًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: «ثُمَّ يُنْزِلُ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ البَقْلُ، لَيْسَ مِنَ الإِنْسَانِ شَيْءٌ إِلَّا يَبْلَى، إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ، وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الخَلْقُ يَوْمَ القِيَامَةِ»

“দুই শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে সময় হলো চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আবু হুরায়রা উহা কি চল্লিশ দিন? আমি (আবু হুরায়রা) না বললাম। তারা জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? আমি বললাম, না। তারা জিজ্ঞেস করল তাহলে কি চল্লিশ বছর? আমি বললাম, না। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। তখন মানুষেরা জেগে উঠবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। মানুষের দেহের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে শুধু মেরুদন্ডের একটি হাড্ডি। আর এটি দিয়েই কিয়ামতের দিন সৃষ্টিজীবকে আবার তৈরি করা হবে”।[1]

হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:

১- কিয়ামত সংঘটনে দু বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এ হাদীসটি থেকে আমরা তা জানতে পারলাম। অবশ্য বেশ কিছু আলিম তিন বার বা চার বার শিঙ্গা ফুকেঁর কথা বলেছেন। কিন্তু আল কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দু বার শিঙ্গা ফুকেঁর বিষয়টি অধিকতম বিশুদ্ধ।

২- দু ফুৎকারের মাঝে সময় চল্লিশ দিন না মাস না বছর? কোনটি আসলে উদ্দেশ্য? বিভিন্ন হাদীসে চল্লিশ বছরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সে হাদীসগুলো দুর্বল সুত্রের। আসল কথা হলো বিষয়টি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে।

৩- কিয়ামতের সময় কবরে মানুষের দেহের কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু একটি মেরুদন্ডের হাড় আল্লাহ তা‘আলা অক্ষত রাখবেন। সেটি দিয়ে মানুষকে আবার সৃষ্টি করবেন।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৩৫, ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৫৫।